বাংলাদেশের দেওয়া ২৮০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটের বিনিময়ে ২৩১ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
মাশরাফি ১০ ওভার বল করে ৩৭ রানের বিনিময়ে তুলে নিয়েছেন ৪ উইকেট।
অথচ দিনের শুরুতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের ৪৮তম ওভার শেষে সংগ্রহ ছিলো ৩ উইকেটে ২৩৬ রান। বলার অপেক্ষা রাখে না গেইল, লুইস, আন্দ্রে রাসেলদের মতো ব্যাটিং লাইনআপের সামনে এ সংগ্রহ যতসামান্যই ছিল বটে!
কিন্তু ৪৯তম ওভারে জ্বলে উঠলো মুশফিকুর রহিমের ব্যাট। ওই ওভারে আসে ২২ রান। আর ৫০তম ওভারে ঝড় তুললেন তামিম। এলো আরও ২১ রান। শেষ দুই ওভারের ৪৩ রানের সুবাধে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৪ উইকেটের বিনিময়ে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৭৯ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় সফরকারী বাংলাদেশ। যা এ পর্যন্ত দেশটির বিপক্ষে তাদের মাটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
মুশফিক অবশ্য শেষ করে আসতে পারেন নি। ৫০তম ওভারে আন্দ্রে রাসেলের ৫ম ডেলিভারিটি প্যাডেল সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগ অঞ্চলে ধরা পড়েন দেভেন্দ্র বিশুর হাতে। আউট হওয়ার আগে ১১ বলে খেলে দিয়ে গেছেন ৩০ রানের মহামূল্যবান এক ইনিংস।
তমিম ইকবালকে অবশ্য কেউই আউট করতে পারেননি। অপরাজিত থেকেছেন ১৩০ রানে। এ রান সংগ্রহে তিনি খেলেছেন ১৬০ বল। গায়নাতে এসেই ওয়ানডেতে নিজের ১০ম সেঞ্চুরির দেখা পেলেন টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। এ শতক তুলে নিতে তিনি বল খেলেছে ১৪৬টি। যেখানে চারের মার ৮টি ও ছয়ের ১টি।
রোববার (২২ জুলাই) গায়নায় স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানেডেতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ১ রানে জ্যাসন হোল্ডারের বলে স্লিপে ধরা পড়েন ওপেনার এনামুল হক বিজয়। রানের খাতা না খুলেই ফিরে যান সাজঘরে।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ইকবালের সঙ্গে দলের হাল ধরেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। কিছুটা ধীর গতির ব্যাটিংয়ে দলকে ২শ রানের গণ্ডি পার করে দেন এ দুই টপ অর্ডার। তামিমের মতো উইকেটের অপর প্রান্তে নির্ভার ব্যাট চালিয়ে ক্যারিয়ারের ৮ম শতকের খুব কাছে গিয়েও ফিরে যান সাকিব। ব্যক্তিগত ৯৭ রানে দেভেন্দ্র বিশুর বলে ধরা পড়েন হেটমায়ারের হাতে।
অবশ্য এ রান সংগ্রহে তিনি দুবার জীবন পান। প্রথমবার আলজেরি জোসেফের বলে স্লিপে ক্যাচ ফেলেন গেইল। দ্বিতীয়বার দেবেন্দ্র বিশুর বলে স্কয়ার লেগে ক্যাচ ছাড়েন শিমরন হেটমায়ার।
সাকিব ফিফটির দেখা পান ২৭তম ওভারে শেষ বলে। যা করতে তাকে খেলতে হয় ৮৯ বল। এটি ছিলো তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৮তম হাফ সেঞ্চুরি। আর তামিম ইকবাল ৪২তম অর্ধশতকের দেখা পান সাকিবের এক ওভার আগে। যা সংগ্রহ করতে তিনি খেলেন ৮৯ বল।
তাদের অনবদ্য ব্যাটিংয়ের দিনে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড হয়েছে। যা এতদিন একচ্ছত্র দখলে রেখেছিলেন ইমরুল কায়েস ও জুনায়েদ সিদ্দিকী। ২০১০ সালের ২১ জুন এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে ১৬০ রান করেছিলেন ওই দুই টাইগার টপ অর্ডার। এর ৮ বছর পর এসে রেকর্ডটিতে ভাগ বসালেন সাকিব ও তামিম।
