চট্টগ্রাম: ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে (পিএসসি) পাশের হার গত বছরের তুলনায় কমেছে। এবছর জেলায় ৯৭ দশমিক ৮৭ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
অপরদিকে ইবতেদায়ি পরীক্ষায় এবছর পাশের হার ৯৩ দশমিক ৯৩।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করেন। এসময় তার সঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. দৌলতুজ্জামান খান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা ও সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহির উদ্দীন চৌধুরী।
জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ভয় দূর করতেই পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার আয়োজন। কে কত ভালো রেজাল্ট করেছে তাকে মোটেও বিবেচনায় আনা হয়নি।
পিএসসি পরীক্ষায় এ বছর পরীক্ষার্থীর ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ৬০৬ জন। এর মধ্যে কৃতকার্য হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৭ জন শিক্ষার্থী। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৪ হাজার ৭২২ এবং ছাত্রীর সংখ্যা ৭৫ হাজার ৮৮৪।
পাশের হারের মতো এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ৫১১ জন, যা গতবার ছিল এবছর ১২হাজার ৫৯১ জন।
পাশের হার কমার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, এবারের সমাপনী পরীক্ষায় যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। যার কারণে শিক্ষার্থীরা ২৫ নম্বরের পরিবর্তে ৩৫ নম্বরের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। এর প্রভাবে পাশের হার কিছুটা কমতে পারে।
অপরদিকে ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় চট্টগ্রামে ২৩ হাজার ৩০৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে ২১ হাজার ৮৯০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ হাজার ৪৬৯ জন ছাত্র-ছাত্রী।
পিএসসিতে এগিয়ে মফস্বল, ইবতেদায়িতে নগরী
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সামগ্রিক ফলাফলে এবার স্কুলগুলোতে শহরের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে মফস্বলের শিক্ষার্থীরা। তবে, ইবতেদায়িতে নগরীর শিক্ষার্থীরা এগিয়ে রয়েছে।
পিএসসিতে এবার চট্টগ্রাম জেলায় প্রথম হয়েছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা। এ উপজেলায় পাশের হার ৯৯ দশমিক ৫৩। দ্বিতীয় হয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলা। এ উপজেলায় পাশের হার ৯৯ দশমিক ৫১। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পটিয়া উপজেলা। এ উপজেলায় পাশের হার ৯৯ দশমিক ০৬।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা বলেন, এবার যেহেতু যোগ্যতা ভিত্তিক প্রশ্ন বেশী ছিল, শিক্ষার্থীদের নিজের যোগত্যা থেকেই এসব সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। সুতরাং মফস্বলের শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিক যোগ্য প্রমাণ করেছে।
ইবতেদায়ীতে জেলায় প্রথম হয়েছে নগরীর বন্দর থানার শিক্ষার্থীরা। এখানে পাশের হার ৯৯ দশমিক ৩৮। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চাঁন্দগাও থানায় ৯৯ দশমিক ২২ শিক্ষার্থী পাশ করেছে। পাশের হার ৯৮ দশমিক ৯২ নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ডবলমুরিং থানা।
কোচিং সেন্টারই কাল হলো নগরীর
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে নগরীর স্কুলগুলো পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে শিক্ষকদের কোচিং সেন্টার নির্ভরতা দায়ী করেছেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নগরীর স্কুলগুলোতে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ অনেকদিন ধরেই আছে যে, তারা কোচিং সেন্টারে পড়ানোর জন্য ক্লাসে ভালো করে পড়ান না। নগরীর শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে থাকার এটা একটা কারণ হতে পারে।
“মফস্বলের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে রয়েছে এটা অবশ্যই খুশির সংবাদ। তাদের ফল দেখেই বোঝা যায় সেখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় বিষয়ে অনেক যত্নবান ছিলেন। ”
কোচিং সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা সবসময়ই কোচিং সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে সক্রিয় থাকি। সামনেও কোচিং সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৪