ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

অতিবৃষ্টি-খরায় মরছে হোসেনের ‘সাধের লাউ’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২১ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২০
অতিবৃষ্টি-খরায় মরছে হোসেনের ‘সাধের লাউ’

মৌলভীবাজার: বৈরাগির সাধের লাউ অনেকেরই প্রিয় সবজি। নরম ও সুস্বাদু বলে শাক-সবজির মধ্যে লাউয়ের কদর ঢের। চাহিদার কথা মাথায় রেখে কৃষকরাও তাই এই সবজি উৎপাদনে এগিয়ে এসেছেন। নিজে ক্ষেতে ফলিয়েছেন এই সবজিটি। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ায় এর ফসল উৎপাদনে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিবৃষ্টি আর তীব্র খরায় বৃত্তাকার সবুজ পাতাগুলো ফ্যাকাসে হয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে সাধের লাউয়ের স্বপ্ন। 

তবু থেমে নেই কৃষক। তারও গতি দুর্বার।

আপ্রাণ চেষ্টায় রত তার নিজ জমিতে নিজের হাতে লাগানো লাউ গাছগুলোকে শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখছেন তিনি। নিয়মিত পরিচর্যার সঙ্গে স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শক্রমে বাড়িয়ে দিয়েছেন দ্বিগুণ দেখভালের।  

তার নিজের ১২০ শতাংশ জমির মধ্যে ২০ শতাংশে লাউচাষ করা এই কৃষকের নাম আবুল হোসেন।  

তিনি থাকেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তর ভাড়াউড়া এলাকায়। দুই বছর আগের এই কৃষিতে তিনি ছিলেন না। ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি পেশায় আবুল হোসেনকে অগ্নিউত্তাপ সহ্য করতে হতো দিন-দুপুরে। এই পেশা আর ভালো লাগছিল না তার। বাবার অনুপ্রেরণা আর স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের সহায়তায় হোসেন ফিরে এলেন কৃষিতে। নিজের ধ্যান-ধারণা, সবজি বাছাইয়ের দূরদর্শিতা আর প্রচুর পরিশ্রম দিয়ে লাভ করলেন সফলতা।  

আবুল হোসেন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রথিন্দ্র দেব বাংলানিউজকে বলেন, এই এলাকায় হোসেন একজন সফল কৃষক। একটি-দুটি সবজি লাগিয়ে তিনি বসে নেই। ক্রমাগত একটার পর একটা সবজি চাষ করে যাচ্ছেন তিনি। মাঝেমধ্যে কৃষিজাত পণ্যের প্রদর্শনী তার এখানে জায়গা করা হয়ে থাকে।

মনোরমভাবে ঝুলে আছে সাধের লাউ।  ছবি: বাংলানিউজস্থানীয় বাজারে যে মৌসুমী সবজিটার চাহিদা বেশি, সেই সবজিটাই সে সর্বপ্রথম উৎপাদন করে সরবরাহ করে। ফলে সেই সবজিটা প্রথম বাজার ধরা এবং মুনাফা পরিমাণও বেশি লাভ হয় বলে জানান রথিন্দ্র।  

লাউ চাষি আবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, লাউ এখন অফসিজনের (অমৌসুম) ফসল। শীতের সবজি। চাহিদা তাই বেশি। তারপরও প্রচুর ঝুঁকি নিয়ে চাষ করছি। এখন লাউ বাজারে গেলেই চাহিদা বেড়ে যায়। ২০ শতাংশ জায়গা আমি দুইশ চারা রোপন করেছি। ভালো ফলনও এসেছে; কিন্তু এই কয়দিনের অতিবৃষ্টি আর অতিরৌদ্রে লাউ গাছগুলো মারা যাচ্ছে। রোববার (১৪ জুন) বিকেলে গিয়ে দেখি প্রায় ১০/১৫টা কচি লাউ শুকিয়ে গেছে।  

এই বৈরী আবহাওয়া চলমান থাকলে লাউয়ে আমাকে লোকসান গুণতে হবে। আর অবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে ভালো লাভ হবে বলেও জানান তিনি।  

তিনি আরও বলেন, আমি কিন্তু একটা সবজি লাগিয়ে সেই জমি ফেলে রাখি না; সে জমিতে স্থানীয়ভাবে চাহিদা রয়েছে এমন একটার পর সব সবজি চাষ করতেই থাকি। নিজেও করি এবং আরও দুই জন দৈনিক কামলা (শ্রমিক) আছে, তারাও তাদের নির্দিষ্ট সময় মতো করেন।    

অতিরোদ-বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে লাউক্ষেত।  ছবি: বাংলানিউজসোমবার (১৫ জুন) সকালে গিয়ে দেখা যায়, বিশালাকৃতির মাচার মধ্যে অপূর্ব নিয়ে ঝুলে আছে সাধের লাউ। বর্ণ তার হালকা সবুজাভ। একদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে আরেক দিকে দৃষ্টি দিলে শুধুই ঝুলে থাকা লাউ। যে পাশটা সবচেয়ে বেশি রৌদ্রতাপ সহ্যমুখর সেখানেই কিছু লাউ গাছ শুকিয়ে যাওয়ার দুঃসংবাদ! অর্থাৎ এ সাধের লাউগুলো অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর মুখে পতিত।  

লাউয়ের উৎপাদন খরচ উল্লেখ করে এ চাষি আরও বলেন, গোবর সার, পটাশ, টিএসপি, জিংক, জিপসাম, বোরন, মাল্টিপ্লেক্স, শিকড়প্লাসসহ চারপর্ব মিলে মোট প্রায় একশত কেজি সার দিয়েছি। এর খরচ প্রায় আট হাজার।  

আমার এই সবগুলো লাউ গাছই এখন উপযুক্ত। একদম ফলন্ত গাছ। এখনি গাছ থেকে ছিঁড়ে নিয়ে রান্না করে একদম টাটকা খেতে পারবেন লাউ। বাজারে এখন প্রতি পিস লাউ ৫০ থেকে ৭০ টাকা। আর দু’দিন পরেই বাজারে তুলবো বলেও জানান হোসেন।  
  
অতিবৃষ্টি এবং খরায় সফল ক্ষতি সম্পর্কে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রথিন্দ্র দেব বাংলানিউজকে বলেন, কৃষকদের ক্ষেত্রে আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। কৃষিজাত নানান উপকরণ দিয়ে আমরা তাদের সবসময়ই সাহায্য করে থাকি।   

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২০
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।