সিডর বিধ্বস্ত ভেলুমিয়া, ইলিশা, রামদাসপুর, মনপুরা, বোরহানউদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলার বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ক্ষতিগস্ত মানুষের দুর্দশার চিত্র। সহায়-সম্বল হারিয়ে তাদের দুঃখ দুর্দশার সীমা নেই।
ইলিশা গ্রামের যুবক এমরান হোসেন বলেন, সিডরে ১১টি গরু, ৫টি ছাগল এবং ৩ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। ধার-দেনা আর ঋণ নিয়ে সম্পদ গড়লেও তা মুহূর্তে নষ্ট হয়ে যায়। ওই ঋণের বোঝা নিয়ে এখনও দিন কাটাচ্ছি।
ক্ষতিগ্রস্ত তাহের মাঝি বলেন, সিডরের ফলে সৃষ্ট জোয়ারে পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, ভেঙে গেছে ঘরটিও। এরপর থেকে একের পর এক নদী ভাঙন, আজও নতুন করে ঘর তুলতে পারনি।
কালুপুর গ্রামের গৃহবধূ তাসলিমা বলেন, আমরা অভাবি মানুষ, দিন এনে দিন খাই, কিন্তু সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সাহায্য পাইনি। সিডরের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, গাছ পালা ও হাঁস মুরগি ভেসে গেছে।
তাছনুর বেগম বলেন, ঝড়ে ঘর ভেঙে গেছে, আজও সেই ভাঙা ঘর মেরামত করতে পারিনি, বাঁধের উপর ঝুপড়ি ঘরে আশ্রয় নিয়েছি।
ক্ষতিগ্রস্ত গিয়াস উদ্দিন বলেন, সিডরে ফার্মের ৪’শ মুরগি মারা যায়, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মুরগির খামার করেছিলাম। কিন্তু ৮ বছরেও ওই ঋণ পরিশোধ করতে পারিনি। ঋণের বোঝা নিয়ে এখনও আছি।
ইলিশা এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, সিডরে ক্ষয়ক্ষতি হলেও কেউ ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ-খবর নেয়নি। সাধারণ মানুষ ঘুরে দাঁড়ানে পারেনি। এখনও বহুলোক ঋণের বোঝা নিয়ে বেশ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
ইলিশা মডেল কলেজে অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন বলেন, পুরো এলাকার শত শত মানুষ সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ নতুন করে ঘর নির্মাণ কিংবা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জেলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার বাঁধ ও নদীর তীরবর্তি বিপন্ন এলাকায় এখনও সিডরের ক্ষতচিহ্ন। ঝড়, জোয়ারের পানি ও নদী ভাঙনসহ একের এক বিপর্যয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা কিছুদের ঘুরে দাঁড়াতে পারছেনা।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ভোলার বিচ্ছন্ন এলাকা ও উপকূলের জনপদে একের পর এক দুর্যোগ এলেও এখনও অরক্ষিত উপকূলের মানুষ। তারা এখনও ঝড়ের পূর্বাভাস পায়না। যারফলে ঝড়ের সময় কোনো প্রস্তুতি নিতে পারছেন না তারা। ঝড়ের সময় কোনো মাইকিং হয়না বলে অভিযোগ তাদের।
লর্ড হার্ডিঞ্জ এলাকার লোকমান হোসেন, সিরাজ উদ্দিন ও লাল মিয়াসহ অন্যরা বলেন, আকাশে মেঘ দেখলেই বুঝতে পারি ঝড় আসবে, কিন্তু কত নম্বর সিগন্যাল তা জানতে পারি না।
এদিকে, উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় সিডর, আইলা, রেশমি, মহাসেন, রোয়ানুসহ ছোট বড় অর্ধশতাধিক ঝড় বয়ে গেলেও সিডরের ভয়াবহতার কথা আজো ভুলতে পারছেনা উপকূলের মানুষ।
সিডরে এ জেলায় ৪২জন নিহত ও ৫২ হাজার ঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও কয়েক’শ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতিগতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ কিলোমিটার বাঁধ।
**প্রিয়জনের ফেরার প্রতীক্ষায় ১০ বছর
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
এসএইচ