ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ভারতের সাত নাকি বাংলাদেশের প্রথম?

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৮
ভারতের সাত নাকি বাংলাদেশের প্রথম? এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত/ছবি: সংগৃহীত

সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩৭ রানে হারিয়ে ফাইনালে পা রেখেছে বাংলাদেশ। ফাইনালে তাদের সঙ্গী এশিয়া কাপের ইতিহাসে রেকর্ড ছয়বারের শিরোপাজয়ী ভারত। অন্যদিকে তৃতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলছে বাংলাদেশ। এবারও জিতে কি সপ্তম শিরোপা ঘরে তুলবে ভারত, নাকি প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ পাবে টাইগাররা?

এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের সঙ্গী হিসেবে পাকিস্তানকেই ভেবে নিয়েছিলেন অধিকাংশ ক্রিকেটবোদ্ধা। তাছাড়া পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশ দলে ছিলেন না দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান।

প্রথম ম্যাচেই ইনজুরি নিয়ে ছিটকে গেছেন দলের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। আর উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মুশফিক খেলেছেন ইনজুরি নিয়েই। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ দল যে পাকিস্তানের মতো দলকে এভাবে বিদায় করে দেবে কেউ ভাবে নি। কিন্তু ঠিক এটাই হয়েছে।

এর আগে ২০১২ ও ২০১৪ সালের এশিয়া কাপে ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। ২০১২ সালের আসরে ফাইনাল ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই রানে হেরে রানার্স আপ হয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের আসরে ফাইনাল ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে আট উইকেটে হেরেছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। এবারও ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসাবে ভারতকে পেয়েছে বাংলাদেশ। এবার কি হবে?

চলতি এশিয়া কাপেই ভারতের বিপক্ষে সুপার ফোরের ম্যাচে ১৭৩ রানের সংগ্রহ গড়ে টাইগাররা। অধিনায়ক রোহিত শর্মার অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংসে ৩৬.২ ওভারেও সেই লক্ষ্য পেরিয়ে যায় ভারত। সেই একই দলের বিপক্ষে আবার ফাইনালে মুখোমুখি বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ দলের ইনজুরি সমস্যা এই এশিয়া কাপের শুরু থেকেই ভুগাচ্ছে। তামিম যাওয়ার পরও ইনজুরি নিয়ে খেলেছেন সাকিব-মুশফিক। ‘অলিখিত সেমিফাইনাল’ ম্যাচের আগে আঙ্গুলের চোটে ছিটকে যান সাকিবও। বাকি আছেন মুশফিক। তাকে খেলতে হচ্ছে ইনজুরির যন্ত্রণা নিয়েই। আর অধিনায়ক মাশরাফি বরাবরের মতোই অর্ধেক ফিট হয়েও শতভাগ দিয়েই যাচ্ছেন। সঙ্গ দিচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ-মোস্তাফিজ।

এটা সত্য, বাংলাদেশ দলটিকে ইনজুরির পাশাপাশি তীব্র গরম সামলে খেলতে হচ্ছে। প্রতি ম্যাচেই ক্লান্ত, শ্রান্ত হয়ে পড়ছেন খেলোয়াড়রা। একবার দুবাই তো একবার আবুধাবি ভ্রমণের কষ্ট তো আছেই। সবমিলিয়ে নিদারুণ কষ্ট সহ্য করেই খেলে চলেছে টাইগাররা। তবে বাকি মাত্র এক ম্যাচ। এই ম্যাচ জিতলেই ইতিহাস গড়া হয়ে যাবে মাশরাফিদের। এজন্য এই টুর্নামেন্টই হতে পারে অনুপ্রেরণা।  

তবে টাইগারদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হলেন অধিনায়ক মাশরাফি। দলের দুই সিনিয়র তারকা মুশফিক আর তামিমকে উৎসাহ দিয়ে নায়ক বনে যাওয়ার পেছনে যেমন তার ভুমিকা আছে, তেমনি আফগানদের বিপক্ষে মোস্তাফিজের শেষ ওভারের নায়ক হওয়ার পেছনেও মূল অনুপ্রেরণা ছিলেন মাশরাফি। শুধু অন্যদের অনুপ্রেরণা নয়, নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে শোয়েব মালিকের ক্যাচটি সুপারম্যানের কায়দায় লাফিয়ে ও ডাইভ দিয়ে যেভাবে ধরলেন তাতে অনেক তরুণ ক্রিকেটাররাও তার ফিটনেস দেখে লজ্জা পাবেন।

