ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

বন্ধ সেচ, দিশেহারা কৃষক

মো. জাহিদ হাসান জিহাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২১
বন্ধ সেচ, দিশেহারা কৃষক

কুষ্টিয়া: কৃষি জমিতে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পে। এতে বোরো মৌসুমে ধানের জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।

কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলাব্যাপী এ প্রকল্পের আওতায় বোরো চাষিদের সেচ চিন্তা এখন এই প্রকল্পের পানি।

জিকে সেচ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ কার্যক্রম চলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। পদ্মার পানির ওপর নির্ভর এই সেচ প্রকল্পটি। এজন্য পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে অন্তত ৩৪ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ প্রয়োজন। চলতি মাসের গত ১৮ তারিখ থেকে পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।  

বুধবার (২১ এপ্রিল) হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি ২৪ হাজার কিউসেক। জিকে সেচ প্রকল্পে পানি সরবরাহ চালু রাখতে প্রয়োজন ৩৪ হাজার কিউসেক। এ কারণে পানি না পেয়ে বন্ধ হয়ে গেছে জিকে সেচ প্রকল্পের পানি সরবরাহ।
এদিকে, প্রচণ্ড রোদে জমিতে পানি না থাকায় শুকিয়ে গেছে জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়ার মিরপুর-ভেড়ামারা বোরো ধান চাষিদের ক্ষেত। বেশিরভাগ ধানের জমিতেই পানির প্রয়োজন, পানি না থাকায় চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।

মিরপুর উপজেলার খয়েরপুর এলাকার ধান চাষি খাঁজা মঈন উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, দুই বিঘা বোরো ধানের আবাদ করেছি। জিকে সেচ প্রকল্পে পানির সুবিধার কারণে এই মাঠে সেচ পাম্প নেই। কারণ জিকে সেচ প্রকল্পের পানিতেই সেচ চলে। ক্যানেলে পানি যদি না আসে তাহলে ধান নষ্ট হয়ে যাবে।

আরেক কৃষক মিলন বিশ্বাস বলেন, পানি না পেলে তো ধানই হবে না। আর হুট করে ক্যানেলে পানি বন্ধ, এখন তো মেশিন দিয়ে পানিও নিতে পারবো না। কারণ পাইপ দিয়ে পানি নেওয়া ঝামেলা, সারা বছর না নিয়ে দুইদিনের জন্য তো আর মেশিনের মালিক পানি দিতে চাইবে না।

জমিতে পানির সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধানের জমি একদম ফেটে গেছে। এখন একান্ত পানি প্রয়োজন।

কৃষক আশিকুল ইসলাম বলেন, এখন জমিতে পানি না থাকলে তো ধান চিটা হয়ে যাবে। যে রোদ পড়ছে এমনিতেই ধানের মাথা পুড়ে যাছে। পানির অভাবে মাটি একদম শুকিয়ে গেছে।

কৃষক ছাবেদ মণ্ডল বলেন, ধানে তো পানি লাগবে, তো ক্যানেলে পানি নাই। তাই ক্যানেলের মধ্যে মেশিন দিয়ে পাইপ দিয়ে জমিতে পানি দিলাম। পানি তো দেওয়া লাগবেই। উপায় নাই তাই খরচ বেশি হলেও পানি মেশিন দিয়ে তুলে জমিতে দিচ্ছি।

এ বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এই অঞ্চলে বোরো ধানের যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যে, আপনারা নিকটস্থ স্যালো ইঞ্জিন চালিত পাম্প অথবা বৈদ্যুতিক মোটর কিংবা যেকোনো সেচ পাম্পের মাধ্যমে জমিতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করবেন। যাতে করে বোরো ধানের জমিতে পানির অভাবে ধানের ফলনের কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।

জিকে সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বুধবার (২১ এপ্রিল) সকাল থেকে একইসঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় ১২টি বিভিন্ন ধরনের স্বয়ংক্রিয় সম্পূরক পাম্প। পাম্প হাউসের ইনটেক চ্যানেলে এখন মাত্র ৪ মিটার আরএল পানি পাওয়া যাচ্ছে। পানি সরবরাহ করতে ইনটেকে পানি থাকতে হবে ১৪ দশমিক পাঁচ মিটার আরএল। পানি সরবরাহ চার দশমিক পাঁচ মিটার আরএলের নিচে নামলে পাম্প মেশিনে পানি তোলা যায় না।

জিকে প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান জানান, এ বছর বৃষ্টি কম। বৃষ্টি হলে নদীতে পানির প্রবাহটা অব্যাহত থাকে। তখন পানি প্রত্যাহার হয়ে গেলেও, পদ্মায় বৃষ্টির নাব্যতা থেকে জিকে পানি টেনে নিতে পারে। কিন্তু এবার তেমনটি হচ্ছে না। দুই-এক দিনের মধ্যে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেলে হয়তো সেচ পাম্প চালানো সম্ভব হতে পারে।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শ্যামল কুমার জানান, বোরো চাষিদের ধানের প্রয়োজন রয়েছে। তবে আগাম ধানের জমিতে পানি না থাকলেও চলবে। এই সময় মাটি ফেটে গেলে ফলন কমে যেতে পারে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।