ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩২, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২ রবিউস সানি ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দুই পর্বতারোহীর সৌজন্যে মানাসলুর চূড়ায় দুইবার উড়ল লাল-সবুজ পতাকা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:২৫, অক্টোবর ৪, ২০২৫
দুই পর্বতারোহীর সৌজন্যে মানাসলুর চূড়ায় দুইবার উড়ল লাল-সবুজ পতাকা

চট্টগ্রাম: বিশ্বের অষ্টম উচ্চতম পর্বত মাউন্ট মানাসলুর (২৬,৭৮১ ফুট) চূড়ায় উঠেছেন বাংলাদেশের দুই পর্বতারোহী ডা. বাবর আলী ও তানভীর আহমেদ। এর মধ্যে ডা. বাবর আলী ইতিহাস গড়েছেন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে কৃত্রিম অক্সিজেন ছাড়াই আট হাজার মিটার উঁচু পর্বত আরোহণ করে।

আর তানভীর আহমেদ তাঁর প্রথম আটহাজারি অভিযানে-ই স্পর্শ করেছেন সাফল্যের শিখর। গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভোরে বাবর আলী স্পর্শ করেন মানাসলু পর্বতের চূড়া।
এটি তাঁর চতুর্থ আটহাজারি পর্বতজয়। এর আগে তিনি আরোহণ করেছেন এভারেস্ট, লোৎসে এবং অন্নপূর্ণা-১ শৃঙ্গ। তবে অক্সিজেনবিহীন এবারের আরোহণ দেশের পর্বতারোহণ ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করা হয়েছে। মানাসলু জয়ের পর দেশে ফিরে শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে একটি হলে অভিযান পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন ও পতাকা প্রত্যর্পণ অনুষ্ঠানে এ এভারেস্টজয়ী ডা.বাবর আলী । ভার্টিক্যাল ডুয়ো’ শীর্ষক এই অভিযানের আয়োজক পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স। এতে দুই পর্বতারোহী ছাড়াও পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান 'সামুদা' এর চিফ বিজনেস অফিসার বিকাশ কান্তি দাস এবং ভিজুয়াল নিটওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ নুর ফয়সাল উপস্থিত ছিলেন। ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের পক্ষে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ক্লাবের পাবলিক রিলেশন্স সেক্রেটারি আশরাফুল আরেফীন আসিফ ও পুরো অভিযানের ব্যবস্থাপক হিসেবে ছিলেন ফরহান জামান।  

বিকাশ কান্তি দাস তাঁর বক্তব্যে সামনের দিনগুলোতেও দেশের তরুণ অ্যাথলেটদের পাশে দাঁড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন। স্যাম-বন্ড সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এই অভিযানে সম্পৃক্ত হয়েছে বলেও তিনি জানান। উল্লেখ্য যে, এই দুঃসাহসিক অভিযানে আরো পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন গিগাবাইট বাংলাদেশ, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন, সিনোভেস্ট, সিয়েরা-রোমিও, আদিবা ফুটওয়্যার, ফোরএস অ্যাডভান্স টেকনোলজিস, জেনোভার্স, সোর্স এসোসিয়েটস, আইলেট ব্যাংকার্স, কাজী এগ্রো এবং ফ্রিয়েসভা। ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের পক্ষে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ক্লাবের পাবলিক রিলেশন্স সেক্রেটারি আশরাফুল আরেফীন আসিফ। আর পুরো অভিযানের ব্যবস্থাপক হিসেবে ছিলেন ফরহান জামান।

সংবাদ সম্মেলনে ডা.বাবর বলেন, ভেতো আর ঘরকুনো হিসেবে বাঙালির যে দুর্নাম, সেটি বদলাতে চাই। পশ্চিমারা দূরদেশ থেকে এসে হিমালয়ে কীর্তি গড়ে, অথচ আমাদের পাশে থাকা হিমালয়ে আমরা তেমন উপস্থিত নই। এবার আমার স্বপ্ন পূরণ হলো। আমি চাই, লাল-সবুজ পতাকা ১৪টি আটহাজারি শিখরেই উড়ুক। পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের পতাকা হাতে বাকি দশটি শৃঙ্গেও দাঁড়াতে চান তিনি।

