গাজীপুর: রাতের অন্ধকারে ক্ষেতের শাক-সবজির গাছ খেয়ে ফেলছে এক প্রজাতির শামুক। এনিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে নানান কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে।
এরা বিভিন্ন পাতা, গাছের নরম বাকল, ফল, শাক-সবজি গাছ ইত্যাদি খেয়ে ব্যাপক ক্ষতি করছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বরাব এলাকায় এমন ঘটনা ঘটছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বরাব এলাকায় আখতার হোসেনের বাড়ির আশপাশে দেখা যাচ্ছে এক প্রজাতির শামুক। শামুকগুলোর খোলসের ওপর একপ্রকার সাদা দাগ কাটা রয়েছে। দিনের বেলায় এরা বাড়ির দেয়ালে ও বিভিন্ন গাছে এবং বড় বড় ঘাসের নিচে লুকিয়ে থাকে। রাত হলেই ঝাঁক বেঁধে শামুকগুলো ক্ষেতে শাক পাতা ও সবজির গাছ খেয়ে ফেলে।
শামুকগুলো লম্বা প্রকৃতির। গত দুই তিন মাস ধরে ব্যাপক হারে ওই এলাকায় এসব শামুক দেখা যাচ্ছে। এর আগেও দুই-একটি করে এদের দেখা যেত। শাক-সবজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন গাছেরও ক্ষতি করছে এরা। দিনের বেলায় এসব শামুক খুব কমই নড়াচড়া করে। তবে সন্ধ্যার পর বাড়ির আশেপাশে এবং রাস্তাঘাটে বেশি পরিমাণ দেখা যায়। কোনো কোনো শামুকের খোলস ২ থেকে ৩ ইঞ্চি লম্বা। আর শামুক যখন চলাফেরা করে তখন ৩-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে।
ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের এ প্রজাতির শামুক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। এনিয়ে পুরো এলাকায় হৈচৈ শুরু হয়েছে। এছাড়া খবর পেয়ে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসব শামুক দেখতে আসছেন।
বরাব এলাকার বাসিন্দা আখতার হোসেন জানান, গত কয়েক মাস ধরে এ প্রজাতির শামুকের বিচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দিনে শামুকের সংখ্যা কম থাকলেও রাত হলে বেড়ে যায়। দিনের বেলায় এরা আম, কাঁঠাল, কলা গাছসহ বিভিন্ন গাছে ও ঘাসের নিচে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন দেয়ালেও থাকে। বাড়ির আশপাশে শাক-সবজি চাষ করলে শামুকগুলো তা খেয়ে ফেলে। এ কারণে এখন আর শাকসবজি চাষাবাদ করি না। কোথা থেকে এতো শামুক এসেছে তা কেউই বলতে পারছেনা। দিন দিন এসব শামুক ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দেওয়ান রনি নামের এক যুবক জানায়, এলাকার লোকজন অনেক সময় এ শামুক দেখামাত্র মেরে ফেলে। এ ধরনের শামুক আগে এই এলাকায় কোথাও দেখা যায়নি। এছাড়া শুকনো জমিতে এভাবে শামুক চলাফেরা করতে আগে কখনো দেখিনি। তবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন দোকানে এ ধরনের শামুকের খোলসে বিভিন্ন কিছু লিখে বিক্রি করতে দেখেছি।
এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, শামুক এভাবে শাক-সবজি খাচ্ছে এবং ক্ষতি করছে এমন বিষয় নিয়ে কেউ আগে জানায়নি। বিষয়টি আমার কাছে একেবারেই নতুন। তবে শামুক মাটি দিয়ে চলাচল করলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় এবং মাটির ভেতর বাতাস ঢুকতে পারে। এটা কৃষির জন্য ভালো। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।
গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মর্ত্তুজ আলী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। যেহেতু শামুক মৎস্য অধিদপ্তরের বিষয় তারা এ ব্যাপারে বলতে পারবে।
কালিয়াকৈর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সলিমুল্লাহ বলেন, এমন ঘটনা আগে শুনিনি। তবে শামুক মানুষের জন্য ক্ষতিকর না। কিন্তু শাক-সবজি খেয়ে ফেলছে এবং বিনষ্ট করছে এটা তো অবশ্যই কৃষকের জন্য ক্ষতি। যেহেতু কৃষির বিষয়টি সঙ্গে জড়িত এটা কৃষি কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবে।
উইকিপিডিয়া থেকে জানা গেছে, শামুক হচ্ছে মোলাস্কা ফাইলামের গ্যাস্ট্রোপোডা শ্রেণির। এরা নরমদেহী এবং দেহ প্যাঁচানো খোলকে আবৃত থাকে। মরুভূমি, নদী, বদ্ধ জলাশয়, জলাশয়, সমুদ্র উপকূলসহ অনেক আবহাওয়াতে শামুকের দেখা পাওয়া যায়। স্থলচর শামুক শামুকের জগতে সংখ্যালঘু। সামুদ্রিক শামুকরাই বৈচিত্র্যে ও সংখ্যায় অনেক বেশি। বেশিরভাগ শামুকই তৃণভোজী। তবে কিছু সামুদ্রিক শামুক প্রজাতি উভভোজী অথবা মাংসাশী। কিছু শামুক ফুসফুসের সাহায্যে শ্বাস নেয়। এদেরকে পালমোনাটা বলে। যেসব শামুক ফুলকা জাতীয় অঙ্গের সাহায্যে শ্বাস নেয় তাদের প্যারাফিলেটিক দলে ফেলা হয়। স্থলচর শামুকদের মাথায় দুই জোড়া কর্ষিকা থাকে দরকার পড়লে গুটিয়ে রাখতে পারে। পেছনের কর্ষিকাজোড়ায় থাকে চোখ। পায়ের পেশীতে ঘনঘন সঙ্কোচন ঘটিয়ে শামুক চলাচল করে। শামুকের চলার গতি অত্যন্ত ধীর।
প্রজাতি ভেদে শামুকের আয়ু ভিন্ন। প্রকৃতিতে আকাটিনিডে শামুক ৫-৭ বছর বাঁচে, আবার হেলিক্স প্রজাতির শামুক ২-৩ বছর বাঁচে। অ্যাকোয়াটিক অ্যাপল জাতের শামুকের আয়ু মাত্র বছর খানেক। বেশিরভাগ শামুকের মৃত্যু হয় শিকারীর হাতে নয়তো পরজীবী দ্বারা। কিছু কিছু শামুকের প্রায় ৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচার নজির রয়েছে।
স্থলচর শামুক তৃণভোজী। এরা পাতা, গাছের নরম বাকল, ফল, শাক ইত্যাদি খেয়ে থাকে। শামুকের কিছু প্রজাতি শস্য ও বাগানের গাছের ক্ষতি করে বিধায় এদেরকে ক্ষতিকারক কীটের দলে ফেলা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২১
এজেডএস/কেএআর