এজবাস্টনে প্রথম টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে যখন কোহলি ব্যাট হাতে নামলেন গ্যালারির ইংলিশ দর্শকরা তাকে উদ্দেশ্য করে দুয়ো দিতে থাকে। কিন্তু সময় যত গড়ায় ইংলিশ দর্শকদের ততোই নির্জীব হয়ে পড়তে দেখা যায়।
২২৫ বলে ১৪৯ রানের কোহলীয় ইনিংসটিতে দুইবার জীবন পাওয়ার ঘটনাও আছে। তবে ইংলিশদের দেওয়া উপহার লুফে নিতে দেরি করেন নি ভারতীয় অধিনায়ক। শেষদিকে ৯, ১০ ও ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানের সঙ্গে জুটি গড়তে নিজে একাই তাদের চেয়ে তিনগুণ বল খেলেছেন। এতেই বুঝা যায় নিজের কাঁধে কতোটা দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিলেন তিনি।
২০০১ সালের পর কোহলিই একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি টেল এন্ডারদের সঙ্গে ১০০ বলের মোকাবেলা করেছেন অনায়াসে। এই সময়ে গড়ে তোলা জুটিতে আসা ১০৫ রানের ৯২ রান তার একারই। এই সময়ে বল হাতে সুইংয়ের জাদু দেখিয়েছেন ইংলিশ পেসার জেমস অ্যান্ডারসন। কিন্তু তাকে ভালভাবেই সামাল দিয়েছেন কোহলি।
তবে কোহলির এমন অসাধারণ ব্যাটিংয়ের দিনে কিছুটা মন খারাপ করতেই পারেন ২০ বছর বয়সী ইংলিশ বোলার স্যাম কুরান। বেচারা বল হাতে অবিশ্বাস্য সব স্পেল কাটিয়েছেন। শুরুতে ইংলিশদের বিপক্ষে বিগত ১৮ ইনিংসের মধ্যে প্রথম ওপেনিং জুটিতে ৫০ রান উঠে ভারতের। কিন্তু সুইং জাদুতে মুরালি বিজয়কে (২০) বিদায় করে ধ্বংসলীলা শুরু করেন কুরান।
কুরানের চাপেই কি না নিজেদের গুটিয়ে ফেলেন কেএল রাহুল (৪) ও শিখর ধাওয়ান (২৬)। তবে তাতে কাজ হয়নি। উল্টো স্কোর ৫০/০ থেকে ৫৯/৩ হয়ে ভারতের। এরপর ক্রিজে আসেন ভারতীয় অধিনায়ক। শুরুতে তিনিও নড়বড়ে অবস্থায় ছিলেন। মধ্যাহ্ন বিরতির পর খেলা আরও জমে উঠে।
অ্যান্ডারসন কোহলির উইকেট পেতে মরিয়া হয়ে উঠেন, আর বেন স্টোকস বাকিদের। তাদের চাপেই ১০০ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। এটা ১০০ রানে ৭ উইকেটও হতে পারত যদি স্লিপে দাঁড়ানো ডেভিড মালান আর অ্যালিস্টার কুক যদি কোহলি আর হার্দিক পান্ডিয়ার (২২) ক্যাচ না ফেলতেন।
কোহলি অবশ্য ৫১ রানে আবারও ক্যাচ তুলে দিয়েও বেঁচে যান। এবার আবারও সেই মালানই ক্যাচ মিস করেন। তবে ক্যাচ মিসের এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজে সেঞ্চুরি যেমন বাগিয়ে নেন, তেমনি ১৬৯ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও দলকে টেনে নিয়ে যান ইংল্যান্ডের স্কোরের কাছাকাছি।
শেষ পর্যন্ত ২২ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ১৪৯ রান করে স্পিনার আদিল রশিদের বলে ব্রডের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে কোহলি যখন বিদায় নেন, দলের স্কোর তখন ২৭৪। ইংল্যান্ডের ২৮৭ রানের চেয়ে ১৩ রান কম।
ক্যারিয়ারের ২২তম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পথে ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারকে পেছনে ফেলেছেন তিনি। মাত্র ১১৩ ইনিংসে ২২তম সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি। সমান সেঞ্চুরি পেতে শচীনের লেগেছিল ১১৪ ইনিংস। তবে এই তালিকায় সবার প্রথম নামটি সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান স্যার ডন ব্যাডম্যানের (৫৮ ইনিংস)। তারপরের স্থানে আছেন যথাক্রমে সুনীল গাভাস্কার (১০১ ইনিংস) ও স্টিভেন স্মিথ (১০৮ ইনিংস)।
এদিকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৯ রান তুলতেই ওপেনার অ্যালিস্টার কুকের (০) উইকেট হারিয়ে ২২ রানের লিড নিয়েছে ইংল্যান্ড। ভারতীয় স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন ইংলিশদের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট রানের মালিক।
বল হাতে ইংলিশদের হয়ে আগুনে বোলিং করা কুরান ৭৪ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রিত সুইংয়ে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলে দেওয়া জেমস অ্যান্ডারসন পেয়েছেন ৪১ রানে ২ উইকেট। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন আদিল রশিদ আর বেন স্টোকস।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে অধিনায়ক জো রুট (৮০) আর জনি বেয়ারস্টোর (৭০) ব্যাটের উপর ভর করে ২৮৭ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। ভারতের হয়ে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন পেসার মোহাম্মদ শামি।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৮
এমএইচএম