ঢাকা, সোমবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

এক যে ছিলো রাখাল বালক | সোলায়মান সুমন

ব্যঙ্গরচনা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৩১, মার্চ ২২, ২০১৬
এক যে ছিলো রাখাল বালক | সোলায়মান সুমন

ইহাকে রূপকথার গল্প ভাবিয়া বিভ্রান্ত হইবেন না!
এক দেশে ছিলো এক রাজা। নাম তার বীরেন সিং।

হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া। পুকুরভরা মাছ, বাগানে নানা জাতের ফল, ফুল। কিন্তু তারপরও রাজার মনে সুখ নেই। রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে, এক রাক্ষস এসে প্রজাদের জমির ধান, পুকুরের মাছ, লাঙলের গরু সব খেয়ে ফেলে। রাজদরবারে রাজা চিন্তিত অবস্থায় বসে রয়েছেন। রাজন্যদের সঙ্গে বসে পরামর্শ করছেন। প্রাসাদেও নিরাপত্তার জন্য প্রহরী বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই হয়তো রাক্ষস এখনও প্রাসাদে আক্রমণ করতে পারেনি। কিন্তু সারাদেশে এভাবে পাহারা বাড়ানো তো সম্ভব নয়। নিরীহ জনগণ রাক্ষসের আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিদিন। রাক্ষসের ক্ষুধার গ্রাস থেকে সাধারণ মানুষও রেহাই পাচ্ছে না। যেখানে ধান, গরু, মাছ, ছাগল পাচ্ছে না, সেখানে মানুষ ধরে পটাপট গিলে ফেলছে রাক্ষসটি। শুধু নিজে আরাম আয়েশে থাকলে কী চলবে- সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তাদানের দায়িত্ব তারই। তবে এও সত্য, তার ব্যর্থতা নিয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে আঙুল তুলবে না। চিন্তিত রাজা দিনের পর দিন অমাত্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে চলেছেন। প্রতিদিন রাজদরবারে সভা বসে, আলোচনা হয়। সমাধান কিছুই হয় না।

এভাবে দিনের পর দিন কেটে যেতে থাকলো। রাজা বীরেন সিং ভীষণ চিন্তিত, ‘গপাগপ প্রজাদের খেয়ে ফেলছে রাক্ষস, একসময় তো আমার রাজ্যে মানুষই থাকবে না। ’ কাদের শাসন করবেন তিনি? প্রজারাই তো তার রাজ্যের ঐশ্বর্য।

বেশ কয়েকদিন পরের কথা। তার রাজদরবারের সিংহদ্বারে এক দরবেশ এসে প্রহরীর কাছে রাজার সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। প্রহরী দরবেশকে বললো, ‘রাজা দরবারে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে অমাত্যদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন, এখন যাওয়া যাবে না। ’
 
দরবেশ বললেন, ‘প্রহরী আমি তোমার রাজার মুশকিল আসান করার জন্যই বহুদূর থেকে এসেছি। ’

প্রহরী ভীষণ বিরক্ত হলো। অন্যকেউ হলে কিছু উৎকোচের বিনিময়ে সে তাকে দরবারে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে পারতো। কিন্তু এ তো ফকির-সন্ন্যাসী, এর কাছ থেকে তো কানাকড়িও আদায় করা যাবে না।

‘দেখ বাবা প্রহরী, জগতের সব মুসিবতের কারণ হচ্ছে, লোভ আর ক্রোধ। এ থেকে তুমি বিরত থাকার চেষ্টা করো। ’

দরবেশের এ কথা শুনে প্রহরী একটু ঘাবড়ে গেলো। ‘ঠিক আছে ঠিক আছে, আপনাকে আর উপদশে দিতে হবে না। ’ সে দরবেশকে দাঁড়াতে বলে দরবারে রাজাকে দরবেশের আগমনের কথা জানাতে গেলো। সে রাজাকে বলল, ‘মহারাজ, আপনার অনুমতি পেলে একটি কথা বলতাম। ’
‘বলো। ’
‘এক দরবেশ আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। তিনি রাজদরবারে প্রবেশের অনুমতি চাইছেন। ’

‘আমি আছি মহা দুশ্চিন্তায়। সন্ন্যাসীর সঙ্গে দেখা করার সময় আমার আছে? এই নাও। ’ রাজা একটি সোনার মোহর বের করে প্রহরীর হাতে দিলেন, ‘এটা দিয়ে ওকে দিয়ে বিদেয় করো। ’

