ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব চিত্র স্রোতের ‘সুবর্ণবাংলা’

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০২১
মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব চিত্র স্রোতের ‘সুবর্ণবাংলা’

ঢাকা: ‘সারা শহর থমথমে। দোকানপাট কিছু খোলা, কিছু বন্ধ।

ছাত্ররা জড়ো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে। রাস্তায় ট্রাক ভর্তি পুলিশ। রোদ তেতে উঠেছে মাথার ওপর। কপালের রগ করছে দপদপ। মুখগুলো সবার উত্তেজনায় চকচকে। চোয়ালগুলো শক্ত হয়ে উঠছে। চোখে মুখে ঠিকরিয়ে পড়ছে প্রশ্নের চিহ্ন। কী হবে? কী করবো এখন?’

বাঙালি জাতির স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ যে আন্দোলন-সংগ্রাম, তার শুরুটা হয়েছিল এভাবেই। আর তার দীর্ঘ বর্ণনায় কবিতার ছন্দে উঠে এলো স্রোত আবৃত্তি সংসদের প্রযোজনা ‘সুবর্ণবাংলা’। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে স্রোতের নিবেদন এটি।

শনিবার (০৯ অক্টোবর) রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসবের সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় এই আবৃত্তি প্রযোজনার উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় সংগীত, নৃত্যকলা ও আবৃত্তি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই প্রযোজনার গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় ছিলেন মাহফুজ রিজভী।

আবৃত্তিটির প্রযোজনা ভাবনা নিয়ে মাহফুজ রিজভী বলেন, ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পর যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলার মানুষ নতুন দিনের অপেক্ষায় ছিল। সেই স্বপ্নভগ্ন হয় মায়ের ভাষার আঘাতে। বাঙালির জাতিসত্ত্বার পরিচয় এবং ঐক্যবদ্ধ বাঙালির প্রথম প্রতিবাদ ও বিজয়- মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। পাকিস্তানি উপনিবেশিক শাসনের বেড়াজালে বাংলার নাম বদলে হয় পূর্ব পাকিস্তান। আঘাত আসে শাসনতান্ত্রিক অধিকারে। রাজনীতি-অর্থনীতি-সাংস্কৃতিক বঞ্চনা ও অপঘাতে বাংলার সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। সংঘবদ্ধ আন্দোলনে মুখর হয়ে ওঠে রাজপথ। আর কাণ্ডারি রূপে আবির্ভূত হন বাঙালি জাতিসত্ত্বার প্রতিষ্ঠাতা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট সরকার, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালির স্বাধীকার আন্দেলনের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রধান প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ শহিদ-বীরাঙ্গনা, শরণার্থী, বুদ্ধিজীবী তথা সাড়ে ৭ কোটি মানুষের অবর্ণনীয় আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়। আর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধজয়ের বিজয়ানন্দ পরিপূর্ণতা পায়। বাঙালি জাতির স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ সেই আন্দোলন সংগ্রাম, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব এবং মহান মুক্তিযুদ্ধই এই প্রযোজনার উপজীব্য।

সেই একই কথা যেন বলে গেলেন আবৃত্তি প্রযোজনাটিতে আসা দর্শক শ্রোতারাও। আয়োজন শেষে তারা বলেন, বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের একটা বাস্তব চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে এই প্রযোজনায়। বিশেষ করে বাচিক শিল্পীদের দারাজ কণ্ঠ যেমন ছড়িয়েছে মৌতাত, তেমনি তাকে আরও জীবন্ত করে তুলেছে মঞ্চের আলোকসজ্জা এবং আবৃত্তির আবহ সঙ্গীত। সব মিলিয়ে স্রোত আবৃত্তি সংসদের প্রযোজনা সুবর্ণবাংলা যেন বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের একখণ্ড বাস্তব চিত্র।

সন্ধ্যায় প্রযোজনাটিতে আবৃত্তি করেন আবৃত্তি শিল্পী মাসুদুজ্জামান, শামীমা তন্দ্রা, মাহফুজ মাসুম, তাপস হাওলাদার, রেহানা আক্তার, আজিম রানা, স্নিগ্ধা রানী, আনিসুর রহমান, হাসিনা আক্তার, তাসনিয়া অহনা, আশিকুর রহমান, মেহেদি তুষার ও রোকসানা বিনয়া।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২১
এইচএমএস/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।