ঘটনার শুরু এক খুদেবার্তায়। অলস দিনের অপেক্ষায় থাকা চট্টগ্রামে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ কাভার করতে যাওয়া ক্রীড়া সাংবাদিকরা নড়েচড়ে বসেন তাতে।
কী হবে তাতে? বেলা দেড়টায় সেটি জানা গেলেও আগে থেকেই আঁচ করা যাচ্ছিল কিছুটা। অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবেন, অধিকাংশের অনুমানই সীমাবদ্ধ ছিল এতটুকুতে। কিন্তু তামিম ঘোষণা দিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই ছেড়ে দেওয়ার। এর আগে বিসিবির কর্মকর্তারা তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেন, পরেও করেছিলেন।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের ফোন তামিম ধরেননি। দুয়েকজন বোর্ড কর্তার অনুরোধও মেনে নেননি। পরে দুপুর দুইটা বিশে চট্টগ্রামের টাওয়ার ইন হোটেলে কথা বলতে শুরু করেন। থেমে থেমে, কান্নায় ভেঙে পড়ে, ক্যাপের আড়ালে মুখ লুকিয়ে ১৩ মিনিটে ১৬ বছর ক্যারিয়ারের ইতি টানার ঘোষণা দেন তামিম।
এসময় কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি তামিম। তবে অবসরের পেছনে ‘ভিন্ন ভিন্ন’ কারণ থাকলেও সেগুলো বলার প্রয়োজন মনে করেননি বলে জানান। তবে তামিমের অবসরের সিদ্ধান্তের কারণ অনুমান করা যায় ঘটনা প্রবাহে নজর রাখলেই।
ফিটনেস ইস্যুতে এমনিতেই চাপে ছিলেন তামিম। এরপর অধিনায়কত্ব নিয়েও ছিল অনিশ্চয়তা। দুয়েকটি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তামিম সেটি নিজেই জানিয়েছেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এসেছে বোর্ড সভাপতির একটি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারের পর।
ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে এসে ‘পুরোপুরি ফিট না হয়েও’ খেলার কথা জানান তামিম। পরদিন পাপন বলেন, ‘এটা কি পাড়ার ক্রিকেট!’ তামিমের বক্তব্যে হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অসন্তোষের কথাও জানান পাপন। এ নিয়ে প্রায় আধঘণ্টা ‘চিল্লাচিল্লি’ করেছেন বলেন দাবি ছিল তার।
এমন মন্তব্যের পরও আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে খেলেন তামিম। সেখানে নিজে ও দল, কেউই ভালো করতে পারেনি। শেষ অবধি আচমকাই অবসরের ঘোষণা দেন। এই অবস্থায় বিসিবিকে পড়তে হয় বেশ কিছু বাস্তবতার সামনে।
২০২৩ বিশ্বকাপ ঘিরে দল দেখছে বড় কিছুর স্বপ্ন। সেখানে নেতা হিসেবে তামিমেরই থাকার কথা। ওই ধাক্কা সামলাতে পারলেও উদ্বোধনী ব্যাটার তামিমের অভাব হুট করে পূরণ করা সম্ভব ছিল না। সিরিজের মাঝপথে তামিমের সিদ্ধান্তে বিপত্তি আরও বাড়ে।
একদিনের ভেতরই তাদের অধিনায়ক বেছে নিতে হতো। তামিমের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানানোসহ ছিল আরও নানা বিষয়। সেসব জানাতে রাতে বোর্ড কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন পাপন। তখন তিনি জানান, ওয়ানডে তাদের অধিনায়ক তামিমই। তাকে সরাসরি না পাওয়ায় ভাই নাফিস ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগের কথাও জানানো হয়।
কিন্তু ওই আহ্বানেও সাড়া দেননি তামিম। শেষে দৃশ্যপটে হাজির হন মাশরাফি বিন মর্তুজা। আগের দিন ‘স্নাইপার’ বলে তামিমকে নিয়ে আবেগঘণ স্ট্যাটাস দেন তিনি। পরদিন তামিমকে নিয়ে যান গণভবনেও। যেখানে ছিলেন তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিক ইকবাল।
গণভবন থেকে বেরিয়ে নিজের অবসর ভাঙার সিদ্ধান্তের কথা জানান তামিম। ইতি ঘটে প্রায় দুই দিনের নাটকীয়তার। তামিমের ফেরায় স্বস্তি প্রকাশ করেন বিসিবি সভাপতি পাপনও। তবে তার ফেরা দলের অস্বস্তি বাড়ায় কি না, তামিম ব্যর্থ হলে আরও সমালোচনার মুখে পড়বেন কি না এমন আরও অনেক প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে এখন।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২৩
এমএইচবি/আরইউ