ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

রঙিন ধ্বনির প্রফুল্লতায় শেষ অনবদ্য ‘সুনাদ’

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮
রঙিন ধ্বনির প্রফুল্লতায় শেষ অনবদ্য ‘সুনাদ’ শাস্ত্রীয় সংগীত পরিবেশন করছেন একজন শিক্ষার্থী। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: 'ধ্রুব’ অর্থ স্থির, নির্দিষ্ট ও সত্য  আর ‘পদ’ অর্থ কথাযুক্ত গীত। তাই ‘ধ্রুবপদ’ বা ‘ধ্রুপদ’ বলতে  ধীর, স্থির, গম্ভীর ও বীরত্বব্যঞ্জক সঙ্গীতকেই বোঝায়। উনিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত এর জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু বিগত এক-দেড়শ বছরে  খেয়াল গান অধিক জনপ্রিয় হওয়ায় ধ্রুপদের চর্চা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু সবার কাছে আবার পরিচিত করতে এ সংগীতকে ঘরে তুলে আনলেন বেঙ্গলের আয়োজন।

মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এ ধ্রুপদ সংগীতেই শান্ত প্রকৃতির রাগ ছায়ানটের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হতে পারতো রাজধানীর ছায়ানট মিলনায়তনে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের আসর সুনাদ'র দর্শক উচ্ছ্বাস। কিন্তু তা হলো না, বরং দর্শক শ্রোতাদের উচ্ছ্বাস আর মুগ্ধতা আরো বাড়িয়ে দিল বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীদের দলীয় এবং শিক্ষক দেবাশীষ হালদারের একক এসরাজ পরিবেশনা।

উচ্চাঙ্গসংগীত আসরে এসরাজের দল।  ছবি: বাংলানিউজসন্ধ্যায় বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে উচ্চাঙ্গসংগীতের আসর সুনাদে বিভিন্ন পরিবেশনায় দর্শকদের মুগ্ধ করেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। দু'দিনের সমাপনী আসরে এসরাজ, সেতারের অনবদ্য বাদন, খেয়ালের অনন্যতায় অনুষ্ঠানস্থলকে মোহিত করে তোলেন শিল্পীরা। শুদ্ধ সংগীতের শৈল্পিকতায় মিলনায়তনভর্তি দর্শক শ্রোতারাও পিনপতন নীরবতায় তন্ময় হয়ে উপভোগ করেন শুদ্ধ  সংগীতের এ আসর।

শেষদিনের পরিবেশনার শুরুতেই সেতার নিয়ে মঞ্চে আসেন সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী প্রসেনজিৎ মণ্ডল, জ্যোতি ব্যানার্জী, জাহাঙ্গীর আলম শ্রাবণ, মোহাম্মদ কাওসার, সোহিনী মজুমদার, সামিন ইয়াসার ইফতি এবং সুব্রত বিশ্বাস। রাগ বেহাগের পরিবেশনায় সেতারে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেন এই শিল্পীরা। এ সময় শিল্পীদের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন প্রশান্ত ভৌমিক এবং সুপান্থ মজুমদার।

এরপর খেয়ালে রাগ মুলতানি পরিবেশন করে মিলনায়তনকে সুরের চাদরে ঢেকে দেন কানিজ হুসনা আহম্মাদী। শিল্পীর সঙ্গে তবলায় ছিলেন প্রশান্ত ভৌমিক ও হারমোনিয়ামে আলমগীর পারভেজ সুমন।

খেয়ালের পরেই ইমন রাগের শুদ্ধ স্বরে পুরো মিলনায়তনে যেন শান্তির আবেশ নিয়ে আসে দলীয় এসরাজের পরিবেশনা। সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী সৈয়দা রায়হান, মো. রায়হানুল আমিন, রনজিত রায়, শুক্লা হালদার, ইসমাত আরা রুচি, শৌণক দেবনাথ ঋক, সৌমিত রায়, গৌরাঙ্গ কৃষ্ণ দাস এবং এসরাজের শিক্ষাগুরু দেবাশীষ হালদার নিবেদন করেন এ মুগ্ধতার রেশ। তাদের সঙ্গে তবলায় সংগতকারী ছিলেন সুপান্থ মজুমদার।

উচ্চাঙ্গসংগীত আসর সুনাদ'র শেষদিনের সর্বশেষ পরিবেশনা ছিল এসরাজ শিক্ষক দেবাশীষ হালদারের একক পরিবেশনায় রাগ আভোগী। দর্শকচিত্তে রঙিন ধ্বনির আবহ সৃষ্টি করেই তিনি প্রফুল্লতায় ইতি টানেন সুনাদ বা ধ্বনিময় এ আয়োজনের। এ সময় তার সঙ্গে তবলায় ছিলেন সুপান্থ মজুমদার।

বাংলাদেশে উচ্চাঙ্গসংগীতের প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নবীন ও প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের নিয়ে সংগঠিত হয়েছে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়। এ সব শিক্ষার্থীর খেয়াল ও ধ্রুপদ পরিবেশন এবং সরোদ, সেতার, তবলা ও এসরাজ বাদন নিয়েই নিয়মিত আয়োজন হিসেবে সূচনা করা হয় ‘সুনাদ’। ছায়ানটের এ আয়োজন ছিল তারই প্রথম অধিবেশন।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮
এইচএমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।