ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ভয়ংকর ‘ওয়ান টাইম’

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২০
ভয়ংকর ‘ওয়ান টাইম’ ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম: সামাজিক অনুষ্ঠান, বনভোজন এবং দোকানে খাবার ও পানীয় পরিবেশন করতে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে থার্মোকলের ‘ওয়ান টাইম’ বাসনকোসন। বিভিন্ন মার্কেটের ক্রোকারিজ দোকানে মিলছে এসব গ্লাস, প্লেট, চামচ ও বক্স। কিন্তু প্রচারণা ও সচেতনতার অভাবে এই পণ্যের ক্ষতিকর দিকগুলো রয়ে যাচ্ছে আড়ালে।

রসায়নবিদরা বলছেন, থার্মোকলে থাকে থার্মোপ্লাস্টিক যৌগ পলিস্টাইরিন।  স্টাইরিন ও ফেনিলিথিন পলিমারাইজেশনে পলিস্টাইরিন যৌগ তৈরি হয়।

 এটি বিষ। পাশাপাশি ‘ওয়ান টাইম’ পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ‘বিসফেনল এ’ ও নানা রাসায়নিক।
আর এসব রাসায়নিক খাবারের সঙ্গে প্রবেশ করে শরীরের ভারসাম্য নষ্টের পাশাপাশি কারণ হতে পারে ক্যান্সারেরও। বস্তুটি দেখতে যতটা সাদা, এর কাজ ততটাই কালো।

হালকা, সহজে পরিবহনযোগ্য ও সস্তা হওয়ায় অনেকে খাবারের প্লেট থেকে চায়ের কাপ সবকিছুতেই ‘ওয়ান টাইম’ পণ্য ব্যবহার করেন।  এছাড়া পরিষ্কার করার ঝামেলা থেকে রেহাই পেতেও মানুষ বেছে নিচ্ছেন অস্বাস্থ্যকর এই পণ্য।

পরিবেশবিজ্ঞানীরাও বলছেন, থার্মোকলের ব্যবহার বন্ধ হওয়া দরকার। এটি মাটির সঙ্গে মেশে না। গাছের পানি শোষণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। থার্মোকল পোড়ালে সৃষ্ট কালো ধোঁয়া পরিবেশ দূষণ করে।

সোমবার (০৬ জানুয়ারি) এক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ‘ওয়ান টাইম’ ও পলিথিন পণ্য ব্যবহার বন্ধে ব্যবস্থা নিতে এক বছর সময় বেঁধে দিয়েছেন উচ্চ আদালত। আদেশে এক বছরের মধ্যে দেশের উপকূলীয় এলাকায় পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগ এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার, বহন, বিক্রি ও বাজারজাতকরণ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার বন্ধের বিষয়টি কঠোরভাবে কার্যকর করতে বাজার তদারকি, উৎপাদন, কারখানা বন্ধ ও যন্ত্রপাতি জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরাঁয় ‘ওয়ান টাইম’ পণ্য ব্যবহার বন্ধ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মো. কামরুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিসফেনল এ’ এক ধরনের ক্ষতিকর হরমোনের মতো কাজ করে, যেটা আমাদের শরীরের স্বাভাবিক হরমোন তৈরির কার্যকারীতা নষ্ট করে দেয়। ‘ওয়ান টাইম’ পণ্যে ঠাণ্ডা খাবার রাখলে তেমন একটা ক্ষতি না হলেও গরম খাবার সংরক্ষণ করা ভয়ংকর। গরম তাপে বেরিয়ে আসা রাসায়নিক খাবারের সঙ্গে মিশে পাচনতন্ত্রে ঢুকে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের অভিমত, ‘ওয়ান টাইম’ পণ্যে রাখা গরম খাবার ও পানিয় গ্রহণে হৃদরোগ, রক্তনালীর অসুখ, নারীদের ব্রেস্ট ও ওভারিয়ান ক্যান্সার এবং পুরুষের প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এনভায়রন্টমেন্ট সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) এর জরিপ বলছে, দেশে মাসে বেচাকেনা হয় ২৫০ টন ‘ওয়ান টাইম’ পণ্য। ডাস্টবিন থেকে যেসব প্লাস্টিক পণ্য নেওয়া হয়, তার মধ্যে আছে হাসপাতালের বর্জ্যও। কারখানায় রিসাইক্লিং করা পণ্য, বিশেষ করে থার্মোকলের বাসন ঠিকমতো জীবাণুমুক্ত হয় না।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ঋষিণ দস্তিদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘ওয়ান টাইম’ পণ্য অবশ্যই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। নানান রোগের সংক্রমণ, অ্যালার্জি, পাচনতন্ত্রের সমস্যার কারণও এটি। পচনশীল না হওয়ায় এটি মাটির সঙ্গে মেশে না, পোড়ালে বিষাক্ত ধোঁয়া শরীরে ঢুকে সৃষ্টি হতে পারে ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্ট।

এ অবস্থায় ‘ওয়ান টাইম’ এর বিকল্প হিসেবে কাগজের তৈরি পণ্য ব্যবহারের কথা বলছেন পরিবেশবিদরা।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২০
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।