ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩২, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৭

বাংলানিউজ স্পেশাল

নির্বাচনের জটিল সমীকরণ, কতটুকু প্রস্তুত বিএনপি?

সিফাত বিনতে ওয়াহিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৫৬, অক্টোবর ৬, ২০২৫
নির্বাচনের জটিল সমীকরণ, কতটুকু প্রস্তুত বিএনপি? ফাইল ছবি

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও এখনো স্পষ্ট নয় কোন প্রক্রিয়ায় তা সম্পন্ন হবে। জুলাই জাতীয় সনদ কার্যকর করা হবে কি না এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) নাকি সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে আইনসভার সদস্য নির্বাচন হবে—এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়নি।

বিশেষত পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিরোধ চরমে পৌঁছেছে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির মধ্যে।

দেশের দুটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিপুল ব্যবধানের জয় দলটিকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেছে। ইতোমধ্যেই দলটি প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে। অন্যদিকে বিএনপি এখনো ভোটের মাঠে পুরোপুরি গোছানো নয়; প্রার্থী চূড়ান্তের প্রক্রিয়া চলছে ধীরগতিতে, চলছে বিক্ষিপ্ত প্রচারণা। তবে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই শতাধিক আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত।

একাধিক যোগ্য প্রার্থী, সমন্বিত সিদ্ধান্তে মনোনয়ন

দলীয় সূত্র অনুযায়ী, অল্প কিছু আসনে দুইয়ের অধিক প্রার্থী রাখা হলেও অধিকাংশ আসনে একক প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। এসব প্রার্থীর বিষয়ে মনোনয়ন বোর্ডের মতামত নিয়ে পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের জানানো হবে। তফসিল ঘোষণার আগেই অন্তত ৭০ শতাংশ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চায় দলটি। এবার শতাধিক আসনে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আসন-সমঝোতা করতে হতে পারে, তাও বিবেচনায় রাখছে দলটি। মনোনয়ন বোর্ডে উত্থাপিত তালিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তিনি মাঠপর্যায়ে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক ভূমিকা ও গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করছেন। তবে প্রতিটি আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মনোনয়ন বোর্ডের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা রয়েছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, এবার একক মতামতের ভিত্তিতে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। দলের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া নেতাদের বিষয়েও স্থায়ী কমিটি বা মনোনয়ন বোর্ড মতামত দিতে পারবে এবং সেই মতামতের ভিত্তিতে বাছাই করা প্রার্থীর মনোনয়নও পরিবর্তন করা হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বাংলানিউজকে বলেছেন, “আমাদের প্রতিটি আসনেই একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। কোথাও পাঁচজন, কোথাও সাতজন, আবার কোথাও দশজন পর্যন্ত প্রার্থী আছেন, প্রত্যেকেই সক্ষম ও উপযুক্ত। প্রার্থী নির্বাচনের কাজটি আমাদের একটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সম্পন্ন করতে হচ্ছে। বর্তমানে আমরা জেলা ও বিভাগভিত্তিক সেই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছি। খুব শিগগিরই আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে মাঠে কাজের জন্য গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে। তবে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে তফসিল ঘোষণার পর পার্লামেন্টারি বোর্ডের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে। ”

একক প্রার্থী নীতি, বিতর্কিত প্রার্থী এড়ানোর পরিকল্পনা

দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এক পরিবার থেকে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। ভোটে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা কম থাকায় অনেক আসনে বিএনপির বহু নেতা মনোনয়ন চাইবেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিতর্কিত কাউকে প্রার্থী না করার নীতি নিয়েছে দলীয় হাইকমান্ড। ‘গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা’ ধারণ করে জনপ্রিয় ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যেই মাঠপর্যায়ে পাঁচটি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে, যার ফলাফল, জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থী বাছাই হচ্ছে।

দলের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, ৩০০ আসনের মধ্যে প্রায় অর্ধেক আসনকেই ‘জটিল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেখানে দলের একাধিক শক্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন, গ্রুপিং বিদ্যমান এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বড় অথবা জনপ্রিয় নেতা প্রার্থী হতে পারেন। এমন আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডেকে বৈঠক করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা।

এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, “আমরা কখনোই পেশিশক্তি, টাকার প্রভাব বা পারিবারিক বিবেচনায় প্রার্থী মনোনয়ন দিইনি, ভবিষ্যতেও দেব না। মনোনয়নের ক্ষেত্রে আমরা যে বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিই, সেটি হলো—প্রার্থী যেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সমস্যা সম্পর্কে জানেন, মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক ও সম্পৃক্ততা থাকে এবং ওই এলাকার জনগণের কল্যাণে কাজ করার সক্ষমতা রাখেন। ”

