ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

হলুদের রাজ্য, বাম্পার ফলনের আশা কৃষকের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৮
হলুদের রাজ্য, বাম্পার ফলনের আশা কৃষকের সরিষার ফুলে ফুলে মৌমাছি/ছবি: বাংলানিউজ

ঝালকাঠি: ঋতু বৈচিত্রের এ বাংলায় বছরের বিভিন্ন সময় বর্ণিল রঙ আর অনাবিল সৌন্দর্যে সজ্জিত হয় দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। মাঘের মাঝামাঝি শীতের শেষে দিগন্ত জুড়ে হৃদয় ছুঁয়েছে সরিষা ফুল। দু’চোখ যতোদূর যায় শুধু দেখা মিলছে হলুদ রংয়ের। এ যেনো হলুদের সমাহার।

বছরের এ সময়টায় সরিষার আবাদের কারণেই কৃষি ক্ষেতগুলোতে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে । পৌষের শুরুতে শীতের তীব্রতা বাড়ার পাশাপাশি ঝালকাঠির মাঠ ছেয়ে যায় হলুদ সরিষায়।

ফুলে ফুলে মৌমাছির মন মাতানো গুনগুন সঙ্গীত প্রকৃতিপ্রেমীদের মন কেড়ে নেয়।

যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমছে চাষের জমির পরিমাণ, তারপরেও পরিকল্পিত ও আধুনিক প্রযুক্তির কারণে উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ছে। প্রযুক্তির কারণে দক্ষিণের জনপদগুলোতে ভালো হচ্ছে ফসলের আবাদ। তারই ধারাবাহিকতায় ঝালকাঠিতে এবার সরিষার আবাদ বিগত সময়ের থেকে অনেকটাই ভালো হয়েছে যেমনি, তেমনি বাম্বার ফলনের হাতছানিও দেখছেন কৃষক।
মাঠজুড়ে সরিষার আবাদ/ছবি: বাংলানিউজকৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা অফিসের তথ্যানুযায়ী, ঝালকাঠির চারটি উপজেলার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে এ বছর সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ২শ’ হেক্টর, নলছিটিতে ১শ’৭৫ হেক্টর, রাজাপুরে ৫০ হেক্টর ও কাঁঠালিয়ায় ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।

এরই মধ্যে জেলার সরিষার আবাদের মাঠগুলো হলুদের রাজ্যে পরিণত হয়েছে। সরিষার হলুদ ফুলের ওই রাজ্যে মৌমাছিরা মধু আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছে।  

অপরদিকে শেষ পর্য্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। তবে জানুয়ারির মধ্যভাগে ঘন কুয়াশা কিছুটা হতাশা বাড়িয়েছিলো কৃষকদের।

কৃষি বিভাগের মতে, আমন ও ইরি মৌসুমের মাঝে অবশিষ্ট যে সময় থাকে, সে সময়ে কৃষকেরা জমিতে সরিষার আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। একই সঙ্গে জমিতে সরিষার আবাদের ফলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। ফলে পরবর্তীতে ইরি-বোরো চাষাবাদের সময় সার ব্যবহারের খরচ কমে আসে। এসব দিক বিবেচনা করে কৃষি বিভাগের পরামর্শে কম খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষকরা সরিষা আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন।
মাঠজুড়ে সরিষার আবাদ/ছবি: বাংলানিউজ
কৃষি কর্মকর্তাদের দাবি সরিষার ক্ষেতে ক্ষতিকর পোকা আক্রমণ না করায় দ্রুত বেড়ে উঠছে সরিষার চারা। কয়েকদিন পরেই শুরু হবে সরিষা সংগ্রহ।  

বাজারে সরিষার ন্যায্য দাম পাওয়া গেলে আগামীতে সরিষার আবাদ আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন কৃষকরা।  

সদর উপজেলার কৃষক সুলতান হাওলাদার বলেন, এক সময় আমরা পৌষ মাসে অন্য কোনো ফসল আবাদ করতাম না বললেই চলে। তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ আর সহযোগিতায় বিগত কয়েকবছর ধরে আমরা সরিষা আবাদ করছি। আমাদের এ জমিতে সরিষা ফলন ভালো হয়।

কৃষক জুয়েল মিয়া জানান, সরিষা ধানের চেয়ে অনেকটাই লাভজনক। তাই এবারে নিজের ও বর্গা নেওয়া মিলিয়ে ৬০ শতাংশ জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। বেশ ভালো ফুল ধরেছে আসা করছি ফলনও ভালো হবে।

ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহজালাল জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে কৃষকদের ভালো মানের বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ দেখা না দিলে ফাল্গুন মাসে ঘরে সরিষা তুলতে পারবেন কৃষকরা। পাশাপাশি লক্ষমাত্রাও অর্জন সম্ভব হবে বলে জানান শ্যামল কুমার দাস।

বাংলা‌দেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, জানুয়া‌রি ২৭, ২০১৮
এমএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।