প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীসহ কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও আসছে বেগুনি রংয়ের ধান ক্ষেত দেখতে। রীতিমত চাপ সামলাতে ধানের জমিতে গ্রাম পুলিশ দিয়ে প্রহারা বসানো হয়েছে।
দুলালী বেগম নামে স্থানীয় এক কৃষাণী ২০১৭ সালের বোরো মৌসুমে মাত্র এক শতাংশ জমিতে কৌতুহলবশত এ ধানের চাষ করেন। তিনি তার এক নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে এ ধানের বীজ পেয়েছেন বলে জানা যায়।
চাষের পর ধানের রংয়ে ভিন্নতা দেখে তার কৌতুহল আরো বেড়ে যায় এবং উৎপাদিত ধান থেকে ২০১৮ সালের বোরো মৌসুমে তিনি স্থানীয় উপসহকারী কৃষি অফিসারের পরামর্শে প্রতি গোছাতে একটি করে চারা দিয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ জমিতে এ ধানের আবাদ করেছেন। মানুষ সাধারণত সবুজ রং এর ধান গাছের সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু এ ধান গাছের রং পুরোপুরিই বেগুনি। ফলে এ ধানের প্রতি মানুষের কৌতুহল দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ধানের জমি দেখতে আসা সুন্দরগঞ্জ ডি ডব্লিউ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র মতিউরের সঙ্গে কথা হলে সে বাংলানিউজকে বলে, বেগুনি রংয়ের ধানের কথা শুনে বন্ধু বান্ধবসহ দেখতে এলাম। দেখে খুবই ভাল লাগল, পাশের অনান্য জমির তুলনায় এ ধানের ফলনও ভাল। সর্বোপরি ধান ক্ষেতটি দেখতে অনেক সুন্দর।
পাশের জমিতে ধান কাটতে থাকা নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমার জমিতে ফলন খুবই কম। ব্লাস্ট রোগে ও শিলাবৃষ্টিতে জমির অধিকাংশ ধানই নষ্ট হয়ে গেছে। সে তুলনায় বেগুনি ধানের ফলন অনেক ভাল। বিশেষ করে এ ধানটি দেখতে খুবই সুন্দর। সুন্দরগঞ্জ কৃষি বিভাগ যদি ধানের বীজ আমাকে দেয় তাহলে পরের বছর আমিও বেগুনি ধানের চাষ করব।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার রাশেদুল ইসলাম নিজেই এ ধানের তদারকি করছেন।
তিনি ধানের নাম দিয়েছেন দুলালী সুন্দরী। এ বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম থেকেই ধানের জমি আমরা পরিচর্যা করছি। দুই সপ্তাহের মধ্যেই ধান গাছগুলো কাটার উপযুক্ত হবে। তখন চাল পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করার মাধ্যমে এর সম্পর্কে ভালভাবে অবগত হওয়া যাবে।
এছাড়াও আমরা প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা চালিয়ে মোটামুটি সন্তোষজনক ফলাফল পেয়েছি।
গড়ে প্রতি গোছাতে ২৫টি কুশি পাওয়া গেছে যেখানে পার্শ্ববর্তী উফশী ক্ষেতে গড়ে ২১টি। কুশির সংখ্যা যেহেতু তুলনামূলক বেশি সে কারণে ফলনও বেশি হওয়াই স্বাভাবিক।
জীবনকাল অন্যান্য উফশী ধানের মতই অর্থ্যাৎ ১৪০ দিনের মত হতে পারে। সংশ্লিষ্ট চাষিকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে এবং সবটুকু বীজ সংগ্রহে রাখার জন্য ইতোমধ্যেই বীজ সংরক্ষণের পাত্র দেওয়া হয়েছে।
কৃষি বিভাগের ফেসবুক পেজ এবং উপজেলা কৃষি অফিসার রাশেদুল ইসলামের কাছ থেকে এ ধান সম্পর্কে জানা যায়, বেগুনি ধানকে চীনে নিষিদ্ধ ধান বলা হয়ে থাকে। প্রাচীন চীনের রাজ পরিবারের মধ্যেই কেবল এ ধানের ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। এ ধানের ভাত খেলে দীর্ঘজীবী ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সুবিধা পাওয়া যায় বলে চীনারা বিশ্বাস করত। রাজ পরিবারের বাইরে এ ধানের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্যের সাজা ছিল মৃত্যুদণ্ড। বিভিন্ন উৎসবে সম্রাট ও যোদ্ধাদের সম্মানে এ ধানের ভাত খাওয়ানো হতো।
আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত মাত্রার অ্যান্থোসায়ানিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কারণে এ ধানের রং বেগুনি হয়। ব্লুবেরির চেয়েও এ ধানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি। এ ধান বার্ধক্য প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। এ ধানে প্রচুর ফাইবার ও ভিটামিন ই রয়েছে। নিয়মিত এ ধানের ভাত খেলে ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। তাছাড়া ডায়াবেটিস ও অ্যালজেইমার রোগের ঝুঁকি কমাতেও এটি কার্যকর। বাংলাদেশে এ ধান চাষাবাদের তেমন নজির না থাকায় এ বিষয়ে গবেষণা আমাদের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সর্বোপরি তিনি বলেন, এ ধান ক্ষেতটির সবটুকু ধান ক্রপ কাটিং করে বীজের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। তা পরবর্তীতে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩১ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৮
আরএ