আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছেন ১৫ বছর। তবু দক্ষিণ আফ্রিকা তথা বিশ্ব ক্রিকেটের প্রতিটি পরতে পরতে মিশে আছে রোডসের নাম।
১৯৯২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সিডনিতে দেশের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ ম্যাচে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় জন্টির। একই বছর নভেম্বরে সাদা পোশাকেও অভিষেক হয় তার।
তার সম্পর্কে চমকে যাওয়ার মতো কিছু রেকর্ড আছে বিশ্ব ক্রিকেটে। ২০০৫ সালে ক্রিকইনফো রিপোর্ট অনুসারে, ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে নয়া রেকর্ড গড়েন জন্টি রোডস। একদিনের ক্রিকেটে সর্বকালের নবম সর্বোচ্চ সংখ্যক রান আউট করেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তার সাফল্যের হার ক্রিকেট বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ হিসেবে বিবেচিত হয়।
১৯৯৩ সালের ১৪ নভেম্বর ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৫টি ক্যাচ লুফে আবারও বিশ্বরেকর্ড গড়েন রোডস। ক্রিকেট ইতিহাসে উইকেটরক্ষক ছাড়া এ রেকর্ড কোনও ফিল্ডারের নেই।
দ্বিতীয় স্ত্রী মেলানির ঘরে এক কন্যাসন্তানের বাবা হন রোডস। মেয়ের জন্ম হয় ভারতের মুম্বাইয়ে। ভারতে জন্ম বিধায় ভালোবেসে তার নাম রাখেন ‘ইন্ডিয়া’।
ক্রিকেট মাঠ থেকে অবসর নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে অ্যাকাইন্টস একজিকিউটিভ পদে যোগ দেন রোডস। এ পদের পাশাপাশি সংস্থাটির মার্কেটিং বিভাগও সামলাচ্ছেন তিনি।
ব্যাটিং-বোলিং এর ক্ষেত্রে সেরা বাছাই করতে নানান মানুষের মধ্যে নানান মত থাকলেও টপ ফিল্ডারের ক্ষেত্রে ক্রিকেট প্রেমিদের একক ভোটেই সেরা নির্বাচিত হবেন রোডস।
একজন দক্ষ ফিল্ডার হতে গেলে অনেকগুলো গুণের প্রয়োজন হয়। তবে এর মাঝেও আলাদাভাবে তিনটি গুণের কথা বলা যায়; বলের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ার ক্ষমতা, ক্যাচ নেওয়ার ক্ষমতা আর বল ধরে থ্রো করার ক্ষমতা। আর এ তিনটি বৈশিষ্ট্য নিয়েই যেন রোডসের জন্ম। প্রকৃতি প্রদত্ত না হলে তার মতো ক্ষিপ্রতা কতটা সম্ভব এমন প্রশ্ন আসবেই।
ফিল্ডিংয়ে তার প্রিয় পজিশন ছিলো পয়েন্ট, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট কিংবা গালি অঞ্চল। এসব অঞ্চলে বল পাঠিয়ে রান নেওয়ার কথা খুব কম ব্যাটসম্যানই চিন্তা করতেন। এমনকি তার মাথার উপর দিয়ে কিংবা আশপাশ দিয়ে শূন্যে ভাসিয়ে বল পাঠানোর আগেও কয়েকবার চিন্তা করতেন তারা। কারণ তারা জানতেন, সাধারণ কোনো ফিল্ডারের চোখ বা হাতকে ফাঁকি দেওয়া গেলেও রোডসকে ফাঁকি দেওয়া কষ্টের।
জন্টি রোডসই ক্রিকেট বিশ্বের একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি শুধুমাত্র তার ফিল্ডিং দক্ষতা দিয়েই দলে নিজের জায়গা শক্ত করে রেখেছিলেন। তার ব্যাটিং বা বোলিং নিয়ে প্রশ্ন করারও কেউ ছিলো না। প্রথম ২৫টি ওয়ানডে ম্যাচ শেষে তার ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ২৪.৯৫, কোনো পঞ্চোশোর্ধ ইনিংস ছিল না, ২০ রানের নিচেই আউট হয়েছেন ১৪ বার। কিন্তু এর পরেও দলে সুযোগ পাওয়া নিয়ে সমস্যা না হওয়ার কারণ তার ফিল্ডিং অন্তত ২০/২৫ রান আটকে দিতো প্রতিপক্ষের।
ক্রিকেটীয় দক্ষতার কারণে ১৯৯৯ সালের উইজডেনের বর্ষসেরা পাঁচ জন খেলোয়াড়ের একজন নির্বাচিত হন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ১৯৯২ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ৪টি বিশ্বকাপ খেলেন। ওয়ানডের আগেই ২০০০ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। ইনজুরিতে পড়ে ২০০৩ বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে থেকেও অবসরে যান এ কিংবদন্তি।
অবসর নেওয়ার পরে তিনি কিছুদিন আইপিএল আর বিভিন্ন জাতীয় দলের ফিল্ডিং এবং সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৮
এমকেএম/এসএইচ