ধান গোলায় ভরার দিনক্ষণ গুনছিলেন কৃষক। কিন্তু কৃষকের সেই স্বপ্ন অনেকটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় জমির উঠতি ফসল মাটিতে লুটে পড়ায়।
কৃষি বিভাগ বলছে, ক্ষতির পরিমাণ সামান্য। তবে কৃষি বিভাগের হিসেব মানতে নারাজ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। কেননা আবহাওয়া অনুকূলে না আসলে পানিতে নিমজ্জিত ধান পচতে শুরু করবে। যা ধানের ফলনে প্রভাব ফেলবে। আশার তুলনায় অনেক কম ফলন হবে বলে মনে করছেন কৃষকরা। তাদের ভাষায়, ‘সম্প্রতি হয়ে যাওয়া বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো বাতাসে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে’।
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো বাতাসে বগুড়ার ১২টি উপজেলায় কমবেশি চলতি রোপা-আমন মৌসুমের ধান ক্ষেতের চিত্রটা এরকম। এসব উপজেলার কৃষক ও কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো বাতাসে মাটিতে শুয়ে পড়েছে ধান। অনেক ক্ষেতের উঠতি ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে রয়েছে। অথচ গত দু’দিন আগেও ক্ষেতের চিত্রটা ছিলো ভিন্ন। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছিলো সবুজের সমারোহ। যা নিয়ে স্বপ্নে বিভোর ছিলেন কৃষকরা।
কৃষক শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এবার তিনি প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে মিনিকেট ধান লাগিয়েছেন। তিন দিন আগে ৪৫জন শ্রমিক নিয়ে ধান কাটা শুরু করেছেন। কিন্তু ধান বাড়িতে নেওয়ার আগেই সবকিছু সর্বনাশ করে দিয়েছে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া।
কৃষক আকবর হোসেন জানান, তিনি ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ঝড়ো বাতাসে জমির পাক ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেতের ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই। ক্ষতি যা হবার হবে।
বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বগুড়ায় ৩৫ দশমিক ০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরপরও আকাশে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে মেঘ। বৃষ্টি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন চাষিরা।
মাত্র সপ্তাহখানেক সময় পেলে ঠিকঠাক মতো ফসল ঘরে তুলতে পারতেন চাষিরা। কিন্তু কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে হওয়া বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে কৃষকের সেই স্বপ্নে গুড়েবালি পড়েছে। উল্টো জলে হাবুডুবু খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মন্ডল বাংলানিউজকে জানান, কৃষকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই। পাকা ধানের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে কাঁচা ধানের সামান্য ক্ষতি হতে পারে।
চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় ১ লাখ ৮৯ হাজার ১শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে রোপা-আমনের ধান লাগানো হয়েছে। তাই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সমস্যা হবে না। বরং বৃষ্টিপাতের কারণে পোকামাকড়ের উৎপাত বন্ধ হয়ে গেছে, যোগ করেন কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা।
** শিলাবৃষ্টিতে ঝরলো আম, ধানের ক্ষেত তছনছ
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৮
এমবিএইচ/ওএইচ/