আবু বক্কর সিদ্দিক চা বিক্রি করে প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন। কঠোর পরিশ্রম করে বাড়ির পাশে ৬৪ শতাংশ জমি কিনে সেখানে লিচু বাগান তৈরী করেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব উদ্যোগে গড়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সদস্য হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করেন তিনি। সেখানে দুই বছরে চার হাজার ৮০০ টাকা সঞ্চয় করেন। তার সঞ্চয়ের সঙ্গে যুক্ত হয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সমপরিমাণ কল্যাণ অনুদান। এরপর সেখান থেকে তিনি ৩০ হাজার টাকা ঋণ নেন।
সেই ঋণের টাকায় দুইটি ছাগল কিনে গড়ে তোলেন একটি খামার। পরে সেখানে তিনি দুইটি উন্নত জাতের ভেড়া পালতে শুরু করেন। এসব উন্নত জাতের ভেড়া ও ছাগলের দামও বেশ চড়া। প্রতিটি গড়ল ভেড়ার মূল্য আকার ভেদে ১৫-২৫ হাজার টাকা।
খামারের প্রতিটি ভেড়া ও ছাগলকে তিনি প্রতিদিন শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করান। শুধু ছাগলই নয়, পাশেই গড়ে তুলছেন দেশি হাঁস, মুরগি, টার্কি, খরগোস, কোয়েল ও কবুতর খামার। মিনি মিউজিয়াম হিসেবে অনেকেই খামারটি দেখতে আসেন। এটি আরো দর্শণীয় করতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
আবু বক্কর সিদ্দিক বাংলানিউজকে জানান, ছাগলের আয় ধীরে ধীরে তাকে খামারি করে তুলেছে। কম খরচে একটু পরিচর্যা করলে গাড়ল জাতের ভেড়া পালন করে বেশ মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। এখন তার স্বপ্ন এটাকে মিনি মিউজিয়াম তৈরি করা।
অপরদিকে, ভেলাবাড়ি গ্রামের মানিক মিয়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ঋণ ও তার সঞ্চিত অর্থে দুইটি উন্নত জাতের গাভী দিয়ে দুগ্ধ খামার গড়ে তোলেন। এখন তার খামারে ছোট বড় মিলে ১২টি গরু রয়েছে। এসব গরুর বাজার মূল্য প্রায় ১২/১৫ লাখ টাকা।
মানিক মিয়া বাংলানিউজকে জানান, সারা বছর দুধ বিক্রি করেন তিনি। দৈনিক ৭০/১০০ লিটার দুধ বিক্রি করতে পারেন। প্রতি লিটার দুধের মূল্য পাইকারি ৪০ টাকা। দুধের টাকায় গাভীর খাদ্য কিনে অবশিষ্ট টাকায় সংসার চলে তার। এছাড়াও গাভীর বাচ্চাগুলো তার সঞ্চয় হচ্ছে। কৃষিতে সার ও বীজে সরকার ভর্তুকি দিলেও গবাদি পশু পাখির খাদ্যে কোনো ভর্তুকি নেই। এজন্য খুব একটা মুনাফা করা সম্ভব হয় না। এজন্য তিনি সরকারের উচ্চ মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
শুধু সিদ্দিক বা মানিক মিয়াই নয়, প্রধানমন্ত্রীর উপহার একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সঞ্চয় ও ঋণে খামার করে অনেকেই সাবলম্বী হয়েছেন। বেকারের দুঃখ ঘুচিয়ে দক্ষ উদ্যোক্তা হয়ে তারা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আদিতমারী উপজেলার সমন্বয়কারী ফরহাদ আলী রানা বাংলানিউজকে জানান, উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ১৫৩টি সমিতির মাধ্যমে ৮ হাজার ৪২২ জন সদস্য সঞ্চয় করেন ৩ কোটি ৬ লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ অনুদান আসে ২ কোটি ৬২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। গত ৫ বছরে সদস্যদের মধ্যে শতকরা ৮ টাকা সুদে প্রায় ১১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ঋণ দিয়ে আদায় হয় ৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এসব ঋণে সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের খামার গড়ে তুলে নিজেদের সাবলম্বী করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৮
এনটি