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই এমন একজন প্রার্থী, যার সঙ্গে এলাকার তরুণ, নারী, মুরুব্বি, ছাত্রছাত্রী—সব শ্রেণির মানুষের যোগাযোগ আছে। যার প্রতি মানুষের আস্থা ও জনসমর্থন রয়েছে। জনগণের সমর্থন যার সঙ্গে থাকবে, তাকেই আমরা প্রাধান্য দেবে। ”

নবীন-প্রবীণের সংমিশ্রণ ও জোটের সমীকরণ

প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এবার নবীন এবং প্রবীণের সংমিশ্রণকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায় বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে। তারা জানান, জনগণের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এবং ভোট টানতে পারবেন, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, একক প্রার্থীর তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, একটি আসনে শুধু একজনকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে, কোনো বিকল্প বা দ্বৈত প্রার্থী রাখা হবে না। এর লক্ষ্য হলো ভেতরে ভেতরে বিভাজন রোধ করা এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচারণা নিশ্চিত করা।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এই বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে, আগামী নির্বাচনে দল যাকে প্রার্থী করবে, তাকেই মেনে নিতে হবে। গ্রুপিং-বিভেদ ভুলে তাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। অন্যথায় কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, কোনো তদবির এবং লবিংয়ে কাজ হবে না। বিএনপি এবারের মনোনয়ন দেবে শুধু তাদেরই, যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর সাংগঠনিক অভিযোগ নেই এবং যারা দলীয় নীতির প্রতি আনুগত্যশীল। দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচন বিএনপির জন্য টার্নিং পয়েন্ট। তাই যিনি ভোটের মাঠে লড়তে পারবেন এবং জনগণের আস্থা অর্জন করবেন তাকেই দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টিতে আসনভিত্তিক ঐক্য গড়তে তফসিল ঘোষণার আগে তালিকা করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়ন বোর্ড ৩০০ আসনে প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করবে। সেক্ষেত্রে প্রাথমিক তালিকার কোনো প্রার্থী যদি এলাকায় আশানুরূপ অবস্থান তৈরি করতে না পারেন অথবা দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কোনো কার্যক্রমে অংশ নেন, তাহলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সেখানে পরিবর্তন আনা হতে পারে। তার আগ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট আসনের সব দলীয় কার্যক্রম সবুজ সংকেত পাওয়া প্রার্থীর চাহিদা অনুযায়ী হবে।

এদিকে দলের সবুজ সংকেতের আশায় দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে লবিংয়ের পাশাপাশি ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন সম্ভাব্য তরুণ প্রার্থীরা। প্রবাসী নেতারাও অনেকে দেশে এসে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলের হাইকমান্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে ২০০ আসনে প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেখানে ২০১৮ সালের নির্বাচনে যারা দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তাদের বড় অংশকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে। যেখানে নতুন প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে দল, সেখানে তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে জেন-জির মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ দেশের মোট ভোটারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তরুণ। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৫০-৬০ জন তরুণ প্রার্থী দেখা যেতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রবীণদের পাশাপাশি সম্ভাব্য তরুণ প্রার্থীরাও মাঠে নেমেছেন। এবারের দুর্গাপূজায় তারা প্রায় প্রতিটি মন্দিরে গেছেন এবং সনাতন ধর্মালম্বী মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। পাশাপাশি নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় শোডাউনও করেছেন। এ প্রবণতা বেশি দেখা গেছে সম্ভাব্য তরুণ প্রার্থীদের মাঝে। একাধিক সম্ভাব্য তরুণ প্রার্থী জানান, অনেক নির্বাচনী এলাকায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের ভাইস চেয়ারম্যানসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাই প্রার্থী হিসেবে প্রায় নিশ্চিত।

এরপরও তরুণরা নিজের অবস্থান দলের শীর্ষনেতার কাছে জানান দিতে প্রার্থী হিসেবে এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে নির্বাচন করার একটা সুযোগ তৈরি হলেও হতে পারে অথবা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি পেতে তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। জানা গেছে, দলের সিনিয়র নেতা অথবা সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন; কিন্তু তরুণ এবং সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটাদের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন।

জোটের সঙ্গে আসন সমঝোতা ও চ্যালেঞ্জ

নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টিও দ্রুত চূড়ান্ত করতে চায়। শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের সময় যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের কাছ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা নেওয়া হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে গত সপ্তাহে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন ও প্রার্থিতা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে অনিশ্চয়তা এবং বিভ্রান্তি কাটাতে ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা যাতে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় কাজের জন্য একটু বেশি সময় পান, সেদিকগুলো বিবেচনায় রেখে যত দ্রুত সম্ভব প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

