ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রথম দিনেই বেস্ট সেলার ব্লেয়ারের ‘অ্যা জার্নি’

আহমেদ জুয়েল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১০
প্রথম দিনেই বেস্ট সেলার ব্লেয়ারের ‘অ্যা জার্নি’

হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন টনি ব্লেয়ার। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের সঙ্গে তার সম্পর্ক যে মধুর ছিল না সেই হাঁড়িটিই তিনি ভেঙেছেন তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘অ্যা জার্নি’তে।

টনি ব্লেয়ারের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় ব্রাউন ছিলেন অর্থমন্ত্রী। ব্রাউন-ব্লেয়ারের সম্পর্ক যে খারাপ ছিল, এটা বিশ্বরাজনীতি-সচেতন সবাই জানত। কিন্তু ওই জানার চেয়েও যে সম্পর্কটা বেশিই খারাপ ছিল তা তিনি এবার প্রকাশ করে বিশ্বরাজনীতির ময়দানে হাঁড়িই ভেঙেছেন। তিনি ব্রাউনকে অদ্ভুত ধরনের মানুষ হিসেবে উল্লেখ করে লিখেছেন, ব্রাউন খুবই জটিল এবং কখনো কখনো বিরক্তিকর। এছাড়া তার বিন্দুমাত্র আবেগী বুদ্ধিমত্তা নেই। অবশ্য তিনি ব্রাউনের রাজনৈতিক কূটকৌশলের প্রশংসা করেছেন এবং শক্তিশালী রাজনীতিবিদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তবে টনি তার বইতে উল্লেখ করেছেন, নতুন লেবারের আদর্শ ভালোভাবে আঁকড়ে না ধরতে পারলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ব্রাউন বিপর্যস্ত হতেন। তবে যাই হোক, দুজনের সম্পর্কের এই জটিলতা ও টানাপোড়েন প্রথমবারের মতো প্রকাশ করে দিলেন ব্লেয়ার। বই প্রকাশের আগ পর্যন্ত এ ব্যাপারে তিনি অনেকটা নীরবই ছিলেন।

!এদিকে প্রকাশের প্রথম দিনেই রেকর্ড গড়েছে টনি ব্লেয়ারের রাজনৈতিক আত্মজীবনী ‘অ্যা জার্নি’। অনলাইন বই বিক্রেতা সাইট অ্যামাজন ডট কমের মতে, বইটি রাজনৈতিক বই বিক্রির সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙে দেবে। কারণ ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশের প্রথম দিনই এটা বেস্ট সেলারের তালিকার শীর্ষে চলে এসেছে। তাছাড়া অগ্রিম অর্ডার এসেছে ধারণার চেয়েও রেকর্ড পরিমাণ বেশি। তাদের মতে, ব্রিটেনের লেবার পার্টির রাজনীতিবিদ পিটার মানডেলসনের বইয়ের চেয়ে ‘অ্যা জার্নি’র ৩৬ ভাগ বেশি অগ্রিম অর্ডার পাওয়া গেছে।

সাইটটির প্রধান নির্বাহী সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বইটি সর্বকালের সবচেয়ে সফল রাজনৈতিক আত্মজীবনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।

এছাড়া শুরু থেকেই অনলাইন রিটেইলার টেসকো ও ওয়াটারস্টোনের বেস্ট সেলার তালিকায় প্রথম স্থানে অবস্থান করছে ব্লেয়ারের বইটি। ওয়াটারস্টোনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক আত্মজীবনীমূলক বইয়ের এত কাটতি আমরা কখনোই দেখিনি। এক্ষেত্রে পিটার মানডেলসন ছিলেন এক নম্বর কিন্তু ব্লেয়ার তার বই প্রকাশ করে জানিয়ে দিলেন, পিটার নন তিনিই এক্ষেত্রে বস। রাজনৈতিক বইয়ের বাজারে পিটার হতে পারেন প্রিন্স কিন্তু ব্লেয়ার এক্ষেত্রে কিং খেতাবের যোগ্য।

সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ৬০০ পৃষ্ঠার এই বই বাজারে আসার আগেই গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

বইটিতে গর্ডন ব্রাউনের সঙ্গে তার সম্পর্ক, ইরাক যুদ্ধ, ১৯৯৪ সালে লেবার পার্টির নেতা হিসেবে তার নির্বাচন, ডায়নার মৃত্যু, টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনা এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের শান্তি আলোচনা তুলে ধরেছেন ব্লেয়ার। এছাড়া তুলে ধরেছেন নেলসন মেন্ডেলা, বিল কিনটন, ভøাদিমির পুতিন ও জর্জ বুশসহ পৃথিবীর বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা।

ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, এটা তার ভুল ছিল না এবং এ কথা তিনি এখনও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন। এ ব্যাপারে তার কোনো অনুশোচনা নেই। তবে ওই যুদ্ধে সেনা ও সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যু তাকে কাঁদিয়েছে। তিনি লিখেছেন, সাদ্দাম হোসেনকে ইরাকের শাসনমতায় থাকতে দেওয়া হলে তা অত্যন্ত ঝুঁকির কাজ হতো। সাদ্দামের ছেলেরা মতায় এলে অবস্থা আরও খারাপ হতো।

ব্যক্তিগত জীবনের কথা তিনি লিখেছেন তার বইয়ে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে তার সম্পর্ক থেকে শুরু করে অনেকের সঙ্গেই তার সুসম্পর্কের কথা তিনি লিখেছেন। এমনকি বাদ দেননি তার পানাভ্যাসের কথাও। তিনি সুরা পানের কথা অবলীলায় স্বীকার করেছেন। লিখেছেন, সন্ধ্যায় জিন অ্যান্ড টনিক বা হুইস্কির পর ডিনারে আধা বোতল পর্যন্ত তিনি ওয়াইন পান করেন। তিনি স্বীকার করেছেন, এটা গ্রহণযোগ্য মাত্রার শেষ সীমা, তবে মাত্রাতিরিক্ত নয়। তবে তিনি এতে আসক্ত নন। কাজের চাপের মধ্যে কান্তি আর অবসাদ মুক্ত হতে তার এটা দরকার ছিল।

বইটি প্রকাশ করেছে বিখ্যাত প্রকাশনা গ্রুপ ‘র‌্যানডম হাউস’ গ্রুপ ইউকের ‘কর্নার স্টোর্ন’। সম্মানী বাবদ ব্লেয়ার পেয়েছেন ৭৫ লাখ মার্কিন ডলার। আর এই অর্থের পুরোটাই তিনি আহত ও পঙ্গু সেনাদের পুনর্বাসনে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে দান করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।


বাংলায় আসছে ‘অ্যা জার্নি’

‘অ্যা জার্নি’ প্রকাশ হওয়ার আগেই ১৬টি ভাষায় অনুবাদ স্বত্ব বিক্রি হয়েছে। বিশ্বব্যাপী বাংলায় প্রকাশ করার স্বত্ব পেয়েছে ঢাকার ‘অঙ্কুর প্রকাশনী’।

টনি ব্লেয়ারের আত্মজীবনীর অনুবাদ বাংলায় প্রকাশ করার ব্যাপারে অঙ্কুর প্রকাশনীর প্রকাশক মেসবাহউদ্দীন আহমেদ জানান, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বাংলাভাষার পাঠকদের হাতে বাংলা সংস্করণ তুলে দিতে পারব বলে আশা করছি।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৯০৩, সেপ্টেম্বর ২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।