এশিয়ার পাঁচটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের সঙ্গে যোগ দিয়েছে বাছাই পর্ব থেকে আসা হংকং। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান আছে গ্রুপ ‘বি’-তে।
এশিয়া সেরা হতে প্রতিটি দলই তাদের সেরা দল পাঠিয়েছে আরব আমিরাতে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, দলগুলোর শক্তি ও দুর্বলতাগুলো।
বাংলাদেশ:
নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটে এশিয়া কাপ খেলতে নামা বাড়তি সুবিধা দেবে টাইগারদের। সবশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সীমিত ওভারের সিরিজ জয় বাড়তি আত্মবিশ্বাস দেবে মাশরাফি বিন মর্তুজাদের। এছাড়া এশিয়া কাপের শেষ তিন আসরের দুটিতেই ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা তো আছেই।
আরব আমিরাতের মাটিতে ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেটারদের। ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গে থাকতে পারেন লিটন দাস। জাতীয় লিগের দারুণ অভিজ্ঞতা আছে লিটনের। এছাড়া মিডল অর্ডারে আছেন মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। তার সঙ্গে সঙ্গী হতে পারেন মৌম্য সরকার বা মুমিনুল হক।
দলে আছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব, তার সঙ্গে থাকবেন আরেক অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ।
দলে আছেন মোহাম্মদ মিঠুন, আরিফুল হক, নাজমুল হাসান শান্তর মতো তরুণ। আছেন অনুর্ধ্ব-১৯ দলকে নেতৃত্ব দেওয়া মেহেদি হাসান মিরাজ, যিনি সময়ের সঙ্গে নিজেকে একজন শক্তিশালী অলরাউন্ডার প্রমান করছেন। পেস অ্যাটাক শক্তিশালী করতে আছেন মোসাতফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, আবু হায়দার রনির মতো বোলার। সাকিব ছাড়াও স্পিনার হিসেবে আছেন নাজমুল ইসলাম, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের মতো বোলার। আর আছেন মাশরাফির মতো অধিনায়ক। যিনি তার বিচক্ষনতায় ম্যাচের রুপ পাল্টে দিতে পারেন।
তবে সব কিছুর পরও সাকিব ও তামিমের আঙুলের ইনজুরি ভোগাতে পারে দলকে।
স্কোয়াড: মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস, মোহাম্মদ মিথুন, মুশফিকুর রহীম, আরিফুল হক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল ইসলাম অপু, রুবেল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান এবং আবু হায়দার রনি।
ভারত:
ছয়টি দলের মধ্যে পরিসংখ্যান ও দলীয় পারফরম্যান্সের দিক থেকে সবার থেকে এগিয়ে আছে ভারত। যদিও তাদের নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে বিশ্রামে রাখা হয়েছে। তার পরিবর্তে অধিনায়ক হিসেবে আছেন রোহিত শর্মা। দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও কে এল রাহুলের ব্যাট ইংল্যান্ড সিরিজে তেমন ছন্দে ছিল না।
তবে মিডেল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে ভারত বি দলের হয়ে মনিশ পান্ডে আশা জাগিয়েছেন বেশ। আরও আছেন আম্বাতি রাইডু। কেদার যাদব। এদের উপর আস্থা রাখতে পারে ভারত। দলে আছে মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো অভিজ্ঞ পিঞ্চ হিটার ও উইকেটরক্ষক। সাথে রাখা হয়েছে দীনেশ কার্তিক।
একমাত্র অলরাউন্ডার হিসেবে আছেন হার্দিক পান্ডিয়া। তার উপরে অনেক দায়িত্ব থাকবে। ইংল্যান্ড সফরেও দলের চাহিদার অনেকটাই পূরণ করেছেন, যার ফলে এশিয়া কাপে চার উপর চাপ বেশিই থাকবে। এছাড়া শক্ত বোলিং ইউনিট নিয়ে এশিয়া কাপে অংশ নিচ্ছে ভারত।
শুরুর দিকে কোহলির অভাব ভোগাতে পারে দুলকে। এছাড়া কোহলির বিচক্ষণ সিদ্ধান্তগুলোও পেছনে ফেলতে পারে ভারতকে।
স্কোয়াড: রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল, আম্বাতি রাইডু, মনিশ পান্ডে, কেদার যাদভ, এমএস ধোনি, দীনেশ কার্তিক, হার্দিক পান্ডিয়া, কুলদ্বীপ যাদভ, ইয়ুজভেন্দ্র চাহাল, অক্ষর প্যাটেল, ভুবনেশ্বর কুমার, জাসপ্রতি বুমরাহ, শার্দুল ঠাকুর ও খলিল আহমেদ।
পাকিস্তান:
বর্তমান টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাই এবারের এশিয়া কাপের ফেভারিট ভাবছেন। গেলো ২ বছরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে পাকিস্তানের ধারাবাহিকতা চোখে পড়ার মতো। তাই ওয়ানডে ফরম্যাটের এশিয়া কাপে পাকিস্তান এগিয়ে থাকছে। এছাড়া কন্ডিশনের সুবিধা তো থাকছেই। কারণ আরব আমিরাত নিজেদের হোম গ্রাউন্ড হিসেবেই ব্যবহার করে পাকিস্তান।
