রিতু মনি বলটা ঠেলে দিলেন স্কয়ার লেগে। এরপরই তিনি শুরু করলেন দৌড়, সঙ্গী নাহিদা আক্তার প্রান্ত বদল করতেই নিশ্চিত হলো জয়।
উচ্ছ্বাস খুব বেশি দেখা গেল না বাংলাদেশের ডাগ-আউটেও। কেবল হাসিমুখ আর ম্যাচের পর খুনসুঁটি। আগের ম্যাচে জয়ের দারুণ সুযোগ ছিল। ৯৭ রান তাড়া করতে পারলে সম্ভব ছিল সিরিজ জয়ও। উদযাপন না করার কারণটা কী? ম্যাচশেষে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি জানালেন, কাজ এখনও অনেক বাকি।
তিনি বলেন, ‘দেখেন অবশ্যই আমরা অনেক খুশি। এই মাঠে অনেকদিন পরে জয়। যদি আপনারা দেখে থাকেন ভারতের সঙ্গে সবসময় ক্লোজ ম্যাচ হয়। আমরা যে উপভোগ করিনি তা না, আমরা খুশি। কিন্তু আমরা চাইনি যে...আরেকটু ভালো খেললে সিরিজ জেতা হতো। এটা একটা বিষয় ছিল। দ্বিতীয়ত অনেক এখনও অনেক বাকি আছে। এজন্য আসলে ওরকম উদযাপন হয়নি। উদযাপনের একটা পরিপূর্ণতা তো আছে, একটা ম্যাচ খেলেই না। ইন শা আল্লাহ সামনে আমাদের ফরম্যাট আসছে। ওখানে ভালো কিছু হলে ওভাবে উদযাপন করবো। ’
সিরিজ জয়ের আফসোস নিয়ে জ্যোতি বলেন, ‘আপনাদের আক্ষেপ কতটুকু চিন্তা করেন। আমাদের এর চেয়ে তিন গুণ বেশি। দেখেন আমার মনে হয় আজকে গত ম্যাচের থেকে ভালো ব্যাট করেছি। বোলিং তো নিয়মিত আমরা ভালো করছিই। শেষ (দ্বিতীয়) ম্যাচেও যে খারাপ ব্যাট করেছি তা না, কিন্তু হয়তো আমি যেখানে আউট হয়েছি, আমার ভুলের জন্য ম্যাচ হেরেছে। আমি সবসময় মনে করি, যার ব্যাটে-বলে লাগে বা লম্বা সময় থাকে মাঠে তার ম্যাচ শেষ করে আসা উচিত। ’
‘জুটিরও একটা ঘাটতি ছিল আমাদের ভেতরে। আজকে যেমন আমি-শামীমা মিডল অর্ডারে একটা জুটি করেছি। পরে শামীমা লম্বা সময় খেলেছে। ওই জিনিসটা দ্বিতীয় ম্যাচে করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু যেটা চলে গেছে সেটা আমাদের হাতে নাই। আজকে যেটা মনে হয়েছে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি, ইতিবাচক ক্রিকেট খেলেছি। আমাদের দলের জন্য অনেক বড় বুস্ট আপ হিসেবে কাজ করবে। সামনে যে ফরম্যাটে আমরা মোটামুটি ভালো খেলি। উইনিং একটা মোমেন্টাম তৈরি হয়েছে যেটা সাহায্য করবে। ’
আগের ম্যাচে ৯৭ রান তাড়া করতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার করেছে ১০৩ রান। জ্যোতি পার্থক্য দেখেন জুটি গড়ায়। এই ম্যাচের সেরা শামীমা সুলতানা খেলেছেন দারুণ ইনিংস। ১৭তম ওভারে আউট হওয়ার আগে এই উদ্বোধনী ব্যাটার ৩ চারে ৪৬ বলে করেন ৪২ রান। এরপর হন রান আউট। তার সঙ্গে ৩৬ রানের জুটি ছিল জ্যোতিরও।
এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় বলি, একটা টপ অর্ডার ব্যাটার যখন ১৪-১৫ ওভার অবধি বা ১০-১২ ওভার অবধি থাকে, তখন রান তাড়া অনেক সহজ হয়ে যায়। এই জিনিসটা আজকে শামীমা আপু অনেক ভালো করেছে। আমি উনার সঙ্গে ছিলাম, বারবার কথা বলছিলাম যে শামীমা আপু আপনি থাকেন। আমি জানি কীভাবে ম্যাচ বের করতে হয় আপনি টেনশন কইরেন না। আপনি আপনার শটসগুলো খেলেন, আমি আমারটা খেলছি। ’
‘প্রতি ওভারে যদি ৫-৬ করে সিঙ্গেলস নিতে পারি, কোনো না কোনো ওভারে ৮-১০ করে নিতে পারবো। আমার কাছে মনে হয় সমীকরণ এত জটিল ছিল না। আমরা করতে চাইও নাই করতে। সিঙ্গেলসের প্রতিই বেশি চিন্তা ছিল, ওটা ক্রিকেটটাকে সহজ করে দিয়েছে আমার মনে হয়। ’
গত এক বছরে মেয়েদের ক্রিকেটে বদলে গেছে অনেককিছুই। সিনিয়র ক্রিকেটাররা বাদ পড়েছেন, উঠে এসেছেন অনেকে। বাংলাদেশ এখন নিয়মিতই খেলছে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। এর সঙ্গে কি মানসিকতাও বদলে গেছে? এর সঙ্গে একমত অধিনায়ক জ্যোতিও। দলের মধ্যে জয়ের বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাওয়ার ইচ্ছের কথাও জানান তিনি।
জ্যোতি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় স্কিল কী? স্কিলের চেয়ে নলেজটা গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় হচ্ছে মানসিকতা তো অবশ্যই। আপনি যে কাউকে হারাতে পারবনে, যদি আপনার মানসকিতা শক্ত থাকে। মনে করেন এখন যদি আমি বিশ্বাস করি ভারতকে হারাতে পারব না, তাহলে আপনি কখনোই হারাতে পারবেন না। আপনার মস্তিষ্কে যদি জয়ের ইতিবাচক ব্যাপারটা যখন নিতে পারবেন, তখনই পুরো শরীর সেভাবে কাজ করবে। ’
‘আমি যখন থেকে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব পাই তখন থেকে একটাই লক্ষ্য ছিল, আমি জানি না ম্যাচ জিতব নাকি হারব, হওয়ার পর ম্যাচ হারব কী জিতব, সিরিজ জিতব কি না। আমার লক্ষ্য ছিল, নারী ক্রিকেটে যে একটা ব্র্যান্ড থাকে সংস্কৃতি, মানসিকতা থাকে যে আমরা বড় যেকোনো দলকে হারাতে পারব। ওটা পরিবর্তন করা। আমার মনে হয় ওটা নিয়ে কাজ করছি। সবার সঙ্গে কথা বলি, সবসময় খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমি বসি। সাধারণত ক্রিকেট নিয়ে বেশি কথা বলি। অন্য বিষয়ের চেয়ে ক্রিকেট নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করি বেশি, ভালো আবহ তৈরি করার জন্য। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৩
এমএইচবি/এএইচএস