ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কাজে আসছে না চট্টগ্রামের ৩ ট্রমা সেন্টার

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২৪
কাজে আসছে না চট্টগ্রামের ৩ ট্রমা সেন্টার ...

চট্টগ্রাম: মহাসড়কে সৃষ্ট ছোট-বড় দুর্ঘটনার পর আহতদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে চট্টগ্রামের তিন উপজেলায় নির্মাণ করা হয় ৩টি ট্রমা সেন্টার। কিন্তু জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে চালু করা যাচ্ছে না এসব ট্রমা সেন্টার।

ট্রমা সেন্টারগুলো নির্মাণ করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জানা যায়, হাটহাজারী উপজেলা সদরের কাচারি সড়কে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ট্রমা সেন্টার।

এটি উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল। গত তিন বছরেও এখানে প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১০০ জন আহত হন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যেতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ট্রমা সেন্টারটি চালু হলে এই কষ্ট কমে আসতো বলে মত স্থানীয়দের। উদ্বোধনের পর থেকে এই সেন্টার করোনাকালে ভ্যাকসিন প্রদানসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। ফলে জমছে বিদ্যুৎ বিল।

রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড ঢালারমুখ এলাকায় চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের পাশে ট্রমা সেন্টার উদ্বোধন করা হয় ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর। এটি নির্মাণে ব্যয় হয় ১১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সেখানেও জনবল ও যন্ত্রপাতি বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। দুটি আবাসিক ভবন ও চিকিৎসাকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক আঁকাবাঁকা হওয়ায় প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। আহতদের নিয়ে আসতে হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে। এই সড়কের মধ্যবর্তী এলাকায় দুর্ঘটনা হলে আহতদের নিয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়। লোহাগাড়ায় মহাসড়কের পাশে ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ট্রমা সেন্টার। লোহাগাড়া ট্রমা সেন্টার এলাকা থেকে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অথবা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। ২০১৩ সালে এটি উদ্বোধন করার পর ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। এখনও জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে এটি চালু হয়নি।

জানা যায়, চট্টগ্রামের তিনটি ট্রমা সেন্টারের প্রতিটিতে রয়েছে ২০ শয্যা। এসব সেন্টারের জন্য একজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা, ৩ জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট, ৬ জন সহকারী সার্জন, নার্স, টেকনোলজিস্টসহ ৩৬টি পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু এখনও জনবল পদায়ন করা হয়নি, নেই পর্যাপ্ত আসবাবপত্র, আসেনি অপারেশনের যন্ত্রপাতিও।  

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, সড়ক দুর্ঘটনার শিকার বেশি হয় মোটরসাইকেল। এরপর আছে ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান ও লরি, বাস এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। আইন না মানা, সড়কে খানাখন্দ ও অব্যবস্থাপনা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ফিটনেসবিহীন যান ও অদক্ষ চালক এবং বেপরোয়া চালানোর মানসিকতার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে।

মহাসড়কের পাশে ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করার উদ্দেশ্য ছিল, দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা। এতে মৃত্যুহার কমবে এবং অনেকে পঙ্গুত্ব থেকে বাঁচবে। ট্রমা সেন্টারগুলো চালু হলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতো।

চিকিৎসকরা বলছেন, ৪৫ বছরের কম বয়সী মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ আঘাতজনিত অসুস্থতা বা ট্রমা ইনজুরি। একই সঙ্গে একাধিক আঘাতের ঘটনা রোগীকে গুরুতর বিকলাঙ্গতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। বুকে ব্যথা রয়েছে, তবে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক কম-এমন রোগীদের জরুরি ব্যবস্থাপনা দরকার হয়। যখন ট্রমায় আক্রান্ত কোনো রোগী হাসপাতালে আসে এবং তার জীবন বাঁচানোর জন্য জরুরি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়, তখন প্রথম কয়েক মিনিট বা ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। জরুরি সেবার ক্ষেত্রে এ সময়টুকু রোগীর বেঁচে থাকা ও মৃত্যুর মধ্যকার পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ট্রমা সেন্টারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, পর্যাপ্ত জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে ট্রমা সেন্টারগুলো চালু করা যাচ্ছে না। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে জনবল চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিতেও বলা হয়েছে। ট্রমা সেন্টারগুলো চালু করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২৪
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।