সুযোগ মিসের দিন? বলা যায়। দিনটা তো তাহলে ঘুরে দাঁড়ানোরও।
অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটির দ্বিতীয় দিনশেষে বাংলাদেশের চেয়ে ১১২ রানে এগিয়ে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানে অলআউট হওয়া বাংলাদেশ অবধি ২ উইকেট হারিয়ে করেছে ৫০ রান। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৬৫ রানে অলআউট হয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ক্যারিবীয়ানদের অলআউট করে শেষ বিকেলে খেলতে নামে বাংলাদেশ। শুরুটা অবশ্য প্রথম ইনিংসের মতো মন্দ হয়নি। মাহমুদুল হাসান জয় ও তামিম ইকবাল ঠিকঠাকই খেলছিলেন।
কিন্তু উইকেটরক্ষক জশুয়া ডি সিলভা বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ তুলে নিয়ে সাজঘরের পথ দেখান তামিমকে। ৩১ বলে ২২ রান আসে তার ব্যাট থেকে। এদিন তিন নম্বরে নামানো হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। টানা ব্যর্থ টপ অর্ডারকে খানিকটা স্বস্তি দিতেই কি না এমন সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান!
তবে তাকে স্বস্তি দিতে পারেননি মিরাজ। ছয় বলে ২ রান করে আলজেরি জোসেফের বলে স্লিপে দাঁড়ানো কাইল মেয়ার্সের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। এরপর দিনের বাকিটা সময় কাটিয়ে দিয়েছেন নাজমুল হাসান শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয়। তাদের আশায় থেকেই দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। ২৩ বলে ৮ রান করে শান্ত ও ৬০ বলে ১৮ রান করে অপরাজিত আছেন জয়।
দ্বিতীয় দিনে ২ উইকেট হারিয়ে ৯৫ রান নিয়ে খেলতে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুটা মোস্তাফিজুর রহমান ও এবাদত হোসেনকে দিয়ে করান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মন্দ করেননি তারা। বিশেষত এবাদত হোসেন প্রায়ই বিপদে ফেলছিলেন ব্যাটারদের।
এক পর্যায়ে মিলেছিল সুযোগও। ইনিংসের ৫৩তম ওভারের শুরু থেকেই দুর্দান্ত বল করেন এবাদত। শেষ বলটি গুড লেন্থে ফেলে রেখেছিলেন স্টাম্পে। ব্যাটেও লেগেছিল এনক্রুমাহ বোনারের।
কিন্তু সেভাবে আবেদনই করেননি বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখে নিশ্চয়ই হতাশাটা বেড়েছে। এরপরও সুযোগ মিলেছিল আরও একটি। সৈয়দ খালেদ আহমেদের বলে আবারও জীবন পান বোনার।
খালেদের ওভারে তার ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পেছনে গিয়েছিল বল; কিন্তু প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত বা উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা নুরুল হাসান সোহান কেউই নড়েননি। ক্যাচটি অবশ্য ছিল শান্তর। এরপরই ফিফটি তুলে নেন ক্যারিবীয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট।
খানিক বাদেই অবশ্য বাংলাদেশকে স্বস্তি এনে দেন সাকিব আল হাসান। দুবার জীবন পাওয়া বোনারকে বোল্ড করে দেন তিনি। ৯৬ বলে ৩৩ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন এই ক্যারিবীয়ন ব্যাটার।
এরপর লাইন-লেন্থ নিয়ে ভুগতে থাকা খালেদ পান সাফল্য। সেটাও আবার যেমন-তেমন উইকেট নয়। ক্রিজকে রীতিমতো ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের। দুর্দান্ত এক ডেলেভারিতে উইকেটটি পান তিনি। ২৬৮ বলে ৯৪ রান করে সাজঘরে ফেরত গেছেন ব্র্যাথওয়েট।
ইনিংসের ৯০তম ওভারের শেষ বলে এসে এই সাফল্য পান খালেদ। ঠিক আগের বলটিই লাফিয়ে ওঠেছিল, ব্যাটে ঠিকঠাক লাগাতে পারেননি ব্ল্যাকউডও। কিন্তু ক্যাচ ওঠে বলটি পড়ে ফাঁকা জায়গায়। পরের বল গুড লেন্থে ফেলেন খালেদ, নিচু হয়ে সেটি লাগে ব্র্যাথওয়েটের প্যাডে।
জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ারও। রিভিউ না নিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন ব্র্যাথওয়েট। ভেঙে যায় ব্ল্যাকউডের সঙ্গে তার ৬৩ রানের জুটি। পরে আরও কয়েকটি ক্যাচ মিস ও রিভিউ না নেওয়ার দেখা মেলে।
এরপরই বল হাতে নিজের ঝলক দেখান মেহেদী হাসান মিরাজ। শেষের পাঁচ ব্যাটারের ৪জনকেই তুলে নেন তিনি। শুরুটা করেন ২৪ বলে ৭ রান করা কাইল মেয়ার্সকে দিয়ে, তাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। এরপর জশুয়া ডি সিলভাকে আর্ম বল করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন।
১৩৯ বলে ৬৩ রান করা ব্ল্যাকউডকে ফেরান খালেদ আহমেদ, ক্যাচটা অবশ্য নিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজই। ব্ল্যাকউডের বিদায়ের পর অলআউট হতেও বেশি সময় লাগেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তৃতীয় দিনে বাংলাদেশকেও নিশ্চয়ই দ্রুতই অলআউট করতে চাইবে তারা, ওই ভয়টা নিয়েই দিনশেষ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশ সময় : ০৩৩১, জুন ১৮, ২০২২
এমএইচবি