খুলনা: দূর থেকে দেখলে মনে হয় মাচায় ঝুলছে লাউ-কুমড়া। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখলে দেখা যাবে এগুলো লাউ বা কুমড়া নয়।
এমন মনোরম দৃশ্য খুলনার রূপসার নতুনদিয়া ও গোয়ারা গ্রামে। এই দুই গ্রামে প্রথমবারের মতো অসময়ে তরমুজ চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন কৃষকরা। মিষ্টতা আর অসময়ে পাওয়া যাওয়ায় বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এই তরমুজের।
বাণিজ্যিকভাবে তরমুজের চাষ করে সফল এ দুই গ্রামের চাষি। অসময়ে মিষ্টতা ও ভালো স্বাদের তরমুজ পেয়ে এলাকাভিত্তিক ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। খবর পেয়ে পাইকারি ক্রেতারাও জমিতে এসে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
বৈশ্বিক করোনার কারণে কৃষকরা যখন দিশেহারা তখন তাদেরকে তরমুজ আবাদের জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন রূপসা কৃষি বিভাগ। নতুন ফসল হওয়ায় প্রথমে কৃষকরা আগ্রহ দেখায়নি। তবে কৃষি বিভাগ হাল ছাড়েনি। উপজেলা কৃষি অফিসারের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে আগ্রহী কৃষকের তালিকা করা হয়। উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্য তরমুজ বীজ, জৈবসার, ফেরোমন ট্রাপ, স্টিকি ট্রাপ, বায়োডার্মা ও ইকোম্যাক এবং কৃষকদেরকে নিরাপদভাবে তরমুজ উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
রূপসা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রূপসা উপজেলায় প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে অফসিজনে তরমুজের আবাদ হয়। আগে এ জমিতে কৃষকরা শসার আবাদ করত। শসায় বিভিন্ন রোগ ও পোকা মাকড়েরর আক্রমণের কারণে অনেকে শসা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। সে জমিতে তরমুজের আবাদ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। মাছের ঘেরের পাড়ে ৪০০ তরমুজ চারা লাগালে প্রায় ১২০০-১৫০০টি তরমুজ পাওয়া যায়। জাত ভেদে প্রতি তরমুজের ওজন ৪-৮ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ৪০০ তরমুজ গাছ হতে প্রায় ৬০০০ কেজি তরমুজ পাওয়া সম্ভব। প্রতি কেজি তরমুজ ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়। কমপক্ষে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। ৪০০ তরমুজ গাছের উৎপাদন খরচ সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ হাজার - টাকা। তরমুজ চাষ করে কৃষকদের লাভবান হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
জানা যায়, তরমুজের জাত সুইট ড্রাগন: সবুজ ডোরাকাটা, গড় ওজন ১৫ কেজি, ব্লাক ডায়মন্ড: কালো, সর্বোচ্চ ওজন ১৫ কেজি, সুইট ড্রাগন পাকিজা সর্বোচ্চ ওজন ১৫ কেজি, কানিয়া: সবুজ দাগ কাটা ভেতরে হলুদ, ওজন ৩-৪ কেজিফলন। গাছ লাগানোর ৬০-৭০ দিনে ফলন আসে। এ তিন ধরনের জাত এ বছর এখানে আবাদ করা হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, অসময়ের এই তরমুজের চাষ লাভজনক। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে এত লাভজনক ফসল আর নেই। এবার যারা তরমুজ চাষ করেছেন তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে আগামীবছর তরমুজ চাষের পরিকল্পনা করছেন।
গোয়ারা গ্রামের কৃষক চন্দ্রা বৈরাগী বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় তরমুজের বীজ সহ অন্যান্য উপকরণ পেয়েছি। তরমুজ আবাদের জন্য আমাদের এলাকায় আলোরন সৃষ্টি হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। অসময়ের তরমুজ হওয়ায় মূল্যও ভালো পাচ্ছি। আগামী বছর অনেক কৃষক তরমুজের আবাদ করবে।
রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগের কারণে প্রথমবারের মতো অফসিজনে তরমুজের আবাদ হয়েছে। আগামীতে এ এলাকায় তরমুজের আবাদ বাড়বে বলে আমি আশাবাদী। আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২০
এমআরএম/এএটি