ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চন্দ্রনাথ ধামের মেলায় চাঁদাবাজি, ভিড়ের চাপে  ৫ পুণ্যার্থী আহত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩
চন্দ্রনাথ ধামের মেলায় চাঁদাবাজি, ভিড়ের চাপে  ৫ পুণ্যার্থী আহত ...

চট্টগ্রাম: সারাবছর সংস্কারবিহীন অবস্থায় থাকা সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ ধামে শিব চতুর্দশী তিথিতে বাড়ে মানুষের ভিড়। ভাঙা সিঁড়ি ও খাড়া পাহাড় পেরিয়ে সমতল থেকে ১২শ ফুট উঁচু চূড়ায় ওঠা-নামার সময় ঘটে দুর্ঘটনা।

শনিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ভিড়ের চাপে ৫ পুণ্যার্থী আহত হন। তারা হলেন- বীনা দাস (৫০), চম্পা হাওলাদার (৪৪), কমলা কর্মকার (৪০), লিপি কর্মকার (৩২) ও সুশেন দাস (৩০)।

লিপি কর্মকারের স্বামী নান্টু কর্মকার বলেন, চন্দ্রনাথ ধামে যাওয়ার সময় হঠাৎ মানুষের চাপে তাঁর স্ত্রী মাটিতে পড়ে গিয়ে আহত হয়। হাতে ১০টি সেলাই দিতে হয়েছে। তাঁর আত্মীয় কমলা কর্মকারের মাথা ফেটে গেছে।

চন্দ্রনাথ ধাম মেলা কমিটির কর্মকর্তা দুলাল দে বলেন, কোথাও সিঁড়ি ভাঙেনি। রাত আড়াইটার দিকে স্বয়ম্ভুনাথ মন্দিরে ঢোকার পথ বন্ধ করে দেওয়ায় জটলা সৃষ্টি হয়। ভোর থেকে ইকোপার্ক হয়ে বিকল্প পথে পুণ্যার্থীদের নামানো শুরু হয়। ভিড়ের চাপে কয়েকজন আহত হয়। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।  

সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, পাঁচজন গুরুতর আহত পুণ্যার্থীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্পে গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ২ হাজার মানুষ।  

মেলায় বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে অদ্বৈত-অচ্যুত মিশন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, জন্মাষ্টমী পরিষদ, হিন্দু মহাজোটসহ কয়েকটি সংগঠন। রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে মেলার ৩য় দিনেও দেখা গেছে পুণ্যার্থীদের ভিড়। মেলা চলবে সোমবার পর্যন্ত। এবারের মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লাখো পুণ্যার্থীর সমাগম হয়েছে।  

এদিকে মেলা ঘিরে চলছে চাঁদাবাজি। পাঁচ শতাধিক দোকান ও ব্যাসকুণ্ডের পাড়ে পূজা-শ্রাদ্ধ-তর্পণ করতে আসা আড়াইশ’ পুরোহিতের কাছ থেকে জোরপূর্বক আদায় করা হচ্ছে টাকা। চাঁদা আদায়কারীরা কমিটিকে টাকা দিতে হচ্ছে বলে জানালেও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেলা ও তীর্থ কমিটির কর্মকর্তারা।  

কয়েকজন তীর্থযাত্রী জানান, মেলায় এসে তারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন।  মোহন্ত আস্তানার পাশে বসা টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ী দেবদুলাল বলেন, মেলায় তিনদিনের জন্য ছোট একটি দোকান বসানোয় তাকে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। আরও কয়েকজন দোকানি বলেছেন, তাদের ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা দিতে বাধ্য করেছে চাঁদা আদায়কারীরা।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অভিযোগ, সারাবছর এই তীর্থস্থান অবহেলায় পড়ে থাকে। কোনও বাধা না থাকায় এটি হয়ে গেছে পর্যটনকেন্দ্র। এতে মহাতীর্থের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে।

মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা বলেন, আমরা কোনো টাকা তুলিনি। দোকানপাট বা অন্যান্য ইজারার টাকা তুলে স্রাইন কমিটি। তারা মেলার খরচের জন্য আমাদের আড়াই লাখ টাকা দেন।  

তীর্থ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ বলেন, পুরোহিতদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমি গতবছরও প্রতিবাদ করেছি। পুরোহিতরা কেন চাঁদা দেবেন? একটি মহল জোর করে চাঁদা আদায় করছে। দোকানপাটের জায়গা আমরা ইজারা দিই না।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ বলেন, এখানে চাঁদাবাজির কারণে তীর্থযাত্রীরা হয়রানির শিকার হলে আমাদেরও বদনাম। তাই এসব বন্ধ করবো আমরা। সীতাকুণ্ড থানার ওসিকে চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।