তবে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমমনা দলগুলোর মধ্যে অস্বস্তি বাড়ছে দলটির। বিএনপির কাছে শতাধিক আসন চাচ্ছে মিত্র রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি দল ও জোট বিএনপির কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা জামা দিয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিএনপির অনেক নেতা এমন নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন যেখানে মিত্র দলের নেতারাও মাঠে আছেন, যা কোন্দল বাড়াচ্ছে। জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) প্রস্তাবিত পরিবর্তনের কারণে মিত্র দলগুলো বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ‘ধানের শীষ’ নিয়ে প্রার্থী হতে পারবে না, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

নির্বাচনের আগে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগির সমীকরণ দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে। এই দলগুলো পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় বিএনপির সঙ্গে ছিল। শরিকদের অভিযোগ, অনেক বিএনপি নেতা এমন নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন, যেখানে মিত্র দলের নেতারাও মাঠে আছেন। তারা বলছেন, বিএনপি তৃণমূল প্রার্থীদের লাগাম টানতে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। বিএনপি নির্বাচিত হলে জোট শরিকদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেছেন, জোটে থাকা সেইসব নেতাদের জন্য আসন ছাড়া হবে, যাদের জয়ের সম্ভাবনা আছে।

গত আগস্টে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় ৬০ জন নেতাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, জোটের নেতারা ভবিষ্যতে তাদের সরকারের অংশ হবে। দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, তিনি নির্বাচনী প্রচারণা পর্যবেক্ষণ করছেন এবং জরিপের মাধ্যমে জনপ্রিয়তার ব্যাপারে ধারণা নিচ্ছেন। বিশ্লেষকরা বলেছেন, জোটের দুর্বল প্রার্থীদের আসন ছেড়ে দিলে দলের জন্য বড় ক্ষতি হতে পারে।

জোট নেতারা বলছেন, আসন নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে বিএনপি দেরি করছে। এতে সবার মধ্যে ভুল বোঝাবোঝি বাড়ছে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, মিত্রদের প্রার্থী তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে। একযোগে প্রচারণা শুরু করতে আসন ভাগাভাগির আলোচনা এ মাসেই শেষ হতে পারে।

নির্বাচনী ইশতেহার ও জনগণের প্রত্যাশা

গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে তরুণ সমাজের আকাঙ্ক্ষা, সর্বস্তরের মানুষের চাওয়া-পাওয়া ও রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন দিক বিবেচনায় রেখে বিএনপি নির্বাচনী ইশতেহার দিতে চায়। সংবিধান সংশোধন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, দ্বিকক্ষের সংসদ এবং রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যসহ বিভিন্ন দিক এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এ ছাড়া এতে রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রস্তাবকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও জানা যায়।

ইশতেহারে সাধারণ নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্য কার্ড, নারীদের জন্য ফ্যামিলি কার্ড, কৃষকদের জন্য ফার্মার্স কার্ড, বছরে ৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা ও বেকার ভাতার প্রস্তাব করা হতে পারে বলেও জানা গেছে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ভোটের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার প্রচার করবে বলে তারা জানান।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপি এখনো প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হলেও তাদের জন্য নির্বাচনী পরিস্থিতি সহজ নয়। অভ্যুত্থানের পরপরই যেটি অনুমান করা হয়েছিল—আওয়ামী লীগের পতনের ক্ষণিক সুবিধা নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে, তা এখন আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটছে না। কারণ, বিএনপি আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতির সুবিধা পাবে, এমনটা নয়। বরং জামায়াত ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মতো দলগুলোর সঙ্গেও ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।

এ ছাড়া অতীতে বিএনপির সরকার পরিচালনার সময় নানা অভিযোগ নিয়ে জনগণের মধ্যে যে হতাশা তৈরি হয়েছিল, তা পুরোপুরি দূর হয়নি বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এ অবস্থায় বিএনপি যদি শুধু আওয়ামী লীগের ভুলত্রুটি তুলে ধরে রাজনীতি করে, তবে তাদের ওপর থেকে তরুণ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি অংশের আস্থা উঠে যেতে পারে, যারা পরিবর্তন চাইলেও অতীতের পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না। এই শ্রেণির ভোটাররা কেবল রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তন চান না, তারা চান এমন একটি দল—যারা সত্যিকার অর্থেই জবাবদিহি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে।

এসবিডব্লিউ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।