শুনানিতে ২৭ বছর বয়সী স্টোকসের সঙ্গে মামলার বাদি রায়ান আলিও উপস্থিত ছিলেন। এই রায়ান আলিকে ঘুষি মেরে অজ্ঞান করে ফেলার অভিযোগ তোলা হয় স্টোকসের বিরুদ্ধে।
সোমবার (০৬ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া শুনানিতে হাজির হয়ে প্রথম দিনে স্টোকসের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ আনেন সরকারি কৌঁসুলি।
সরকারি কৌঁসুলি নিকোলাস করসেলিস শুনানিতে দাবি করেন, ঘটনার সময় বেন স্টোকস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় ছিলেন। তিনি আরও দাবি করেন, তিনি প্রতিশোধ নিতেই আক্রমণ করেন।
শুধু তাই না, সরকারি কৌঁসুলির বক্তব্যে উঠে আসে কিভাবে দুই ভুক্তভোগীকে মেরে আহত করেন স্টোকস। মারের চোটে রায়ান আলি ও রায়ান হেলস দুজনই অজ্ঞান হয়ে পড়েন বলেও জানান তিনি। স্টোকসের ঘুষিতে হেলস অজ্ঞান হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই হেলসকেও আঘাত করেন তিনি। তার আঘাতে হেলসের চোখের পাশের হাড় ভেঙে যায় বলে জানান সরকারি কৌঁসুলি।
কিন্তু আদালতের সামনে নিজের দোষ অস্বীকার করেন ইংলিশ অলরাউন্ডার। বরং তার পক্ষে ঘটনার দুই প্রত্যক্ষদর্শী বিলি ও’কোনেল ও কাই বেরি দাবি করেন, তাদের বিরুদ্ধে সমকামবিদ্বেষী মন্ত্যবের প্রতিবাদ করতে গিয়েই নাকি মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন স্টোকস। অর্থাৎ, নিছক আত্মরক্ষার জন্যই মারামারিতে জড়ান তিনি। একই দাবি করেন স্টোকসও।
মারমারির বর্ণনা দিতে গিয়ে স্টোকস বলেন, আলির হাতে একটি বোতল ছিল যা দিয়ে তিনি স্টোকসকে আঘাত করার হুমকি দেন।
আদালতে জুরির সামনে তিনি আরও বলেন, 'নিজের আত্মরক্ষা আর নিরাপত্তার জন্যই আমাকে এইসব করতে হয়েছিল। '
পরে স্টোকসের আইনজীবী গর্ডন কোল আদালতকে বলেন, তার মক্কেল নির্দোষ। এখন তাকে দোষী প্রমাণ করার দায়িত্ব সরকারি কৌঁসুলির। এদিকে কিছু তথ্য –প্রমাণের ঘাটতি নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান জুরিবোর্ডের সদস্যরা।
গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একদিনের ম্যাচে জয়ের পর ওই রাতেই পানশালায় যান ইংল্যান্ড দলের চার সদস্য-বেন স্টোকস, জো রুট, অ্যালেক্স হেলস এবং জনি বেয়ারস্টো।
ব্রিস্টলের ওই পানশালার বাইরে এক পর্যায়ে দুই ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে অশালীন আচরণ করেন স্টোকস। রায়ান আলি ও রায়ান হেলস নামের ওই ব্যক্তি তার আচরণের প্রতিবাদ করলে উত্তেজিত হয়ে তাদের প্রহার করেন স্টোকস, এমন অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।
এই ঘটনায় মামলা হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকেই নিজের ‘আত্মরক্ষা’র দাবির প্রতি অটল থাকেন ইংলিশ অলরাউন্ডার।
মঙ্গলবার (১৪ আগস্ট) শুনানির শেষ দিনে আলীকে মারার কথা অস্বীকার করেন স্টোকস। সেই সাথে ওই সময় সমকামিতা নিয়ে বাজে কিছু বলার কথা তিনি মনে করতে পারছেন না বলেও দাবি করেন। ঘটনার সময় মাতাল থাকার কথাও তিনি অস্বীকার করেন।
তবে ঘটনার আগে ব্রিস্টলের ওই পানশালায় তিন থেকে চারটি বিয়ার, ছয় পেগ ভদকা আর লেমোনেড এবং সামান্য পরিমাণে ‘ইয়েগারবোম্বস’ পানের কথা স্বীকার করেন স্টোকস।
এদিকে বাদি আলি, যার চোখে আঘাতের কারণে দৃষ্টিশক্তি কমে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে কোর্টের কাছে, তিনি নিজেও সমকামিতা নিয়ে বাগবিতণ্ডার কথা অস্বীকার করেন। তার দাবি, দুজন লোকের সঙ্গে ঝগড়া করছিলেন তারা। এরপর হুট করেই পানশালা থেকে স্টোকসকে তাদের দিকে তেড়ে আসতে দেখেন তারা। তারপর ওই মারামারির ঘটনা ঘটে।
এরপর স্টোকসের আইনজীবী আলীকে প্রশ্ন করেন যে, তার ক্লায়েন্ট (স্টোকস) একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি বলেই কি তাকে ফাসানো হচ্ছে?
ঘটনার দুই প্রত্যক্ষদর্শী বিলি ও’কোনেল ও কাই বেরি আদালতে সাক্ষ্য দিতে হাজির হননি। তাছাড়া তাদের আগের দেওয়া বয়ানেও স্টোকসকে নির্দোষ দাবি করা হয়েছিল।
শুনানি শেষে আদালত যথেষ্ট প্রমাণ আর সাক্ষীর অভাবে স্টোকসকে নির্দোষ হিসেবে রায় দেন। আর রায় ঘোষণার পর বাদিপক্ষের আইনজীবী টনি মাইলস বলেন, ‘এটা একটা সমাপ্তিতে পৌঁছেছে বলে আমার দুই মক্কেল খুশি হয়েছেন। তারা দুজন এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান। '
শুনানির কারণে স্টোকসের ক্যারিয়ার কয়েকদিনের জন্য থমকে গিয়েছিল। এই সময়ে লর্ডসে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের জয়ে মাঠে থাকা হয়নি তার। শনিবার (১৯ আগস্ট) থেকে শুরু হতে যাওয়া তৃতীয় টেস্টের দলেও রাখা হয়নি।
শুনানির ফল জানার পর ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) জানিয়েছে, শুনানি যেহেতু শেষ, এখন তারা স্টোকসের বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করবে। তাকে তৃতীয় টেস্টের দলে রাখার ইঙ্গিতও দিয়েছে ইসিবি।
উল্লেখ্য, যদি স্টোকসের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হতো, তাহলে ব্রিটিশ আইনে তার তিন বছরের সাজা হতে পারত।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৮
এমএইচএম