তার বাগানে শোভা পাচ্ছে উন্নত জাতের রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা, রডস্টিক, গোলাপসহ স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত নানা জাতের ফুল।
গতানুগতিক ফসল চাষের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করে ফুলচাষের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে শুরু করেছেন বিউটি।
মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী ফুল চাষ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেছেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন। প্রদর্শনী প্লটে ফুলের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের বাজারদর বিবেচনা করে কৃষি বিভাগের পরামর্শে জেলার কৃষকদের মধ্যে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ ছড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি।
ইতোমধ্যে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নিজ খরচে যশোর থেকে উন্নত জাতের ফুলের চারা আনার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে নানা জাতের ফুলের চারা সংগ্রহ করেন। এই ফুলের চারা দিয়ে তিন মাস আগে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাঁচজন কৃষককে বাণিজ্যিক ফুলের বাগানের প্রদর্শনী প্লট করে দেন।
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নে সরেজমিনে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কের ছিনাই এলাকায় ১৫ শতক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করেছেন কৃষক বিউটি। তিন মাস আগে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের সহায়তায় তার নিজস্ব জমিতে গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রডস্টিক, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপসহ সাত ধরনের ফুল চাষ শুরু করেন। বিউটি ইতোমধ্যেই প্রায় ১০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে ফুল ব্যবসায়ীরা নিয়মিত তাদের বাগানের ফুল কিনছেন।
ফুলচাষি বিউটি বাংলানিউজকে বলেন, এই জমিতে আগে সবজি চাষ করতাম। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান, কৃষি অফিসার ও ডিসি স্যারের পরামর্শে ফুল চাষ করে গত একমাসে ১০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছি। ফুল চাষ অত্যন্ত লাভজনক। অন্যান্য ফসলের চেয়ে ফুল চাষ করে খুব কম সময়ে বেশি লাভের মুখ দেখছি। সেইসঙ্গে নিজেদের স্বাবলম্বী করে স্বল্প সময়ে লাভজনক ফুল চাষ করে স্বপ্নপূরণ ঘটছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান বাংলানিউজকে জানান, জেলার আবহাওয়া ফুল চাষের উপযোগী হওয়ায় আমরা জেলা প্রশাসকের পরামর্শ ও উদ্যোগে প্রথমে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউটের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাদের পরামর্শে আমরা যশোর থেকে চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন ফুলের চারা নিয়ে এসে প্রদর্শনী প্লট হিসেবে চার উপজেলার কৃষকদের এসব বাগান করে দেই। আমরা যেমনটি আশা করেছিলাম তার চেয়েও ফুলের উৎপাদন বেশি হয়েছে। এখানকার কৃষকরা চিরাচরিত ফসল চাষের পাশাপাশি ফুলসহ অন্যান্য লাভজনক ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে। এতে করে তারা যেমন লাভবান হবে তেমনি অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে এই জেলা।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন বাংলানিউজকে জানান, কৃষিপ্রধান এ জেলায় গতানুগতিক ধান, গম, আলু, সবজি চাষের পাশাপাশি কৃষকদের উচ্চমূল্যের ফসল চাষে আগ্রহী করতে প্রথমে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাজারে সব সময়ই ফুলের দাম বেশি থাকায় এরইমধ্যে কৃষকরা ফুল বিক্রি করে অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভবান হতে শুরু করেছেন। মূলত অন্যান্য ফসল চাষের পাশাপাশি কৃষকদের মানসিকতা পরিবর্তন করে স্বল্প সময়ে অর্থকরী ফসল চাষে আগ্রহী করতেই বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। আমরা চাই কৃষকরা যাতে এসব অর্থকরী ফসল চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারে। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৯
এফইএস/আরআর