ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ভোট নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে: সিইসি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩
ভোট নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে: সিইসি বক্তব্য দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

চট্টগ্রাম: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, কতগুলো বক্তব্য আমি আরও ৬টি স্টেশনে ঘুরে শুনেছি। একটি কথা কয়েকজনে বলেছেন ভোট দিয়ে কী লাভ, ভোট তো এক জায়গায় চলে যাবে।

আবার কেউ কেউ নাকি মুখে মুখেও বলেছেন, আপনারা যে যেখানে ভোট দেন, ভোট জায়গামতো চলে আসবে। আমরা বিষয়টি শুনেছি।
এর মধ্যে আমরা জেনে গেছি, এটি হয়তো ইচ্ছাকৃত অপপ্রচার অথবা ভ্রান্ত ধারণা। ভোট যেখানেই দেন সেখান থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সম্ভাবনা নেই ,সেটি আমরা শতভাগ নিশ্চিত করতে পারি।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরের পিটিআই মিলনায়তনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেকোনো মূল্যে যেকোনো প্রকারে অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদের নির্বাচনের সংস্কৃতিতে অনেকে কালো টাকার বিনিময় পেশাদার কিছু সন্ত্রাসী ব্যবহার করে। তারা যাতে ভোটকে প্রভাবিত না করতে পারে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। তাদের বক্তব্য শুনেছি। আমরাও যথাযথ নির্দেশনা দিয়েছি। তারা আমাদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের কথা বলেছেন। পোস্টার ছেঁড়া, দুয়েক ক্যাম্পে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু সার্বিকভাবে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা আমাদের জানিয়েছেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের আচরণে তারা সন্তুষ্ট।  

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফুটে উঠবে মিডিয়ার মাধ্যমে। কারণ মিডিয়ার কর্মীরা ভোটকেন্দ্রের বাইরে এবং ভেতরে থাকবেন। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে মিডিয়া ও পর্যবেক্ষকদের প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নিতে হবে না। তারা সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন এবং ভেতরে ঢুকে সবই ছবি তুলতে পারবেন। সত্য-মিথ্যা জনগণকে জানাতে পারবেন। আমরা একটি অ্যাপস তৈরি করেছি যেখানে দুই ঘণ্টা পর পর প্রতিটি কেন্দ্রে কত শতাংশ ভোট পড়লো ইনপুট দেওয়া হবে। মোবাইলের মাধ্যমে অ্যাপস ডাউনলোড করে সেটা সবাই জানতে পারবেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ১০টার সময় দেখা গেল ১০ শতাংশ ভোট পড়ল। কিন্তু ১২টার দিকে গিয়ে হঠাৎ ৮০ শতাংশ হয়ে গেল। এটি বিশ্বাসযোগ্য হবে না। এজন্য আমরা বিভিন্ন পরিমাপক নিয়েছি। যাতে ভোট গ্রহণের সত্যতা মানুষের মাঝে ফুটে ওঠে।

রাতে ভোট হবে না জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আগের রাতে ভোটসহ যেসব কথাবার্তা হয়েছে আমরা ৯৯ নয়, শতভাগ নিশ্চিত করতে পারি সেটি কোনো অবস্থাতেই হবে না। এজন্য অনেক কেন্দ্রে ব্যালট পেপার সকালে যাবে। এখন ব্যালট পেপার সকালে না গিয়ে ১০ দিন আগে অথবা ১০ মাস আগেও যায়, তাহলেও প্রার্থীরা তাদের পোলিং এজেন্ট দিয়ে সকালে ভোট কেন্দ্রে স্বচ্ছ বাক্সগুলো খালি কি না সেটি দেখে নিয়ে তারপর বন্ধ করবেন। সেক্ষেত্রে অবৈধ কোনো ব্যালট বক্সে ঢোকার সুযোগ নেই। তারপরও আমরা বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জনের জন্য বলেছি ব্যালট পেপার সকালে পাঠাব। ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টরা অবশ্যই দাঁড়িয়ে থেকে দেখে নেবেন ব্যালট বাক্সগুলো খালি আছে কি-না। তারা ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ গণনা ও ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। সবকিছু সঠিকভাবে হয়েছে কি না জানবেন। যদি গণনা যথাযথভাবে শেষ হয় তাহলে নিশ্চিতভাবে ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়ে গেল।

কোনো পেশিশক্তির উদ্ভব ঘটলে প্রিজাইডিং অফিসারকে ভোট বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, প্রিজাইডিং অফিসার যদি বন্ধ না করেন রিটার্নিং অফিসার অবহিত হলে তিনি বন্ধ করে দেবেন। তিনিও যদি বন্ধ না করেন, আর আমরা ঢাকা থেকে অবহিত হলে সেখান থেকে বন্ধ করে দেবো।

কথাগুলো বললাম আমাদের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে একটা অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সেটি যাতে দূরীভূত হয়। আমরা নির্বাহী প্রশাসন ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। এখানে ওসি, ইউএনও, ডিসি ও এসপিদের বক্তব্য শুনেছি। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী এখনো পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ভালো।  

কেন্দ্রে যাতে কোনো অননুমোদিত ব্যক্তি প্রবেশ না করে সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি বলা হয়েছে জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা তাদের আরেকটি বার্তা দিয়েছে, যেদিন ভোটগ্রহণ করা হবে সেদিনের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে থাকবে। ভোটটা কি অবাধ হলো, সেখানে কারচুবি হয়েছে কি-না সেটি নিশ্চিত করার জন্য যারা ভোট পরিচালনা করবেন অর্থাৎ প্রিজাইডিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে, কেন্দ্রে যাতে কোনো অননুমোদিত ব্যক্তি প্রবেশ না করে। যদি অননুমোদিত ব্যক্তি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে তাহলে বুঝতে হবে তিনি কুমতলব নিয়ে প্রবেশ করেছেন। তাহলে ভোটগ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। আমরা কঠিন বার্তা দিয়েছি, এ ধরনের কোনো কিছু যাতে না হয়। '

এর আগে দুপুরে নগরের পিটিআই মিলনায়তনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের আয়োজনে এই সভা শুরু হয়। সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলা প্রশাসক, জেলার পুলিশ সুপার,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার সচিব মো. জাহাংগীর আলম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।