ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

চাঁদপুরে দুটি সেচ প্রকল্পে জলাবদ্ধতা, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০২১
চাঁদপুরে দুটি সেচ প্রকল্পে জলাবদ্ধতা, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

চাঁদপুর: গত কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণে চাঁদপুরের মতলব উত্তর ‘মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প’ ও চাঁদপুর সেচ প্রকল্পে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে বসতবাড়িতে পানি উঠে এবং ফসলগুলো তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বিশেষ করে আমন চাষিদের বীজতলা এখন পানির নিচে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করা হলে এই ক্ষতি আরও বাড়বে।

খোঁজ নিয়ে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে এর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্পের মধ্যে মেঘনা ধনাগোদা ও চাঁদপুর সেচ প্রকল্প অন্যতম। দু’টি সেচ প্রকল্পের মধ্যে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের আওতায় ২২ হাজার হেক্টর জমি আবাদযোগ্য এবং মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে আবাদযোগ্য জমি ১৪.১ হেক্টর। সেচ প্রকল্প এলাকায় বছর জুড়ে বোরো, আউশ ও আমন আবাদ হয়। চলতি সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে আমন রোপণ। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। বীজতলা কয়েক ফুট পানির নিচে থাকায় তুলতে পারছে না কৃষক। অনেকটা হতাশার মধ্যে রয়েছে হাজার হাজার কৃষক।

মতলব উত্তর উপজেলার ইসলামাবাদ গ্রামের কৃষক লিয়াকত আলী ও অলি উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য দুইটি খাল রয়েছে। ওই দুইটি খালই দখল হয়ে আছে। আমাদের ইউপি চেয়ারম্যান সাজেদুল হাসান বাবু (বাতেন) পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইপ লাইন করে দিয়েছে, তাও একটি এখন বন্ধ রয়েছে। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই।

লতরদি গ্রামের কৃষক সুলতান মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকায়ও ভারী বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। রোপা ফসল, মৎস্য খামার ও বসতঘরসহ বহু স্থাপনা তলিয়ে গেছে। আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেল।

ভারী বর্ষণে উপজেলার ইসলামাবাদ, দুর্গাপুর, লতরদি, এখলাছপুর, ফতেপুর, লুধুয়াসহ একাধিক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে বহু মানুষ।

মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সরকার মো. আলাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ভারী বর্ষণে হওয়ায় তিনটি পাম্প চালানো হয়েছে। আশাকরি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে জলাবদ্ধতা কেটে যাবে।

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে কিছু সংখ্যক ফসল ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। সেচ কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য আমরা অনুরোধ করেছি।

এদিকে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এলাকার সদর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় আউশ ধান কাটতে গিয়ে বিপাকে কৃষকরা। অনেকেই ধান কেটে জমিতেই রেখে দিয়েছেন। পাকা ধান এখন পানির নিচে। আবার অনেক কৃষক আমন রোপণ করতে পারছেন না জলাবদ্ধতার কারণে। বীজতলা পানির নিচে। আখ, মৌসুমী সবজিসহ অনেক ফসলেরই ক্ষতি হয়েছে এই প্রকল্প এলাকায়।

সদর উপজেলার বাগাদী, বালিয়া, ইব্রাহীমপুর, চান্দ্রা, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের কৃষকরা তাদের আমন বীজতলা থেকে বীজ উঠাতে না পারায় রোপণ করতে পারছে না। আবার যারা চলতি সপ্তাহে রোপণ করেছেন তাদের গুলো কয়েক ফুট পানির নিচে রয়েছে। একই অবস্থা ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব, বালিথুবা পশ্চিম, গোবিন্দপুরসহ আশাপাশের ইউনিয়নের। এসব ইউনিয়নে বৃষ্টির পানিতে অধিকাংশ আখের জমিগুলো ক্ষতির সম্মুখীন। তবে আগামী ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে আমন রোপণ করার শেষ সময়। এই সময়ের মধ্যেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

বালিয়া এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণে জমিগুলো কয়েকফুট পানিতে তলিয়ে আছে। যে কারণে আমন রোপণ করতে পারছেন না। তাদের এই দুর্ভোগের অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনও আসছে না। দ্রুত জলাবদ্ধতা দূর করতে না পারলে তাদের পুরো আমন মৌসুম ব্যহত হবে।

চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সিয়াম আলী বাংলানিউজকে বলেন, কয়েকদিনের টানা বর্ষণে সেচ প্রকল্প এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা পুরো সেচ প্রকল্প এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছি। কৃষকদের অভিযোগ আছে আমাদের লোকজন খোঁজ খবর রাখে না। মূলত আমাদের লোকবল সংকট আছে। যে কারণে মাঠ পর্যায়ে যেতে পারছে না।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।