ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

মৃত্যু নিয়ে আবদুল্লাহ আল-হারুনের ধারাবাহিক বাংলানিউজে

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৬
মৃত্যু নিয়ে আবদুল্লাহ আল-হারুনের ধারাবাহিক বাংলানিউজে

তাঁর কাছে এককথায় মৃত্যু হলো, খুব পছন্দনীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত।

আরও বিস্তারিতভাবে বলেছেন, জীবন ও মৃত্যু উভয়ে কেউ কারও শত্রু নয় বরং পরম বন্ধু।

মানুষ যতদিন বাঁচে, দু’জনে পরস্পরের হাত ধরাধরি করে চলে। দেহ একসময় অনিবার্যভাবে প্রাণিজ (বায়োলজিকাল) কারণে ক্লান্ত হয়ে আত্মার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য হয়। সেসময় জীবনের পরম বন্ধু, মৃত্যু তার প্রধান দায়িত্বটি পালন করে। দেহকে মুক্তি দিয়ে আত্মাকে সে অন্য এক ভুবনে নিয়ে যায়।

প্রচলিত অর্থে ‘ভীতিকর’ মৃত্যু নিয়ে এমনই ভাবনা আবদুল্লাহ আল-হারুনের। হজপিসকর্মী হিসেবে শতাধিক মৃত্যুপথযাত্রীকে সঙ্গ দিয়েছেন। এ সুবিশাল অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে বাংলানিউজের জন্য ধারাবাহিকভাবে লিখবেন মৃত্যু নিয়ে তাঁর উপলব্ধি ও দার্শনিক চিন্তাগুলো। খুব শিগগিরই ধারাবাহিকভাবে সেগুলো প্রকাশিত হবে।

এখানে হজপিস সম্পর্কে একটু বলে নেওয়া ভালো। মৃত্যু সম্পর্কে অযৌক্তিক ভয় ও নেতিবাচক ধারণার অবসানে ইউরোপে ১৯৬৭ সালে হজপিস আন্দোলনের শুরু। হজপিস মৃত্যু সম্পর্কে প্রচলিত উদ্ভট সব অপব্যাখ্যা আর যৌক্তিক-অযৌক্তিক প্রশ্নের সময়োপযোগী উত্তর নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থিত হয়।

একাকী ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন মৃত্যুপথযাত্রীকে তার শেষ সময়ে একটু মানবিক ও সন্মানজনক সঙ্গ দেবার সংগঠন এবং আশ্রয় হিসেবেই হজপিস আন্দোলনের জন্ম হয়। এটা মনে করা আবার ভুল হবে যে, হজপিস কেবল গৃহ ও পরিবারহীনদেরই মৃত্যুসঙ্গ দেয়।
 
এটি মৃত্যুর আগে মানুষের শেষ সময়ে সঙ্গ দেয় একজন পরিজন ও নিকটাত্মীয়ের মতো। তার হারিয়ে যাওয়া বা দূরে থাকা পরিবারের অভাবটি বুঝতে না দিয়ে জীবনের শেষ সময়টি মানবিকতা আর সহৃদয়তায় ভরিয়ে তোলে। হজপিস আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের বলা হয়, হজপিসকর্মী।

গত প্রায় ৪০ বছর ধরে জার্মানিপ্রবাসী আবদুল্লাহ আল-হারুনের জন্ম ১৯৪৫ সালে, জামালপুরে। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। বড় ভাই আবদুল্লাহ আল-মামুন ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যজন। স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য বিভাগে।
 
১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত পাবনার একটি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৭৭ সালে দেশত্যাগের আগ পর্যন্ত তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রথমে গ্রিসে এরপর ১৯৭৮ সালের জুন থেকে জার্মানিতে বসবাস শুরু করেন। ছুটে বেড়িয়েছেন সমগ্র ইউরোপের নানা দেশে।
 
একমাত্র বাঙালি মৃত্যুসঙ্গী হিসেবে এখন পর্যন্ত শতাধিক মুমূর্ষু মানুষকে মৃত্যুসঙ্গ দেওয়ার জন্য তিনি হজপিস থেকে সম্বর্ধিত হয়েছেন। এখনও সুযোগ পেলে সানন্দে মৃত্যুপথযাত্রীদের সঙ্গ দেওয়ার পাশাপাশি নবীন মৃত্যুসঙ্গীদের প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করেন।
 
মৃত্যুসঙ্গের ধারাবয়ান ও বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘জীবনমরণের সীমানা ছাড়িয়ে’, ‘মৃত্যু: একটি দার্শনিক জিজ্ঞাসা’ ও ‘অঙ্গবিহীন আলিঙ্গন’।
 
তাঁর বেশকিছু অনুবাদকর্মও ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অনুবাদকর্মের মধ্যে সুইডিশ উপন্যাস ‘সিটি অব মাই ড্রিমস’ (ইংরেজি থেকে বাংলা), ২০০৯ সালে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক হার্টা ম্যুলারের ‘আটেমশাউকেল: নিঃশ্বাসের দোলা আশা হয়ে বাজে’ (জার্মান থেকে বাংলা), টনি ব্লেয়ারের ‘দ্য জার্নি’র (ইংরেজি থেকে বাংলা) কথা বলা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৬
এসএনএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।