অন্য সব ক্রিকেটারের মতো মোহাম্মদ মিঠুনও জানেন, ভালো খেললে দলে জায়াগা পাওয়া যাবে, অন্যথায় না। তবে সমালোচনার দিক থেকে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানকে যেন একটু বেশিই কটু কথা শুনতে হয়।
বিশ্বের অন্য যেকোনো জায়গার মতো বাংলাদেশেও তারকাদের লক্ষ্য করে অনলাইনে ট্রল করার প্রবণতা রয়েছে। আর এর লক্ষ্য হিসেবে ক্রিকেটাররা অনেক এগিয়ে। যদিও ধর্মীও কারণেও ক্রিকেটার ও তাদের পরিবারদের বঞ্চনার শিকার হতে হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করেই লক্ষ্য করা হয়।
এ বছর বাংলাদেশের অনেক ব্যাটসম্যানের মতো মিঠুনেরও ব্যাট হাসেনি। তবে সমালোচনার লক্ষ্য যেন তাকেই বেশি করা হচ্ছে। এমন ব্যাপারে তার অনেক সতীর্থও অবাক হয়েছেন ও তার বিষয়ে অন্যদের চিন্তিতও করেছে।
এটা মূলত শুরু হয়েছিল এ বছরের শুরুতে শেরে বাংলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে। যখন দুই ইনিংসেই ব্যর্থ ছিলেন মিঠুন। এরপর দলে তার থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। এমনকি নিউজিল্যান্ড সফরে একটি ওয়ানডেতে তার অপরাজিত ৭৩ রানও তাকে কোনো সাহায্য করতে পারেনি। তার পরের ইনিংসগুলো ছিল যথাক্রমে ৬, ৪, ১ ও ০।
এরপরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিঠুনকে নিয়ে ‘মিমস’ ও ‘ট্রল’গুলো ছিল এককথায় ভয়ঙ্কর। পরে তাকে রীতিমতো অপমানের শিকার হতে হয়। প্রশ্ন উঠতে থাকে খারাপ খেললেও দল নির্বাচনে মিঠুন ‘অটো চয়েজ’। আর জিম্বাবুয়ে ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে যখন তাকে ব্যাপআপ ক্রিকেটার হিসেবে নেওয়া হয়, তখন ফেসবুক গ্রুপগুলো এই ধারণায় পুরোপুরি বিশ্বাস করে নেয়।
যখনই মিঠুনে সতীর্থদের সাথে হাসি বা হাসির ছবি ছিল, তখনই বাজে মন্তব্যগুলি করা শুরু হতো। সে রান না করলে তাকে একজন সাধারণ মানুষের কাতারেও রাখা হতো না।
এবছর মিঠুন ৯টি ওয়ানডেতে ২৩.১৬ করে রান করেছেন। এছাড়া অন্য দুই ফরম্যাটে চার ইনিংসে কেবল ৩০ রান করেছেন। তার শেষ সিরিজে সে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাত্র ৫১ রান তুলতে পেরেছেন। যদিও সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে গুরুত্বপূর্ণ ৩০ রান করেছিলেন তিনি। সতীর্থরাও তার এই ইনিংসের প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু ৫৭ বলের ইনিংসটাও সমর্থকরা সমালোচনায় বিদ্ধ করেছেন।
মিঠুন জিম্বাবুয়ে ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ব্যাকআপ ক্রিকেটার হিসেবে ছিলেন। কেননা করোনা মহামারির কারণে জৈব-সুরক্ষার বলয়ে মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাশের অনুপস্থিতিতে তাকে থাকতে হয়েছে।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ ম্যাচে টি-টোয়েন্টি সিরিজে নামছে বাংলাদেশ। এই দল থেকে বাদ পড়েছেন মিঠুন। এমনকি মিঠুনের কাছেও এই বাদ পড়া প্রত্যাশিত ছিল। এটি তাকে ট্রমার মাসগুলো থেকে দূরে সরে যাওয়ার সময় দিচ্ছে। যার মধ্যে তিনি নিজেকে অপমানিত মনে করেছিলেন এবং এই অপব্যবহারের থেকে দূরে রাখতে চাইছেন।
ক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাতকারে মিঠুন বলেন, ‘এটা বেশ অপমানিত ব্যাপার যখন মানুষ আপনাকে ঠাট্টায় পরিণত করবে। প্রথমত কারোরই এটা করা অধিকার নেই। মানুষ হিসেবে আপনি কখনোই এমনটি সমর্থন করতে পারেন না। আমি শুধু মাত্র জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে বলছি না। এটা সবার ক্ষেত্রেই হয়। আপনার নিজের ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণ আছে এবং কিছু ক্ষেত্রে পরিবারের বেলাতেও। আমরা শুধুমাত্র এই সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করতে পারি। তবে পরিবর্তনের কোনো ছাপই নেই। ’
তিনি আরও বলেন, ‘সিনিয়র ক্রিকেটাররা এটা (অনলাইন ট্রল) নিয়ে অনেক কথা বলেছে। তবে কিছুই পরিবর্তন হয়নি। আমি মনেকরি যারা আমাকে নিয়ে মজা করে তাদের ক্রিকেট সম্পর্কে জ্ঞান নেই। আমি আমাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে রাখতে পারি। তবে আপনি কি সবকিছুকে উপেক্ষা করতে পারবেন? আপনার বন্ধুই আপনাকে এগুলো দেখিয়ে দেবে। আমি ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সিরিজের আগে দীনেশ কার্তিকের সঙ্গে বিরাট কোহলির সাক্ষাতকার দেখেছি। আমি সেখানে কোহলির সঙ্গে একমত যে যারা তাকে অপমান করে তাদের তিনি কোনো গুরুত্বই দেন না। ’
‘আমার ব্যর্থতা ছিল, আমার মানসিক চাপ যা আমি (অনলাইন অপব্যবহার) নিয়েছি তা সামলাতে না পারা। আমার এখন সামগ্রিক মানসিকতা নিয়ে কাজ করার সময় এসেছে, এই ধরনের অপব্যবহার কিভাবে মোকাবিলা করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। একই সাথে আমি আমার খেলায় আরো মনোযোগি হতে চাই। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২১
এমএমএস