ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

সৈয়দ শামসুল হকের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২
সৈয়দ শামসুল হকের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি কুড়িগ্রামে সৈয়দ শামসুল হকের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন সর্বস্তরের মানুষ

কুড়িগ্রাম: সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন কুড়িগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন।

মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ চত্বরের মূল ফটকের পাশে সৈয়দ শামসুল হকের সমাধিতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ সর্বসাধারণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মিনহাজুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা মো. নাসির উদ্দীন, একুশে পদকপ্রাপ্ত  অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন, কবির ছেলে দ্বিতীয় সৈয়দ হক, প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজু মোস্তাফিজ প্রমুখ।

সৈয়দ শামসুল হকের ছেলে দ্বিতীয় সৈয়দ হক বলেন, আমার বাবা এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন। যেদিন তিনি এখানে শায়িত হয়েছেন সেদিন থেকে আমিও হয়ে গেছি বাবার মতো কুড়িগ্রামের সন্তান। আমরা সকলের মুখে শুনছি এখানে তার নামে কমপ্লেক্স করা হবে। তবে কবে নাগাদ করা হবে আমাদের জানা নেই। দ্রুত কমপ্লেক্সেটি হলে আমাদের তথা কুড়িগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের চাওয়া পূরণ হতো।

জন্মভূমি ও দেশের মানুষের টানে ক্যান্সারে আক্রান্ত কবি নিশ্চিত মৃত্যু ভেবে লন্ডন থেকে ছুটে আসেন। বাংলাদেশের মাটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত হওয়ার তাঁর শেষ ইচ্ছে ছিল। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করলে কবির শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁর জন্মশহর কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ চত্বরে সমাহিত করা হয়।

বাংলা সাহিত্যের সব্যসাচী খ্যাত সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরের থানা পাড়ার পৈত্রিক নিবাসে জন্মগ্রহণ করেন। সৈয়দ হক তার বাবা-মায়ের আট সন্তানের মধ্যে সবার বড়। বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও মা হালিমা খাতুন। বাবা পেশায় ছিলেন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার।

বাংলা সাহিত্যের সব শাখায় সমানভাবে পদচারণার জন্য সৈয়দ শামসুল হককে ‘সব্যসাচী লেখক’ বলা হয়। তিনি ১৯৬৪ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। ১৯৬৬ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে ১৯৮৪ সালে একুশে পদক এবং ২০০০ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার।

এছাড়াও সাহিত্যে তিনি আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল স্বর্ণপদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।

১৯৫০-এর দশকে প্রকাশিত হয় সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’। এছাড়াও তাঁর লেখা অন্যান্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে ‘খেলারাম খেলে যা’, ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘সীমানা ছাড়িয়ে’, ‘নীল দংশন’, ‘বারো দিনের জীবন’, ‘তুমি সেই তরবারী’, ‘কয়েকটি মানুষের সোনালী যৌবন’ ও ‘নির্বাসিতা’ উল্লেখযোগ্য।

সৈয়দ শামসুল হকে বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘একদা এক রাজ্যে’, ‘বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা’, ‘পরানের গহীন ভিতর’, ‘অপর পুরুষ’, ‘অগ্নি ও জলের কবিতা’। ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ ও ‘নুরুলদীনের সারা জীবন’ সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত কাব্যনাট্য।

সৈয়দ শামসুল হক মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত বেশ কিছু সিনেমার চিত্রনাট্য লিখে সুনাম কুড়িয়েছেন। ‘মাটির পাহাড়’, ‘তোমার আমার’, ‘কাঁচ কাটা হীরে’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’ উল্লেখযোগ্য। তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেন।

১৯৭১ সালের নভেম্বরে সৈয়দ শামসুল হক লন্ডন চলে যান। সেখানে বিবিসির বাংলা খবর পাঠক হিসেবে চাকরি করেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর পাঠ করেছিলেন তিনি।

বাংলাদশে সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২
এফইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।