বাংলাদেশ দলে একজন মুশফিক আছেন, যিনি দলের বিপর্যয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে জানেন। এই আসরে নিজেদের প্রতিটি ম্যাচেই দলের টপ অর্ডারের ব্যর্থতার ধারা বজায় থাকলেও মিডল অর্ডারে বুক চিতিয়ে লড়াইয়ের নজির স্থাপন করেছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে ক্যারিয়ারসেরা সেঞ্চুরি আর সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে ৯৯ রান করে ম্যাচ জেতানো মুশফিকই তাই দলের প্রথম ব্যাটিং ভরসা। সঙ্গে আছেন দুই ম্যাচে ভালো খেলা মিঠুন, আর যেকোনো পরিস্থিতিতে চাপ সামলাতে সক্ষম মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে বিপত্তি সেই ওপেনিংয়ে। লিটন দাস অনিয়মিত, কিন্তু তার সঙ্গে কেউ দাঁড়াতেই পারছেন না। শান্ত, মুমিনুল, সৌম্য কেউই নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না। টপ অর্ডার তাই ফাইনালেও বড় দুশ্চিন্তা বাংলাদশের। বোলিংয়ে মোস্তাফিজ দারুণ ফর্মে আছেন। যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছেন মাশরাফি-রুবেল। আর স্পিনে মিরাজই একমাত্র ভরসা। ফাইনালে ফিরতে পারেন বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু। তাতে বোলিংয়ে বাড়তি শক্তি যুক্ত হবে সন্দেহ নেই।

অন্যদিকে ভারত অনেকটাই নির্ভার। এক ভেন্যুতেই সুপার ফোরের সব ম্যাচ খেলেছে ভারত। ফাইনালেও সেই একই ভেন্যু তথা দুবাইয়ে খেলবে তারা। স্বাভাবিকভাবেই কন্ডিশন ভারতের অনেক বেশি চেনা। তাছাড়া আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচে না থাকা তাদের দুই ওপেনিং ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান ফিরছেন এই ম্যাচে। বোলিংয়েও থাকছেন জাসপ্রিত বুমরাহ, ভুবনেশ্বর কুমার ও চাহাল। তাদের কেদার যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজার মতো অলরাউন্ডার আছেন। ধোনি আর রাইডুর অভিজ্ঞতাও পুজি তাদের।

এবারের এশিয়া কাপে টস একটা বড় প্রভাব ফেলেছে। প্রথমে ব্যাট করে ২৫০-২৬০ রান করলেই সেই দলের জেতার সুযোগ বেশি থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে। পরে ব্যাটিং করলেই ব্যাটিং ধসের সম্ভাবনা জাগে। তবে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের কাছে কোনো রানই নিরাপদ নয় এটা ভেবেই নামতে হবে টাইগারদের। তবে মোস্তাফিজ আছেন আর তার হাতে দারুণ কিছু বিশেষ ডেলিভারি আছে বলেই ভরসা।

সবমিলিয়ে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যেমন কন্ডিশন, তেমনি শক্তিশালী ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ, নিজেদের ওপেনিং জুটি তথা টপ অর্ডার, মুশফিকের পুরো ফিট না থাকা, মাশরাফির ফিটনেস নিয়ে চিন্তা আর সাকিবের না থাকা। এতগুলো প্রতিপক্ষকে সামলে ভারতের মতো দলকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা টাইগারদের হাতে উঠবে কি না তা দেখতে অপেক্ষা আর মাত্র একদিন। ভারতের হাতে সপ্তম শিরোপা উঠবে নাকি বাংলাদেশ পাবে প্রথমের স্বাদ?

সম্ভাব্য একাদশ
বাংলাদেশ: মাশরফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ, রুবেল হোসেন, মোহম্মদ মিঠুন, লিটন দাস, নাজমুল ইসলাম অপু, মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদি হাসান মিরাজ।

ভারত: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শিখর ধাওয়ান, আম্বাতি রাইডু, দীনেশ কার্তিক, এমএস ধোনি, কেদার যাদব,রবীন্দ্র জাদেজা, ভুবনেশ্বর কুমার, কুলদীপ যাদব, জসপ্রীত বুমরাহ, যজুবেন্দ্র চাহাল।

বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।