অর্থাৎ এক বলে বাঁহাতি ওয়াসিম আকরাম, ঠিক পরের বলেই ডানহাতি স্টেইন। উইকেটে থাকা ব্যাটসম্যান কি করবেন? ঠিক এমনই কিন্তু অন্যরকম এক প্রতিভা পেয়েছে পাকিস্তান।
বর্তমানে ইংল্যান্ডের মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবে (এমসিসি) নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন ইয়াসির। ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে জন্ম নেওয়া এই বিস্ময় বালক ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ‘ক্রিকইনফো’তে নিজের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড যদি সত্যিই তাকে সুযোগ করে দেয় তাহলে পাকিস্তানি অধিনায়ক এক সদস্যের কাছ থেকে পাবেন ডানহাতি-বাঁহাতি গতির ঝড়।
ডান হাতে পেস বোলিংয়ে ইয়াসির ১৪০ কিলোমিটার বেগের বেশি গতিতে বল ছুঁড়তে পারেন। আর বাঁহাতে তার বোলিং গতি ১৩৫ কিলোমিটার। তার বাঁ-হাতের বল করার ধরন কিছুটা স্বদেশী তারকা মোহাম্মদ আমিরের মতো। আর ডানহাতের বলের বাউন্স ও নিখুঁত লাইন লেন্থ দক্ষিণ আফ্রিকার সেনসেশন ডেল স্টেইনকে মনে করিয়ে দেয়।
যদিও ক্রিকেটে এর আগে দুই হাতে বল করতে দেখা গেছে। তবে ইয়াসিরের দুই হাতেই সমান গতি বিশেষ নজর কেড়েছে। ইয়াসির জানান, ‘আমার জীবনের প্রথম থেকেই আমি অনুশীলনে দুই হাতে বল করেছি। এমনকি আমি প্রতিটি বোলারকেই অনুকরণ করেছি। ২০০৩ বিশ্বকাপের সময় ওয়াসিম আর ওয়াকারকে দেখে আমি কপি করতে শুরু করি। দিনের পর দিন তাদের কপি করে আমি সবার চোখে পড়েছি শেষ পর্যন্ত। আমার পরবর্তী টার্গেট জাতীয় দলে সুযোগ করে নেওয়া। খুব শিগগিরই জাতীয় দলের জার্সিটা গায়ে চাপাতে চাই। ’
পাকিস্তান সুপার লিগের দল লাহোর কালান্দার্সের ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামের আবিষ্কার ইয়াসির। ২০১২ সালে রাওয়ালপিন্ডি অনূর্ধ্ব-১৬তে খেলা ইয়াসিরের সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তি করেছে দলটি। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা ইয়াসিরের পুষ্টির সমস্যা ছিল। লাহোর কালান্দার্স তার ফিজিক্যাল ফিটনেস সঠিকভাবে গড়তে যথেষ্ট খরচ করেছে। যেহেতু ক্রিকেট আইনে এমন বোলিংয়ে কোনো বাধা নেই, মুদি দোকানির ছেলে ইয়াসির পাকিস্তান জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছেন।
স্বপ্নের সীমা অতিক্রম করতে চান জানিয়ে ইয়াসির আরও জানিয়েছেন, ‘আমি একটা মঞ্চ পেয়েছি। কঠোর পরিশ্রম করে আমার দেশ পাকিস্তানের হয়ে খেলার লক্ষ্য অর্জন করতে চাই। বিশ্বের সেরা মাঠে সেরা খেলোয়াড়দের সাথে আর বিপক্ষে খেলতে চাই। এটাই আমার লক্ষ্য ও স্বপ্ন। ’
উল্লেখ্য, ইংলিশ ক্রিকেটার গ্রাহাম গুচ দুই হাতেই মিডিয়াম পেস বল করতে পারতেন। শ্রীলঙ্কার সাবেক ব্যাটসম্যান হাশান তিলকরত্নেও দুই হাতে বল করতে পারতেন। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিপক্ষে ইনিংসের শেষ ওভারটি তিনি দুই হাতে করেছিলেন। সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা জিতেছিল। যুব বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে দুই হাতে বোলিং করেছিলেন শ্রীলঙ্কার কামিন্ডু মেন্ডিস। পাকিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে একই ওভারে কখনো তিনি ছিলেন ডানহাতি বোলার, কখনো বাঁহাতি!
গত বছর ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে দুই হাতে বোলিং করে বেশ আলোড়ন ফেলেছিলেন অক্ষয় কারনেওয়ার। ভারতের সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে কারনেওয়ার করেছেন এমনটা। এছাড়া, চলতি বছর বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নেমে ডানহাতি স্পিনার কারনেওয়ার দু’হাতে অফ-স্পিন ও লেফট আর্ম স্পিন বল করেছিলেন।
বাংলাদেশেও আছে এমন চমক জাগানিয়া বোলার। ২০১৭ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাম-ডান, দুই হাতেই বল করে চমকে দেন নারী জাতীয় দলের তারকা শায়লা শারমিন। কোন হাতে বল করলে কাজ হবে বেশি, তা দেখেই বল করেছিলেন শায়লা। তাতে বেশ সফলও হয়েছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ২৮ নভেম্বর ২০১৭
এমআরপি