ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

হাতে একতারা, মনে তার ক্রিকেট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
হাতে একতারা, মনে তার ক্রিকেট ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মিরপুর থেকে: ক্রিকেটের মাঠে কত রকমের দর্শকই তো আসে। নানা সাজে, নানা রঙে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার প্রায় দর্শকশূন্য ম্যাচে শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেল একতারা হাতে এক ক্রিকেট প্রেমি ঘুরে ঘুরে গান গাইছেন।

কখনো আবার গান থামিয়ে একতারা বাজিয়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের উৎসাহ দিয়ে বলছেন, ‘গ্যাপে গ্যাপে মার, চাইর মার, ছয় মার। ফাটিয়ে দে।

কখনো আবার অট্টহাস্যে হাসছেন। তার এমন মজার কাণ্ড দেখে হাসিতে ফেটে পড়ছে গ্যালারির দর্শকরাও।

একজন বাংলাদেশি হয়েও জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যানদের পরামর্শ তো দিচ্ছেনই তাদের হাঁকানো বাউন্ডারি ওভার বাউন্ডারিতেও দিচ্ছেন হাততালি। কখনো আবার মাশরাফি, ‍মোস্তাফিজদের বাতলে দিচ্ছেন কীভাবে বল করলে উইকেট মিলবে। মানে বুঝতে বাকি রইলো না তিনি একজন সত্যিকারের ক্রিকেট প্রেমি। হাতে একতারা, মনে তার ক্রিকেট।

তাই কথা বলার লোভ সামলানো গেল না। নাম জানতে চাইলে একতারা বাজাতে বাজাতে বেশ গর্ব করেই বললেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্দ নূর বক্স। ’ বাড়ি তার ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার ডুমুরতলা গ্রামে। বয়স ৬৫ ছুঁই ছুঁই। তীক্ষ্ম চোখা কৃষ্ণ বর্ণের এই মানুষটি বলার মতো কোনো পেশার সাথে সম্পৃক্ত নন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যে ভাতা পান তা দিয়েই তার চলে যায়। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমত্রিদেশীয় সিরিজ দেখতে ঢাকা আসবেন সেকথা স্ত্রীকে বললে তিনি আসতে দেবেন না, গালমন্দ করবেন। তাই মিথ্যে বলেই ঢাকায় ছুটে এসেছেন নূর বক্স, ‘আমার বাড়িওয়ালা (স্ত্রী) আমাকে আসতে দিতে চায় না। তাকে মিত্যে বলে চইলে এইসছি। ’ এর আগেও যতবার আসতে চেয়েছেন ততবারই তার বাড়িওয়ালা বাধ সেধেছেন। রেগে গিয়ে কতবার তার সাধের একতারা ভেঙেছেন তার নাকি ইয়ত্তা নেই।

তবে শুধু দেশের মাটিতেই নয়। ক্রিকেট প্রেমি নূর বক্স বাংলাদেশের খেলা দেখতে গেল বছর ছুটে গেছেন শ্রীলঙ্কায়। ভিসা, পাসপোর্টের জন্য টাকা ছিলো না। তাতে সাহায্যে হাত বাড়িয়েছেন ঝিনাইদহ ৩ আসনের সাংসদ নবী নেওয়াজ।

সেখানে থাকা গিয়ে খাওয়া বাবাদ সাথে পর্যাপ্ত টাকা তার ছিল না। তাই বেশির ভাগ সময় ছিলেন রাস্তায়। সেখানেই ঘুমিয়েছেন। মানুষের কাছে চেয়ে চিন্তে যা পেয়েছেন তাই খেয়েছেন এই নিখাঁদ ক্রিকেট প্রেমি। ‘রাস্তায় থেইকেছি। কেউ কিছু বলেনি। সেই সময়তো আমের সময় তাই আম খায়েছি, আর ঘুরে বেড়ায়ছি। গাছ থেকে রাস্তায় পইরে থাকা পাকা আম পায়েছি আর খায়েছি। ’

বিদেশ বিভুঁইয়ে প্রথমবারের মতো গিয়েও ভয়ডর বলতে তার কিছুই ছিল না। তবে ব্যতিক্রম ছিল কুকুর। ‘যে বাড়ি যাবা সে বাড়িই কুত্তা। তা ছাড়া কোনো ভয় নাই। ’

আপাদমস্তক ক্রিকেট প্রেমি এই মানুষটি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ভীষণ ভালবাসেন। স্বপ্ন দেখেন একদিন বিশ্বকাপ জিতবে টাইগাররা। ‘বাংলাদেশ যেভাবে খ্যালছে খ্যালার মান আর একটু ভাল হলি বিশ্বকাপ আমাদের অনায়াসে আসপে ইনশাল্লাহ। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮
এইচএল/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।