রাঙামাটি: তিন পার্বত্য জেলার প্রাণ ভোমরা রাঙামাটির রূপ, গুণ এবং বৈচিত্র্যের সমাহারের জন্য পুরো দেশে আলাদা সুখ্যাতি রয়েছে। এ অঞ্চলের মাটি, পানি, বায়ু এবং আবহাওয়া সব সময় চাষাবাদের অনুকূলে।
পাশের জেলা খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলায় অনেক আগে থেকে কফি এবং কাজু বাদাম চাষ শুরু করা হলেও রাঙামাটিতে এটি নয়া উদ্যোগ।
বর্তমান দুনিয়ায় কফির কদর রয়েছে। যে কারণে কফির চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। চাহিদা রয়েছে কাজু বাদামের। তাই সরকার আমদানি খরচ কমাতে রাঙামাটিতে কফি ও কাজু বাদাম চাষের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের অন্যান্য এলাকার মতো এ অঞ্চলে কফি ও কাজু বাদাম চাষে বিনিয়োগ শুরু করা হয়েছে।
স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, থানচি এবং রুমা উপজেলায় অনেক আগে থেকে কফি ও কাজু বাদাম চাষ করা হচ্ছে। তবে তা বিছিন্নভাবে চাষ করা হয়েছে। আর খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ২০০১ সাল থেকে কফি নিয়ে গবেষণা করছে। প্রতিষ্ঠানটি রোবাস্টা গাছের বাগান করেছে।
তারা আরো জানান, সরকার এ খাতকে আয়বর্ধক করতে এবং দেশের মাটিকে কাজে লাগাতে কফি ও কাজু বাদাম চাষের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামসহ ১৬ জেলায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কফি ও কাজু বাদাম গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চলের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা তপন কুমার পাল বাংলানিউজকে বলেন, কফি ও কাজু বাদাম চাষ নিয়ে আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে ফেলেছি। জমি থাকুক বা না থাকুক প্রকৃত কৃষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ১০টি উপজেলার ৩০ জন করে কৃষককে কাজু বাদাম এবং কফি চাষের ওপর একদিনের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আর কিছু উপজেলায় প্রশিক্ষণ বাকি আছে। করোনা যদি না থাকতো, তাহলে আমাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ হয়ে যেতো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চলের উপ-পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বাংলানিউজকে জানান, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে রাঙামাটির ইতিহাসে প্রথমবারে মতো কফি ও কাজু বাদাম চাষ শুরু হয়েছে। এজন্য জেলার ১০টি উপজেলায় ৩৭টি কফি প্রদর্শনী এবং ৩৫টি কাজু বাদাম প্রদর্শনীর প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। প্রতি কফি প্রদর্শনীতে ৩৩ শতাংশ জমিকে একটি প্রদর্শনী ধরে প্রতি প্রদর্শনীতে ১০০টি চারা এবং কাজু বাদাম প্রদর্শনীতে ৫০ শতাংশ জমিকে একটি প্রদর্শনী ধরে প্রতি প্রদর্শনীতে ১০০টি করে চারা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, ১০টি উপজেলার মধ্যে বেশ কিছু উপজেলার কৃষকদের মধ্যে কাজু বাদামের চারা বিতরণ করে দিয়েছি। বাকি উপজেলার কৃষকদের মধ্যে চারা বিতরণ করা হবে। তবে কফির চারাগুলো এখনো বিতরণ করা হয়নি। খুব শিগগরই বিতরণ শুরু করবো।
কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বলেন, কফির অনেক জাত থাকলেও আমরা দু’টি জাতের চারা সংগ্রহ করেছি। একটি হলো- ভাস্করা এবং অপরটি হলো-ভিয়েল (৪)। জাত দু’টি ভারত এবং ভিয়েতনামের। কাজু বাদামের চারা সংগ্রহ করা হয়েছে বান্দরবান জেলার ব্যক্তিমালিকানাধীন বাগান থেকে।
তিনি আরো বলেন, সরকারি এ উদ্যোগ সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হলে কফি ও কাজু বাদাম চাষ করে রাঙামাটির কৃষকরা নিজেদের আর্থিক উন্নয়ন ঘটাতে পারবেন। এজন্য কৃষকদের মধ্যে চারা বিতরণের পাশাপাশি জৈব ও রাসায়নিক সারও দিচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২১
এসআই