এদিকে বাবরের সহ-অভিযাত্রী তানভীর আহমেদও একই দিনে পৌঁছান মানাসলুর শীর্ষে। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক মাউন্টেনিয়ারিং প্রশিক্ষণ না থাকলেও তিনি নিয়মিত অনুশীলন, ক্লাবের সহায়তা ও একাগ্রতায় প্রস্তুতি নেন। তানভীর বলেন, দেশে হিমবাহ না থাকায় প্রশিক্ষণ সীমিত ছিল। কিন্তু একাগ্রতা আর নিয়মিত অনুশীলনই আমাকে সাহায্য করেছে। আট হাজার মিটার উচ্চতায় নিশ্বাস নেওয়াটাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবু সফল হয়েছি, ভবিষ্যতে আরও শৃঙ্গে ওঠার স্বপ্ন রাখি।

মানাসলু অভিযানে কোনো বড় প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছিলেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে বাবর বলেন, এবার মানাসলু, কঠিন প্রস্তুতি—সহজ অভিযান হয়ে গেছে আমার জন্য। আমরা পুরো যাত্রাটা উপভোগ করেছি। এটা আমি সবাইকে বলি, পর্বতে অনেকে যেতে চায়। সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে গেলে আপনি উপভোগ করবেন। আর না হলে আপনি লোকজনকে কষ্টের গল্প বলবেন। কষ্টটা যদি আনন্দটাকে ছাপিয়ে যায়, তাহলে আমার মনে হয় না কারো পাহাড়ে যাবার দরকার আছে। কারণ আমি উপভোগ করতে যাচ্ছি।

কৃত্রিম অক্সিজেন ছাড়া মানাসলু আরোহণের কারণ জানতে চাইলে বাবর আলী বলেন, সব সময় দেখে এসেছি পশ্চিমারা সচরাচর এসব পাগলামিগুলো করে থাকে। বাঙালি ঘরকুণো ছিল বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটা ট্যাগ লাগানো থাকে।


এক প্রশ্নের জবাবে বাবর আলী বলেন, এ বছরে দুইটা আট হাজারি পর্বত হয়ে গেছে। সামনে পরিকল্পনা হচ্ছে—ধীরে ধীরে বাকি যে ১০টা আট হাজার মিটার বাকি রয়ে গেছে। আই লাইক টু মুভ টু পাকিস্তান। পাকিস্তানে পাঁচটা আট হাজার মিটার পর্বত আছে। এর মধ্যে আমার স্বপ্নের একটা হলো নাঙ্গা পর্বত। সামনে আমি নাঙ্গা পর্বতের দিকে যেতে চাই। ”


মানাসলু আরোহণকারী তানভীর আহমেদ বলেন, সবচেয়ে কঠিন হলো উচ্চতা। একটা নির্দিষ্ট উচ্চতার উপরে বিষয়টা ভিন্ন। সেখানকার তাপমাত্রা ও আবহাওয়ার সাথে শরীরকে অ্যাডজাস্ট করানো এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা। ক্যাম্প ১ থেকে ক্যাম্প ২ এবং ক্যাম্প ৩ থেকে ক্যাম্প ৪ এর রাস্তা কঠিন। অনেক বড় উচ্চতা একদিনে আরোহণ করতে হচ্ছে। এটা বেশ কঠিন।

প্রসঙ্গত, ডা.বাবর আলী দেশের শীর্ষস্থানীয় পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স এর সাধারণ সম্পাদক এবং তানভীর আহমেদ এই ক্লাবের মাউন্টেনিয়ারিং বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত। ডা. বাবর আলী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নজুমিয়া হাটের লেয়াকত আলী ও লুৎফুন্নাহার বেগমের দ্বিতীয় সন্তান। তানভীর গতবছর অন্যতম টেকনিক্যাল চূড়া আমা দাবলাম সামিট করেন, প্রথম বাঙালি হিসেবে যে পর্বত ২০২২ সালে সামিট করেছিলেন বাবর। ভিএফ এশিয়া বাংলাদেশ এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত তানভীর কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার খরমপট্টি এলাকার অ্যাডভোকেট তারেক উদ্দিন আহমদ এবং শিরীন আহমেদের প্রথম সন্তান এবং নিজেএক কন্যা সন্তানের পিতা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ২০০৬ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী।  

এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।