ওপেনার ফখর জামান আছেন দারুণ ফর্মে। তার নামের পাশে আছে ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি। তার সঙ্গে ওপেনিংয়ে আছেন ইমাম উল হক, যিনি জিম্বাবুয়ে সিরিজে নজর কেড়েছেন। তাদের ব্যাকআপ হিসেবে রাখা হয়েছে নতুন মুখ শান মাসুদকে।
মিডল অর্ডারে আছেন বাবর আজম, শোয়েব মালিক ও আসিফ আলীর মতো ব্যাটসম্যান। যারা বর্তমানে যেকোনো দলের জন্য ভীতির কারণ হতে পারেন। এদের সঙ্গে যোগ হতে পারেন হারিস সোহেল। দলে আছে ফর্মে থাকা দুই অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ ও মুহাম্মদ নওয়াজ।
এছাড়া সাদাব খান, হাসান আলী, মোহাম্মদ আমিরের মতো বোলারদের নিয়ে গড়া দল নিজেদের মাটিতে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী থাকবে এটা অনুমেয়ই।
স্কোয়াড: ফাখর জামান, ইমাম উল হক, বাবর আজম, শান মাকসুদ, সরফরাজ আহমেদ, শোয়েব মালিক, হারিস সোহেল, শাদাব খান, মোহাম্মদ নওয়াজ, ফাহিম আশরাফ, হাসান আলি, জুনায়েদ খান, উসমান খান, শাহিন আফ্রিদি, আসিফ আলি ও মোহাম্মদ আমির।
শ্রীলঙ্কা:
যদিও সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কা দলের ফলাফল খুব একটা ভালো নয়। তবু এশিয়ার এই দলকে সহজভাবে নেয়ার উপায় নেই। ওপেনার হিসেবে থাকা কুশল পেরেরা ও উপুল থারাঙ্গা দল যেকোনো দলের জন্য ভয়ের কারণ হতে পারে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ভালো ফর্মে নেই, কিন্তু তাদের দিনে তারা অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারেন।
দলে আছেন ম্যাথুস ও কুশল মেন্ডিসের মতো ব্যাটসম্যান। দলে আছেন দাসুন শানাকা ফর্মে থাকা ক্রিকেটার। থিসারা পেরেরা এশিয়া কাপ থেকে নতুন এক শুরু প্রত্যয় রাখতে পারেন। দিলরুয়ান পেরেরা অভিজ্ঞ লাসিথ মালিঙ্গা, সুরঙ্গ লাকমল, দুশমন্থা ক্যামেরাদের নিয়ে গড়া বোলিং ইউনিটও বেশ শক্তিশালী।
স্কোয়াড: অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ, কুশল পেরেরা, কুশল মেন্ডিস, উপুল থারাঙ্গা, শেহান জয়াসুরিয়া, থিসারা পেরেরা, দাসুন শানাকা, ধনঞ্জয় ডি সিলভা, আকিলা ধনঞ্জয়, দিলরুয়ান পেরেরা, আমিলা আপোনসো, কাসুন রাজিথা, সুরাঙ্গা লাকমল, দুশমন্থ চামিরা, লাসিথ মালিঙ্গা, শেহান জয়সুরিয়া ও নিরোশান ডিকভেলা।
আফগানিস্তান:
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো উন্নতি করেছে আফগানিস্তান। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দারুণ ফর্মে আছে পুরো দল। মোহাম্মদ শেহজাদ-ইশানুল্লাহ জানাত থাকবেন ওপেনিংয়ে। ব্যাকআপ হিসেবে রাখা হয়েছে তরুণ মুনির আহমেদকে। মিডল অর্ডারে আছে আসগর আফগান, নাজিবুল্লাহ জাদরান ও হাশমাতুল্লাহ শহীদির মতো ক্রিকেটার।
অলরাউন্ডার হিসেবে আছেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবী। বোলিং ইউনিটে একটি নামই যথেষ্ট, রশিদ খান! তার সঙ্গে ঘূর্নিঝড় তুলতে প্রস্তুত মুজিব উর রহমান। পেসার হিসেবে আছেন সাইদ সিরাজ-ওয়াফাদার।
স্কোয়াড: আজগর আফগান, মোহাম্মদ শাহজাদ, এহসানউল্লাহ জান্নাত, জাভেদ আহমাদি, রহমত শাহ, হাশমতউল্লাহ শহিদী, মোহাম্মদ নাবী, গুলবদিন নাইব, রশিদ খান, নাজিবউল্লাহ জাদরান, মুজিব উর রহমান, আফতাব আলম, সামিউল্লাহ শেনওয়ারি, মুনির আহমাদ, সায়েদ শিরজাদ, শারাফউদ্দিন আশরাফ ও ইয়ামিন আহমেদজাই।
হংকং:
যদিও হংকংয়ের স্কোয়াড নিয়ে খুব একটা আলোচনা নেই, তবুও বাছাই পর্ব থেকে উঠে আসা দল হিসেবে হিসেবে থাকবে হংকংও। আরব আমিরাতের মতো দলকে হারিয়ে মূল পর্বে উঠে আসা হংকংয়ের একাধিক ক্রিকেটার আছেন আলোচনায়। এদের মধ্যে আংশুমান রাথ ও নিজাকাত খান সম্প্রতি তাদের পারফরম্যান্স দিয়ে নজর কেড়েছেন।
স্কোয়াড: আংশুমান রাথ, আইজাজ খান, বাবর হায়াৎ, ক্যামেরুন ম্যাকেলসান, ক্রিস্টোফার কার্টার, এহসান খান, এহসান নওয়াজ, আরশাদ মোহাম্মদ, কিনচিত শাহ, নাদিম আহমেদ, নিজাকাত খান, রাগ কাপুর, স্কট ম্যাককেনি, তানভীর আহমেদ, তাম্ভীর আফজাল, ওয়াকাস খান ও আফতাব হুসেইন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৮
এমকেএম