এদিন তিন নম্বরে নামা সাব্বির রহমান অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৩ রানে দেভেন্দ্র বিশুর বলে শেই হোপেরর হাতে স্ট্যাম্পড হয়ে ফিরে যান। ৫০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটের বিনিময়ে ২৭৯ রান।
বল হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দেভেন্দ্র বিশু ২টি এবং আন্দ্রে রাসেল ও জ্যাসন হোল্ডার ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।
জবাবে জয়ের জন্য ২৮০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিলেন দুই ওপেনার ক্রিস গেইল ও এভিন লুইস। দুজনের বোঝপড়ায় সিঙ্গেলস, ডাবলস ও বাউন্ডারিতে বড় জুটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ইনিংস। কিন্তু হঠাৎই খেই হারালেন লুইস।
নবম ওভারে মাশরাফির চতুর্থ বলে মিড অফে উঠিয়ে দেয়া বল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তালুবন্দি করেন। ফলে ব্যক্তিগত ১৭ রানে ফিরে যান এ ওপেনার। দ্বিতীয় উইকেটের শিকারি রুবেল হোসেন। নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন শেই হোপকে। তিনি করেন ৬ রান।
এরপর ২২তম ওভারে রান আউট হন ‘দানব’ গেইল। ওই ওভারে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের তৃতীয় বলটি শিমরন হেটমেয়ার শর্ট থার্ডম্যানে ঠেলে দৌড়ের সংকেত না দিলেও ক্রিজের ওই প্রান্ত থেকে দৌড়ে পিচের মাঝ বরাবর চলে আসেন গেইল। ফল যা হবার তাই হয়েছে, ফিল্ডার বল সরাসরি মোসাদ্দেকের হাতে দিলে তিনি তা স্ট্যাম্পে ছুঁড়ে দেন এবং ব্যক্তিগত ৪০ রানে গেইলের খাতা বন্দ হয়ে যায়।
চতুর্থ ব্যাটসম্যান জ্যাসনকে ১০ রানে মেহেদি হাসান মিরাজের বল থেকে থেকে স্ট্যাম্পড করেন মুশফিকুর রহিম।
এরপর ক্যারিবিয়ানদের ধ্বংসের মিশনে মেতে ওঠেন টাইগার কাটার স্পেশালিস্ট মোস্তাফিজুর রহমান। পানি পানের বিরতির পর ৩৬তম ওভারে এসে নিজের দ্বিতীয় বলেই সেট ব্যাটসম্যান শিমরন হেটমায়ারকে ব্যক্তিগত ৫২ রানে কাভার অঞ্চলে সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দিতে বাধ্য করেন।
ঠিক তার পরের বলেই রভম্যান পাওয়েলকে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে পাঠিয়ে দাঁড়ান হ্যাটট্রিকের সামনে। অবশ্য আন্দ্রে রাসেল বলটি খুব সতর্কভাবে খেললে হ্যাটট্রিক বঞ্চিত হন কাটার মাস্টার।
এক ওভার বিরতিতে এসে মোস্তাফিজের সঙ্গে ধ্বংসযজ্ঞে শামিল হন অধিনায়ক মাশরাফি। একে একে ফেরান অধিনায় জ্যাসন হোল্ডার (১৭), মারকুটে আন্দ্রে রাসেল (১৩) ও অ্যাশলে নার্সকে (৭)। অমনি জয়ের সুবাস বইতে শুরু করে লাল সবুজের শিবিরে।
এরপর ৪৮তম ওভারে শেষ আঘাতটি হানতে চেয়েছিলেন রুবেল। কিন্তু মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত দেভেন্দ্র বিশুর সহজ ক্যাচটি নিতে না পারায় আর কোনো উইকেটের পতন হয়নি। দশম উইকেটে ৫৯ রানের জুটি এনে দিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ২৩১ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলাফল বাংলাদেশ ৪৮ রানে জয়ী। আলজারি জোসেফ ও দেভেন্দ্র বিশু ২৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। ঝলমলে ইনিংসের জন্য ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন তামিম ইকবাল।
সিরিজের পরের ম্যাচ বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টায় অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪১৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৮
এইচএল/এসএইচ