কলকাতা: বিরোধীরা সরকারকে আক্রমণ করতে পশ্চিমবঙ্গে যে ধরনের কুকথার ব্য়বহার করে, তা গোটা দেশে কোথাও হয় না বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপধ্যায়।
তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধানের ভাষ্য, দীর্ঘদিন বিরোধী আসনে থাকলেও কখনও ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করিনি।
পহেলা জানুয়ারি ছিল তৃণমুল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিসব, সেই উপলক্ষে সোমবার (২ জানুয়ারি) দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে বক্তব্য় রাখতে গিয়ে বিরোধীদের ভূমিকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গে মুখ্য়মন্ত্রী তথা শাসক দলের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিরোধী নেত্রী হিসেবে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন তিনি। সেকথা মনে করিয়ে দিয়ে কিছুটা হতাশার সুরেই মুখ্য়মন্ত্রী বলেন, মা মাটি মানুষের সরকার ১১ বছর হলো। তৃণমূল কংগ্রেস ২৫ বছর পার করেছে। অনেক কর্মী, সমর্থককে হারিয়েছি। সংগ্রাম করতে গিয়ে জীবন কেটে গিয়েছে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম অনেক পরে হয়েছে। ’৯২ সালে ফিরে যান, ‘৯৩ সালের একুশে জুলাই গুলি চলেছিল। হাওড়া, বেহালা, কোচবিহার, রাজারহাট, শান্তিপুরে গুলি চলেছিল। সেসব দিন অনেক কষ্টে পার করেছি। তা স্বত্তেও ধ্বংসাত্মক কিছু করিনি, গঠনমূলক কাজ করেছি। বিরোধী হয়ে কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। এখন বিরোধীরা প্রতিটা বিষয় নিয়ে কুৎসা করছে। তারা যে কুকথা বলে, গোটা দেশে তা বলা হয় না।
আগে ইতিহাস জানতে হবে উল্লেখ করে মমতা বলেন, যারা নতুন উঠেছে, যারা শুধু ১১ বছরের আমাদের সরকার দেখেছে। বিরোধী অবস্থান দেখেনি, তাদের তো পার্টির ইতিহাস জানতে হবে। এর জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। অনেক লড়াই করতে হয়েছে। অনেকেই ভেবেছিল কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল কংগ্রেস হবে না। অনেকে বলেছিল তোমরা পারবে না। আমরা শুনিনি, কেনো শুনিনি, ভাবতাম কংগ্রেসে থেকেই সিপিএম -এর অত্যাচারের অবসান হবে। কিন্ত হয়নি।
তৃণমূল নেত্রী বলেন, এখন যেমন রাম (বিজেপি) আর বাম মিশে গেছে। একসময় সিপিএম আর কংগ্রেস মিশে গিয়েছিল। আমরা তখন বলতাম ওরা তরমুজ। বাইরে সবুজ ভেতরে লাল। সেই সিপিএম -এর আবসান করেছি। কারণ, আমাদের একটা মতাদর্শ আছে। ওদের নেই। কারণ আমারা ধ্বংসাত্মক কিছু করি না। সন্ধ্যে বেলায় একদলের কোনো কাজ নেই মুখে পাউডার মেখে টিভির সামেনে খালি সরকারের কুৎসা করবে।
তবে মুখ্য়মন্ত্রীর এই দাবিকে পাল্টা দিয়েছেন বিরোধীরা। তাদের পাল্টা প্রশ্ন, ধ্বংসাত্মক রাজনীতি না করলে বিরোধী থাকাকালীন বিধানসভায় ভাঙচুর কারা করেছিল?
এদিন আলিমুদ্দিন সদর দফতরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য় সুজন চক্রবর্তী বলেন, মুখ্য়মন্ত্রী ঠিক বলেছেন। ভারতবর্ষের কোথাও এত দুর্নীতি হয় না। মুখ্য়মন্ত্রী যখন বলেন, বিরোধীতা করলেই ‘বিরোধীদের জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলব’, তার থেকে বড় কুকথা আর কী হতে পারে?
পুরনো ভিডিও চালিয়ে সুজন বলেন, উনি (মমতা) বিধানসভা ভবন ভাঙচুরের কথা ভুলে গেছেন? যিনি সেই ভাঙচুরে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। ধ্বংসাত্মক রাজনীতি ওনারা করেন না। তাহলে ওটা কি অশরীরীরা করেছিল। দেখে তো মুখ্য়মন্ত্রীর মতোই লাগে। নাকি অন্য় কেউ? মুখ্য়মন্ত্রী যদি এমন কিছু বলেন যা একশো শতাংশ মিথ্য়ে এবং হাস্য়কর। এছাড়া রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা, তোলাবাজি, চাঁদাবাজিসহ একাধিক বিষয় সাংবাদিকদের প্রকাশ্যে আনে সুজন।
একই ভাবে বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, তৃণমূল যে দুর্নীতি করেছে, তাতে তিনটি প্রজন্মের ভবিষ্য়ৎ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এরপর তৃণমূল পঞ্চায়েত ভোটের আগে নতুন যে প্রকল্পই নিয়ে আসুক না কেন, মানুষ আর তা গ্রহণ করবে না।
প্রসঙ্গত, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটকে পাখির চোখ করেছেন মমতা। তিনি ভালো করে জানেন, ২০২৪ এ লোকসভায় ভালো ফল করতে পঞ্চায়েত ভোটে ভালো ফল করতেই হবে। এদিন সে উপলক্ষে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচির ঘোষণা করছে দল। সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রামস্তরের সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছাচ্ছে কি না, দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে সেই খবর নেবে মমতার দল। নাম দেওয়া হয়েছে দিদির সুরক্ষা কবচ।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২২
ভিএস/এসএ