ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জেলেপল্লীতে শুঁটকি তৈরির ধুম 

সোহেল সরওয়ার, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩
জেলেপল্লীতে শুঁটকি তৈরির ধুম  ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের শুঁটকির সুনাম ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন দেশে। এখানকার কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে ওঠা শুঁটকিপল্লী এখন কর্মমুখর।

নদীর তীরঘেঁষা বাকলিয়া, ইছানগর, জুলধা, ডাঙ্গারচর, কর্ণফুলী ঘাট এলাকা ও বাঁশখালীর জেলেপল্লীতে শুঁটকির ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন হাজারও মানুষ।

শীত ও গ্রীষ্ম ঋতু শুঁটকি তৈরির মৌসুম।

এসব এলাকায় একেকটি মহালে পাঁচ থেকে ছয়জন শ্রমিক কাজ করেন। আগে থেকে তৈরি করা মাচায় শুঁটকি শুকানো হচ্ছে কয়েক ধাপে। প্রথমে মাছের পেট থেকে নাড়ি-ভুঁড়ি বের করে নেওয়া হয়। এরপর পেট কেটে মাছ পানিতে ধুয়ে সেই মাছ শুকানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়। কিছু মাছে মাখতে হয় লবণ।

প্রতিদিন সূর্যের তাপে এসব এলাকার শতাধিক স্থানে ছোট-বড় ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছ শুকানো হচ্ছে। মাছ শুকানোর পর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পাইকারি দামে শুঁটকি কিনে নেন বলে জানান মহাল মালিকেরা। প্রকারভেদে শুঁটকি শুকাতে সময় লাগে এক থেকে তিন সপ্তাহ।

চট্টগ্রামের বড় শুঁটকির আড়ত আছাদগঞ্জ। এখানে ৪০টি আড়ত ও ২৮০টি পাইকারি দোকান এবং শতাধিক খুচরা ও ভাসমান দোকান রয়েছে। ছুরি, লইট্যা, ইচা, মইল্যা, কেচকি, লাক্কা, রূপচাঁদা, পোপা, মিশালী, ফাইশ্যা, মাইট্যা, চোফি, মনুনিয়া, লবণ ইলিশ আসে এসব আড়তে।

কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ জানান, রোদে মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করার সময় লুসিলিয়া কিউপ্রিনা প্রজাতির মাছির লার্ভা মাছের ক্ষতি করে। এ থেকে রক্ষার জন্য শুঁটকি মাছ উৎপাদনকারীরা মাছ শুকানোর আগে কাঁচা মাছে ডিডিটি পাউডারসহ কীটনাশক প্রয়োগ করেন। এতে উৎপাদিত শুঁটকি বিষাক্ত হয়ে যায়। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন নব্বইয়ের দশক থেকে কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপসহ অন্যান্য সামুদ্রিক শুঁটকি মাছ উৎপাদনের এলাকায় পরমাণু প্রযুক্তিতে উৎপাদিত বন্ধ্যা মাছি ব্যবহার করে আসছে।  

শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানান, ওষুধ ছাড়া শুকানোর ফলে প্রতি বছর দুই থেকে তিনশ কোটি টাকার শুঁটকি মাছ নষ্ট হয়। আবার ওষুধ দেওয়া শুঁটকির গুণগত মান কমে যাচ্ছে এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। মেশিনের সাহায্যে শুঁটকি শুকানো হলে খরচ বাড়ে। সামগ্রিকভাবে একদিকে শুঁটকির বাজারমূল্য কমে যাচ্ছে এবং অন্যদিকে শুঁটকি মাছ বিদেশে রপ্তানি করা যাচ্ছে না।

শুঁটকি শুকানোর কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, এখানকার উৎপাদিত শুঁটকি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রির জন্য নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি লইট্যা ৪শ থেকে ৫শ, ফাইস্যা ৩৫০ থেকে ৪৫০, ছুরি ৭০০ থেকে ৯৫০, বড় চিংড়ি ১৩শ থেকে ১৫শ টাকা দরে বিক্রি হয়। এছাড়া শুঁটকি মহালের মাছের গুঁড়ি পোল্ট্রি ফার্ম ও ফিস ফিডের জন্য সরবরাহ করা হয়।  

আছাদগঞ্জের শুঁটকি ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, আনোয়ারা-কর্ণফুলীর মাছ শুকাতে কোনো ক্যামিকেল মেশানো হয় না। অন্য এলাকার শুঁটকির চেয়েও এসব শুঁটকির ঘ্রাণ আলাদা। আছদগঞ্জে আমাদের শুঁটকি সোনাদিয়া থেকে আসা শুঁটকির চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩ 
এসএস/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।