সিলেট: সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্যের শেকড়সন্ধানী গবেষক ও রম্য লেখক সৈয়দ মোস্তফা কামাল আর নেই। শনিবার বাদ জোহর দরগাহে হযরত শাহজালাল (র.) মাজার মসজিদে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার দিনগত রাত সাড়ে ১০টায় নগরীর উপশহরস্থ নিজ বাসভবনে এই কৃতী লেখকের মৃত্যু হয়।
তার মৃত্যুতে সিলেটের সাহিত্যাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। গভীর রাত অবধি তার বাসভবনে ভিড় করেন লেখক-কবি, সাংবাদিক ও তার আত্মীয়-স্বজনরা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে গেছেন।
১৯৬৫ সালে প্রকাশিত ‘রঙের বিবি’ ও ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত ‘নবরঙ্গ’ রম্য গল্পগ্রন্থ দিয়ে সিলেটের সাহিত্যাঙ্গনে তার যে বর্ণাঢ্য যাত্রা শুরু হয়েছিল আজীবন সাহিত্য সাধনার ক্যানভাসে সফল বিচরণের পর শুক্রবার রাতে তার অবসান হলো।
সৈয়দ মোস্তফা কামাল কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের কেমুসাস সাহিত্য পুরষ্কার, রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরষ্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা ও পুরষ্কার অর্জন করেন। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের সর্বস্তরের লেখক-সাহিত্যিকদের উদ্যোগে সিলেটে তাকে গণসংর্বধনা দেওয়া হয়।
লেখক-গবেষক সৈয়দ মোস্তফা কামাল ১৯৪৩ সালের ২৫ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদরের মসাজানে জন্ম নেন। তার বাবা সৈয়দ মছদ্দর আলী, মাতা সৈয়দা খোদেজা খাতুন। মোস্তফা কামাল সিলেট ও তরপ বিজয়ী সৈয়দ নাসির উদ্দীন সিপাহসালার’র অধঃস্থন বংশধর। তিনি ১৯৬৩ সালে সিলেটের রসময় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন এবং ১৯৬৫ সালে সিলেট এম সি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট (আইএ) পাশ করেন।
ছাত্রলীগ থেকে ৬৫-৬৬ মেয়াদের জন্য সিলেট এম সি কলেজ ছাত্র সংসদের জি.এস নির্বাচিত হন তিনি। একই বছর (১৯৬৫ সালে) তার প্রথম রম্য রচনা ‘রঙের বিবি’ প্রকাশিত হয়।
১৯৬৬ সালে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান বিরোধী গণ আন্দোলনে যুক্ত হন। ৮ আগস্ট সিলেট সার্কিট হাউজে মার্চ পাস্টে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানকে গার্ড অব অনার প্রদান অবস্থায় ক্বিন ব্রিজের উপর থেকে জন-ঘৃণার প্রতীকস্বরূপ তার প্রতি সৈয়দ মোস্তফা কামাল জুতা নিক্ষেপ করেন। এ ঘটনার পর আইয়ুব সরকারের রোষানলে পড়ে তাকে দীর্ঘদিন ফেরারি জীবন কাটাতে হয়। তিনি ১৯৬৯ সালে গণ আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন।
বিভিন্ন সময় সিলেটের সাহিত্য সংস্কৃতির সুতিকাগার কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের কার্যকরী পরিষদের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৩
সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর