ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

৩৮৮ রানের জবাবে ৩৮৩, রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার নিউজিল্যান্ডের

স্পোর্টস ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২৩
৩৮৮ রানের জবাবে ৩৮৩, রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার নিউজিল্যান্ডের

জমজমাট 'ট্রান্স-তাসমান লড়াই' দেখলো ক্রিকেটবিশ্ব। আগে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালিয়ে রানের পাহাড় গড়েছিল অস্ট্রেলিয়া।

প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডও ছেড়ে কথা বলেনি। জিততে হলে ইতিহাস গড়তে হবে জেনেও শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করেছে তারা। তবে শেষ পর্যন্ত জয়টা ছিনিয়ে নিল অজিরাই।  

২০২৩ বিশ্বকাপের ২৭তম ম্যাচে আজ ধর্মশালায় ৫ রানে জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আগে ব্যাট করে ট্রাভিস হেডের বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরিতে ভর করে ৩৮৮ রানের পাহাড় গড়ে তারা। জবাবে পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করে ৯ উইকেটে ৩৮৩ রান তুলেছে কিউইরা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এত রান করে এর আগে কোনো দল হারেনি। এই আসরেই হায়দরাবাদে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৪৪ রান তুলে হেরেছিল শ্রীলঙ্কা। সেই রেকর্ড ভাঙল এই ম্যাচেই।  

৩৮৯ রানের মতো বিশাল লক্ষ্যে নেমে টপ অর্ডারে রান দরকার। এরপর চাই ছোট ছোট ক্যামিও। নিউজিল্যান্ড সবই পেয়েছে। শুধু জয় ছাড়া। ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র খেলেছেন ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। তার সেঞ্চুরিতে ভর করেই ৪০ ওভার পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার (২৯২/৫) সঙ্গে সমানতালে লড়ে গেছে নিউজিল্যান্ড। দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে (২৮) ও উইল ইয়ং (৩২) টিকতে না পারলেও রবীন্দ্র একাই টেনে গেছেন অনেকটা সময়। তাকে ভালোই সঙ্গে দিয়েছেন ডেরিল মিচেল (৫৪)।

নিউজিল্যান্ড পথ হারায় অসময়ে গ্লেন ফিলিপস (১২) ও টম ল্যাথাম (২১) বিদায় নিলে। চাপের মুখে রবীন্দ্রও আর টানতে পারেননি। ৮৯ বলে ১১৬ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন তিনি। দারুণ এই ইনিংসটি খেলার পথে তিনি হাঁকান ৯টি চার ও ৫টি ছক্কা। সেট ব্যাটারের অভাবে তারা টের পেয়েছে শেষ ১০ ওভারে। তবে একপ্রান্তে লড়াই জারি রেখেছিলেন জিমি নিশাম। দেখেশুনে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে ফিফটি তুলে নেওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যটাকে হাতের লাগালে আনার চেষ্টা করেন তিনি।  

শেষ ওভারে ১৯ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ডের সামনে। মিচেল স্টার্কের করা ওই ওভারের দ্বিতীয় বলে ওয়াইড ও বাউন্ডারিতে ৫ রান উপহার পায় নিউজিল্যান্ড। পরের দুই বলে দারুণ ফিল্ডিংয়ে বাউন্ডারি বাঁচিয়ে ৪ রান দেয় অস্ট্রেলিয়া। পঞ্চম বলে নিশাম (৩৯ বলে ৫৮রান) রানআউট হয়ে ফিরলে শেষ হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের সব আশা।  

বল হাতে অস্ট্রেলিয়ার দুই পেসার জশ হ্যাজেলউড ও প্যাট কামিন্স পেয়েছেন ২টি করে উইকেট। লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা ৩টি ও ম্যাক্সওয়েল ১টি উইকেট তুলে নিয়েছেন। তবে এই প্রথম কোনো বিশ্বকাপ ম্যাচে উইকেট পেলেন না ফাস্ট বোলার স্টার্ক। ৯ ওভারে ৮৯ রান খরচ করেছেন তিনি। শুধু কি তাই, তিনি একাই ওয়াইড থেকে দিয়েছেন ১৭ রান! তবে শেষ ওভারে জয়ের নায়ক অবশ্য এই বাঁহাতি ফাস্ট বোলারই।

