বগুড়া: উত্তরাঞ্চলের শস্য ভান্ডার খ্যাত জেলা বগুড়া। রকমারি ফসল ফলানোর দিকে সারাদেশে এ জেলার কৃষকদের একটা আলাদা পরিচিতও রয়েছে।
এখন রোপা-আউশে স্বপ্ন দেখছেন জেলার কৃষকরা। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গাঢ় সবুজ ধানগাছে ঢাকা পড়েছে আইল (জমির সীমানা)। চারদিকে গাঢ় সবুজের অপার সমারোহ।
তবে চলতি বছরের প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকরা অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। রোপা-আউশ মৌসুমের ধানের ক্ষেত প্রথম দফা বন্যায় আক্রান্ত হয় জুন মাসে। সেই ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই দ্বিতীয়বারের মতো আবারও ফুসে ওঠে যমুনা। বাড়তে থাকে বাঙালি নদীর পানিও। তলিয়ে যায় বিঘার পর বিঘা ধানি জমি।
তবু প্রকৃতির কাছে হার মানেনি এ জেলার কৃষকরা। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরোদমে জমিতে নেমে পড়েন তারা। জমিতে নতুন করে ফসল ফলান। হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে যান কৃষকরা। চোখের সমানেই তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে জমির ধান। এখন সোনারঙা সেই ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তারা।
রোপণকাল অনুযায়ী কখনো নিড়ানিও দিতে হচ্ছে। আবার প্রয়োগ করতে হচ্ছে প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক। পানির অভাব দেখা দিলে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। বিগত রোপা আমনে উৎপাদিত ধানের ভালো দাম পাওয়ায় মনে অনেকটা আনন্দ নিয়েই কষ্টকর কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম, শেরপুর উপজেলা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে চলতি রোপা-আউশ মৌসুমের ধানচাষ সম্পর্কে সরেজমিনে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়।
সাম্প্রতিক বন্যায় যমুনা তীরবর্তী এ জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় ২ হাজার ৭১৭ হেক্টর আউশের জমি তলিয়ে যায়। এরপরও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এ জেলায় চলতি মৌসুমের ধান।
এনায়েত উল্লাহ, ইউসুফ আলী, শেখ ইমাম, গোলাম রব্বানীসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, পেশায় তারা জাত কৃষক। তাদের অন্য কাজ জানা নেই। কৃষিকাজই প্রধান কর্ম তাদের। এছাড়া বিগত মৌসুমে ধানের দামও ভালো পেয়েছেন। বর্তমানেও ধানের দরও ভালো যাচ্ছে। তাই তারা পর্যাপ্ত শ্রম দিচ্ছেন চাষের কাজে।
তারা বলেন, নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা গেলো রোপা-আউশ মৌসুমের তুলনায় এবার অনেক বেশি জমিতে এ মৌসুমের ধান লাগিয়েছেন। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আউশের জমি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা-আউশ মৌসুমে এ জেলার ১২টি উপজেলায় ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৫ হাজার ৫০ হেক্টর জমি। অথচ বন্যার কারণে ধান চাষ হয়েছে ৩৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গেলো জুনের মধ্যবর্তী থেকে জুলাই মাসের পুরোটা সময় ধরেই কৃষকরা জমিতে ধান লাগিয়েছেন। অনেকে আগাম হিসেবে এর আগেও চাষাবাদ শুরু করেছেন।
তিনি জানান, রোপণের সময়ের ওপরই ধান বা যে কোনো ফসলের বেড়ে ওঠা নির্ভর করে। সে অনুযায়ী জেলার কিছু এলাকায় আগাম লাগানো ধানগাছে এরই মধ্যে পাকও ধরেছে। কিছু কৃষক মোট চাষাবাদের ৩ হাজার ২৫৭ হেক্টর জমির নতুন ধান ঘরেও উঠিয়েছেন।
ফরিদুর রহমান আরও জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন। এ জেলায় কৃষকরা ব্রি ধান-৪৮, পারিজাত, পাটজাত জাতের ধান চাষ করেছেন। এসব জাতের ধানের চালের দাম মোটা চালের চেয়ে বেশি। ফলনও ভালো হবে। এতে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও কৃষকরা বেশ লাভবান হতে পারবেন।
সবমিলে চলতি মৌসুমে ধানে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০
কেইউএ/এএ