ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

নিষিদ্ধ সময়েও ইলিশ শিকারের মহোৎসব

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৭
নিষিদ্ধ সময়েও ইলিশ শিকারের মহোৎসব নৌকা থেকে ডাঙ্গায় তোলা হচ্ছে ইলিশ। ছবি: ছোটন সাহা

ভোলা: স্ত্রীসহ তিন মেয়ে আর দুই ছেলে নিয়ে রহিমের সংসার। মাছ ধরা নিষিদ্ধ বলে বেকার এখন। কিন্তু জাল আর নৌকা তৈরিতে দুটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। সপ্তাহে সপ্তাহে কিস্তির টাকা জোগাড় করতে হয় তাকে। সেই টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে নামতে হয় ইলিশ শিকারে।

বাংলানিউজকে রহিম বলেন, ২১ দিন হলেও এখনো সরকারি বরাদ্দের টাকা পাইনি। বেকার দিন কাটাচ্ছি।

কবে সরকারি চাল পাবো তাও জানি না। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে মাছ শিকারে নামতে হয়।

শুধু রহিম মাঝি নন, তার মত অনেকেরই একই অবস্থা। প্রশাসনের চোখের আড়ালে বাধ্য হয়ে নামতে হয় মাছ শিকারে। যদিও অনেক জেলেই বেকার বসে না থেকে দুই মাসের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান হিসাবে বিভিন্ন কাজে শ্রম দিচ্ছেন।
 
ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকলেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভোলার মেঘনা তেতুলিয়া নদীতে ইলিশের অভায়শ্রমে মাছ শিকার করছেন জেলেরা। ভোলার নদীতে ইলিশ শিকার।  ছবি: ছোটন সাহা

অভিযানের আড়ালে জাল নৌকা নিয়ে জেলেরা মাছ শিকার করছেন। ওই মাছ আবার বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন আড়তে। চলে যাচ্ছে ঢাকা বা বরিশাল পাইকারি বাজারে।

তবে জেলেরা বলছেন- ইলিশ নিষেধাজ্ঞার ২১ দিন কেটে গেলেও পুনর্বাসনের চাল পাননি তারা। তাই দেনার দায় মাথায় নিয়ে বাধ্য হয়েই মাছ শিকারের নেমেছেন।

জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মাছের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখে ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার এবং ইলিশা থেকে মনপুরার চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার নিয়ে মোট ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ,  ইলিশের অভয়াশ্রমে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সেই নিয়মটি মানা হচ্ছে না। ভোলার মেঘনা তেঁতুলিয়া নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে চলে ইলিশ শিকারের মহোৎসব। নিষিদ্ধ সময়ে শিকার করা ইলিশ।  ছবি: ছোটন সাহা

জেলেদের অভিযোগ, সরকারের বরাদ্দকৃত চাল না পেয়ে পেটের টানে বাধ্য হয়েই প্রতিদিন মাছ শিকারে নেমে পড়ছেন জেলেরা।

জেলে পল্লী ঘুরে জানা গেছে, বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল জেলার নিববন্ধনভুক্ত সোয়া লাখ জেলে। তবে নিষেধাজ্ঞার সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা পাওয়ার কথা তাও মিলছে না জেলেদের ভাগ্যে। তাই এনজিও ঋণ আর মহাজনের দেনা কাঁধে নিয়েই অভিযানের ফাঁকে ঝুঁকি নিয়ে মাছ শিকারে নেমে পড়ছেন তারা।

ইলিশা, রাজাপুর ও ধনিয়া গ্রামের সিরাজ, মহিউদ্দিন, তোফাজ্জল ও লোকমানসহ অনেকেই জানান, ২২ দিন ধরে বেকার দিন কাটছে তাদের। কিন্তু এখন সরকারি পুনর্বাসনের চাল পৌছায়নি তাদের কাছে। এদের মধ্যে আবার অনেকের অভিযোগ, জেলে পেশায় থাকলেও তাদের অনেকের ভাগ্যে জোটেনা এ সহযোগিতা। মেম্বার-চেয়ারম্যানদের পছন্দের লোক পায় সেই সহযোগিতা। আবার জেলে হয়েও নিবন্ধনের অন্তর্ভুক্ত হননি অনেকে।

এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, শিগগিরই জেলেদের পুনর্বাসনের চাল বিতরণ করা হবে। তবে কিছু কিছু সময় অভিযানের ফাঁকে জেলেরা মাছ শিকার করে। আমরা ইলিশ রক্ষায় কঠোর অভিযান পরিচালনা করছি।

ইলিশের অভয়াশ্রমের আওতায় ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ রক্ষা করতে পারলেই ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৭
জেডএম/

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।