এর আগে টস জিতে অজিদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় নিউজিল্যান্ড। তাদের এই সিদ্ধান্ত যে ভুল, তা শুরু থেকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন দুই অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড। দুজনের জুটিতে আসে ১৭৫ রান। শুরু থেকেই কিউই বোলারদের ওপর চড়াও হন হেড। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ম্যাট হেনরির করা টানা দুই নো বলে ফ্রি হিট পেয়ে ছক্কা মারেন তিনি। পরে ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা এই ব্যাটার মাত্র ৫৯ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপে এটি তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। এর আগে মাত্র ২৫ বলে ফিফটি হাঁকান তিনি, যা বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে দ্বিতীয় দ্রুততম।

হেড ঝড় তুললেও কম যাননি ওয়ার্নার। ঝোড়ো এক ইনিংস খেলেছেন এই বাঁহাতি ওপেনার। নিউজিল্যান্ডের ফিল্ডাররা অবশ্য দুইবার ওয়ার্নারের ক্যাচ মিস করেছেন। যার খেসারত দিতে হয়েছে রানবন্যায় ভেসে। প্রথম ১৩ ওভারে ১১টি ছক্কা হজম করেছেন কিউই বোলাররা। ওয়ার্নার মাত্র ৬৫ বলে ৫ চার ও ৬ ছক্কায় ৮১ রান করে কিউই পেসার গ্লেন ফিলিপসের বলে আউট হন। হেডও সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বেশিদূর যেতে পারেননি। ৬৭ বলে ১০৯ রান করে ফিলিপসের বলেই বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ১০টি চার ও ৭টি ছক্কায় সাজানো তার ইনিংসটিই অজিদের ইনিংসের মূল ভিত্তি। এরপর বাকিরা সেই ভিত্তির ওপর গড়েন বিশাল সংগ্রহ। মিচেল মার্শ (৩৬), স্টিভেন স্মিথ (১৮) ও মার্নাস লাবুশেন (১৮) ঝড় তুলতে না পারলেও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ক্রিজে এসেই তাণ্ডব চালান।

মাত্র ২৪ বলের মোকাবিলায় ৪১ রান করে কিউই পেস অলরাউন্ডার জিমি নিশামের বলে আউট হন ম্যাক্সওয়েল। স্বল্পস্থায়ী ইনিংসটি ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজানো। তবে তার বিদায়েও অস্ট্রেলিয়ার রানের চাকায় বাঁধ সাধতে পারেনি কিউইরা। উইকেটকিপার-ব্যাটার জশ ইংলিস ২৮ বলে করেছেন ৩৮ রান। শেষদিকে অধিনায়ক প্যাট কামিন্স মাত্র ১৪ বলে ৩৭ রান করে সংগ্রহটাকে নিয়ে ৪০০ ছুঁইছুঁই দূরত্বে। ব্যাট হাতে ৪টি ছক্কা ও ২টি চারে ইনিংসটি সাজান কামিন্স। কিন্তু তারপরও ৫০ ওভার পূর্ণ করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। অলআউট হয়েছে ৪ বল হাতে রেখেই।

বল হাতে নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট ও গ্লেন ফিলিপস তুলে নেন ৩টি করে উইকেট। এছাড়া স্পিনার মিচেল স্যান্টনার ২টি এবং ১টি করে উইকেট নেন ম্যাট হেনরি ও নিশাম।

এবারের আসরে এ নিয়ে ৪ ম্যাচ জিতলো অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ড হারল টানা দুই ম্যাচে। সমানসংখ্যক জয় নিয়ে দুই দলেরই পয়েন্ট সমান ৮ করে। তবে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় তিনে অবস্থান নিউজিল্যান্ডের। অস্ট্রেলিয়া আছে চারে। শীর্ষে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার ৬ ম্যাচে অর্জন ১০ পয়েন্ট। সমান জয়ে ১০ পয়েন্ট ভারতেরও। তবে নেট রানরেটে এগিয়ে প্রোটিয়ারা। ভারত অবশ্য এক ম্যাচ কম খেলেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২৩
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।