পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে চরম ব্যাটিং বিপর্যয় নিয়ে চতুর্থ দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার (০৭ ডিসেম্বর) মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তান প্রথম ইনিংস ৩০০ রানে ঘোষণার পর বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২৬ ওভারে দলীয় ৭৬ রানেই ৭ উইকেট হারায়।
প্রথম ইনিংসে ফলোঅন এড়াতে বাংলাদেশের মোট ১০১ রান করতে হবে। কিন্তু পাকিস্তানি স্পিনার সাজিদ খানের বিধ্বংসী স্পেলের পর এখন প্রশ্ন উঠেছে ৩ উইকেটে বাকি ২৫ রান কি তুলতে পারবে বাংলাদেশ? নাকি বৃষ্টি ও বাজে আবহাওয়ার কারণে প্রায় দুদিন খেলা না হওয়ায় এই টেস্টেও লজ্জার ফলোঅনে যেতে হবে মুমিনুলবাহিনীকে।
দুঃখজনক ব্যাপার বাংলাদেশের পতন হওয়া ৭ উইকেটের মধ্যে ৬ উইকেটই বিলিয়ে দিয়েছে সাজিদ খানের হাতে। অন্য উইকেটটি রান আউটের মাধ্যমে।
এর আগে পাকিস্তানের ইনিংস ঘোষণা পর ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা হয় খুবই বাজে। ১ রানেই হারায় ১ উইকেট। অভিষেক ম্যাচে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদুল হাসান জয়। ৭ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। সাজিদ খান তাকে দিয়েই শুরু করেন। এরপর নবম ওভারে সাজিদের বাড়তি বাউন্সে পরাস্ত হয়ে ফিল্ডার হাসানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন সাদমান ইসলাম।
এক ওভার পরেই ফের আক্রমণে আসেন সাজিদ। ওভারের প্রথম বলেই বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক পয়েন্টে ড্রাইভ করে ছুট লাগান। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই সরাসরি থ্রোয়ে স্ট্যাম্প ভাঙেন হাসান আলী। মাত্র ২ বল স্থায়ী হয় মুমিনুলের ১ রানের ইনিংস। ২২ রানেই ৩ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। মুশফিকের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি গত টেস্টে সেঞ্চুরি করা লিটন দাস। সাজিদের স্পিন ঘূর্ণিতে ব্যক্তিগত ৬ রান করে বিদায় নেন তিনি।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্তও নুমান আলীকে তেঁড়েফুড়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন। তবে নো বল হওয়ায় সে যাত্রায় বেঁচে যান। তখন তিনি ২১ রানে ব্যাট করছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ৩০ রানে বিদায় নিয়েছেন শান্তও, যা আবার সাজিদের টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম পঞ্চম উইকেট। এরপর সাজিদের পরের ওভারে 'ডাক' মেরেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
সাজিদ ১২ ওভারে ৩৫ রানের বিনিময়ে ও ৩টি মেডেন নিয়ে ৬ উইকেট লাভ করেন।
এর আগে মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ফাওয়াদ আলমের ব্যাটে ভর করে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩০০ রান সংগ্রহ করে ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান।
বৃষ্টি ও মেঘের শঙ্কা কাটিয়ে মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে শুরু হয় মিরপুর টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা। ২ উইকেট হারিয়ে ১৮৮ রান নিয়ে এদিন ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় পাকিস্তান। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই সেট ব্যাটার আজহারকে (৫৬) বিদায় করেন এবাদত হোসেন। বাংলাদেশি পেসারের বলে পুল করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন আগের দিন ৫২ রানে অপরাজিত থাকা আজহার।
এরপর আগের দিন ৭১ রানে অপরাজিত থাকা বাবরকে ইনিংসের ৬৮তম ওভারে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন খালেদ আহমেদ, এটি তার প্রথম টেস্ট উইকেট। ড্রেসিং রুমের পথে হাঁটার আগে ১২৬ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৭৬ রান করেন বাবর। দলীয় ১৯৭ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় পাকিস্তান। এরপর মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ফাওয়াদ আলম হাল ধরেন ইনিংসের।
রিজওয়ান দুইবার রিভিও নিয়ে বেঁচে যান। প্রথমবার এবাদতের অফ স্টাম্প ঘেঁষা ও নিচু হওয়া ডেলিভারিতে বল কিপারের গ্লাভসে জমা হলে আবেদন করেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। আম্পায়ার আঙুল তুলে দিলে রিভিও নেন রিজওয়ান। রিভিওয়ে দেখা যায় বল ব্যাট ছুঁয়ে যায়, কিন্তু ক্যাচ হওয়ার আগে এক ড্রপ খায়। ফলে শূন্য রানে টিকে যান পাকিস্তানি উইকেটরক্ষক-ব্যাটার।
ফাওয়াদ বেঁচে যান আপিল না করায়। এবাদতের ডেলিভারি ফাওয়াদ ঠিকমতো খেলতে না পারলে বল ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা হয় কিপারের গ্লাভসে। কিন্তু বাংলাদেশের ফিল্ডাররা আবেদনই করলেন না। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেল, ব্যাটে হালকা লেগেছিল ব্যাট। ফলে নিশ্চিত উইকেট পেল না বাংলাদেশ।
এরপর তাইজুলের বলে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি রিজওয়ান। বল লাগে তার প্যাডে। আবেদন করলে আম্পায়ার মাইকেল গফ আঙুল তুলে দেন। কিন্তু রিজওয়ান রিভিও নিলে রিপ্লেতে দেখা যায় বলের লাইন ঠিক থাকলেও অনেকটা টার্ন করে বেরিয়ে যাচ্ছিল। ফলে ব্যক্তিগত শূন্য রানের পর ১২ রানেও টিকে যান রিজওয়ান। পরে তুলে নেন দারুণ এক ফিফটি ৮৬ বলে ক্যারিয়ারের সপ্তম ফিফটি করার পথে তিনি ৪টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন।
রিজওয়ানের পর ফাওয়াদও তুলে নেন ফিফটি, যা টেস্টে এই বাঁহাতি ব্যাটারের মাত্র দ্বিতীয়। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের সংগ্রহও ৩০০ ছুঁয়ে ফেলে। ৯৬ বলে ৭ চারে ৫০ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন ফাওয়াদ। রিজওয়ান ব্যাট করছিলেন ৫৩ রানে। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আসে ১০৩ রান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২১
এমএমএস