নিত্যদিনের এ সংকটে যেন জীবনই থমকে থাকে। তবে চরের উন্নয়নে পদক্ষেপ নিলে পাল্টে যাবে দৃশ্যপট, উন্নত হবে জীবনযাত্রার মান- দাবি মদনপুরবাসীর।
সরেজমিনে জানা গেছে, চারপাশে মেঘনা নদীর মাঝের দ্বীপচরটিতে ১০ হাজার মানুষের বাস। অধিকাংশই জেলে, তবে কিছু কৃষক ও দিনমজুরও রয়েছেন। নৌকায় মেঘনা পাড়ি দিয়ে আঁকা-বাকা মেঠোপথ আর ফসলের ক্ষেত পার হয়ে যাতায়াত করতে হয় সেখানে। বর্ষায় হাঁটু পানিতে আবদ্ধ থাকে পুরো চর আর শীতে বিস্তীর্ণ রাস্তাঘাট এলোমেলো হয়ে যায়।
মদনপুর দ্বীপবাসী জানান, অব্যাহত নদী ভাঙনে দিশেহারা তারা। প্রকট স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও স্যানিটেশন সমস্যা দীর্ঘদিনের, নেই ভালো রাস্তাঘাটও। চরে নেই হাসপাতাল, যান না স্বাস্থ্যকর্মীরাও। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতেও নৌকার দরকার হয়। মাত্র চারটি সেতুর অভাবে প্রায় বন্দিদশা তাদের। ইলিশের মৌসুমে জলদস্যু আর শুষ্ক মৌসুমে গরু-মহিষ লুটের আতঙ্কেও দিন কাটাতে হয়।
বিদ্যুতের আলো না পৌঁছায় সন্ধ্যার পর অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে পুরো চর। দু’একটি এলাকায় সৌর বিদ্যুতের ছোঁয়া লাগলেও তা অপ্রতুল। রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে দুর্ভোগের সীমা থাকে না। উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে ভোলা সদরে আনতে হয়। কখনো কখনো মাঝপথেই মারা যান প্রসূতি ও রোগীরা। তাই চরে একটি হাসপাতাল নির্মাণের দাবি দ্বীপের বাসিন্দাদের।
তারা আরও জানান, ফসল উৎপাদন এবং গৃহপালিত পশু-পাখি ও মহিষ পালনে অনেক এগিয়ে রয়েছে মদনপুর। চরের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অনেক ভূমিকা পালন করছে এগুলো। কিন্তু বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা। উন্নত প্রশিক্ষণের অভাবে মহিষ পালনেও লাভবান হতে পারছেন না। তবে জেলার দুধ-দইয়ের বেশিরভাগ চাহিদা পূরণ হয় চরের গরু-মহিষ থেকেই।
মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন নান্নু বলেন, ভাঙনে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে চরের মানচিত্র, ভূমি হারিয়ে গৃহহীন ও নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন শত শত মানুষ। দ্রুত নদী ভাঙন সমস্যার সমাধান জরুরি।
সম্প্রতি জনতার মুখোমুখি হয়ে মদনপুর চরের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল। তিনি জানিয়েছেন, জলদস্যুতা ও লুটপাট বন্ধে চরে নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন, চারটি সেতু নির্মাণ, সৌর বিদ্যুতায়ন এবং স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৭
এএসআর