মোহরের দিকে তাকিয়ে প্রহরীর চোখজোড়া ছানাবড়া হয়ে যায়। দরবেশ যে রাজার মুসকিল আসান করতে চাইছে, সে কথা প্রহরী চেপে যায়। প্রহরী নিজের আচকানের গোপন পকেটে সোনার মোহরটি চালান করে দিয়ে সিংহদ্বারে এসে দরবেশকে বলে, ‘চলে যান সন্ন্যাসী বাবা। রাজা ভীষণ ব্যস্ত। আজ আর দেখা হবে না। ’

দরবেশ মুচকি হেসে বলে, ‘ঠিক হে। জো মার্জি তোমার বাদশাহের। ’ এই বলে দরবেশ চলে গেলেন।



সেদিন রাতে রাজা বীরেন সিং স্বপ্নে দেখলেন, আঁধার পথে তিনি হাঁটছেন। হাঁটছেন তো হাঁটছেন। তার সামনে গভীর কুয়াশা। হঠাৎ সে কুয়াশার গভীরতা ভেদ করে এক দরবেশ বেরিয়ে এসে রাজা বীরেন সিংকে বললেন, ‘তোর দরবারে গিয়েছিলাম, কিন্তু তোর প্রহরী বললো, তুই ব্যস্ত, তোর সঙ্গে দেখা হবে না। তোর দুশ্চিন্তার সমাধান দিতেই আমি গিয়েছিলাম। তোর রাজ্যের প্রকৃত মালিক তোর প্রজারা। তাদের উপেক্ষা করে রাজ্যে সুখ ফেরাতে পারবি না। আমার মতো সাধারণ প্রজারা তোর কাছে যেতে পারে না। তাদের আরজি তুই শুনিস না। এই তোর প্রজাপালন?’



‘দরবেশ বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে। এক রাক্ষসের অত্যাচারে আমার সব হিতজ্ঞান ধ্বংস হয়ে গেছে। ’
‘আরে বাদশাহ, সেই জন্যেই তো আমি গিয়েছিলাম তোর দরবারে। ’
‘দরবেশ বাবা, দয়া করে আমাকে বলে দিন কীভাবে ওই রাক্ষসকে হত্যা করে প্রজাদের জীবন রক্ষা করতে পারবো। ’
‘পারবি কিন্তু এজন্য তোর সর্বোচ্চ ত্যাগের প্রয়োজন হতে পারে। ত্যাগ করতে পারবি?’
‘যদি বুঝিয়ে বলেন...!’ রাজা সামান্য ভয় পান।
দরবেশ অট্টহাসি হেসে ওঠেন।
‘আপনি বলেন, আমি পারবো। ’ রাজা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন।
‘এমন কোনো নিষ্পাপ যুবকের সন্ধান কর, যার কোনো লোভ নেই। মিথ্যা কথা কোনোদিন বলেনি। সবাই তাকে ভালবাসে- বিশ্বাস করে। ’
‘এমন মানুষ কোথায় পাবো? এ বড় শক্ত কাজ। ’
‘পেতেই হবে। সে ওই রাক্ষসকে হত্যা করার ক্ষমতা রাখে। ’
‘আপনি বলে দিন। কোথায় তাকে পাবো?’
‘শোন যে কথা বলি, তোর দেশে প্রসূন নামে এক ছোট্ট নগর আছে। সেখানে এক রাখাল বালক আছে। নাম তার আইজান। তাকে সে নগরের সবাই ভীষণ ভালবাসে ও বিশ্বাস করে। এখনও সে নিষ্পাপ। তার কাছে সাহায্য চা। সেই পারবে এ রাক্ষসের হাত থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে। ’
আরও অনেক কিছু জানার ছিলো রাজার কিন্তু হঠাৎ দরবেশ উধাও হয়ে গেলেন।

পরদিন রাজা ঘোষণা দিলেন, প্রসূন নগর কোথায় আছে যতো শিগগিরই সম্ভব সন্ধান করা হোক।

একদিন যায়, দু’দিন যায়, তিন দিন যায়- হদিস আর পাওয়া যায় না। রাজন্যরা বলেন, স্বপ্নে দেখা নগরের সন্ধান বাস্তবে কি পাওয়া সম্ভব! কিন্তু এ কথা সাহস করে রাজা বীরেন সিংকে কেউ বলতে পারে না। সবাই কানাঘুষা করে, দুশ্চিন্তায় রাজার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এমন অদ্ভুত গ্রামের নাম তারা কোথাও শোনেনি।

চলবে…

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৬
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।