কলকাতা: আমার দেশ বলে আমি বিভেদ করিনি। গোটা বিশ্বই আমার মাতৃভূমি বলে মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, জি-২০ সম্মেলনের আয়োজনে বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে কলকাতা। আপনাদের দেশ, আমার দেশ বলে আমি বিভেদ করিনি। গোটা বিশ্বই আমার মাতৃভূমি। আপনারা যখন এখানে এসেছেন, তখন এই বাংলা আপনারও। এত বড় একটা সম্মেলনের আয়োজন করতে পেরে এই মঞ্চে বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়ে আমি ধন্য।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) কলকাতার বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে সম্মেলনের উদ্বোবনী করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের আলোচনার মূল বিষয় ছিল অর্থনীতি। তাই মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে উঠে এলো রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গ।
২০টি গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সম্মিলিত ভারতে শুরু হয়েছে জি২০ সম্মেলন। বুধবার (১১ জানুয়ারি) পর্যন্ত তিন দিনের এ সম্মেলন চলবে সংস্কৃতির শহর কলকাতায়। জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির এটি ১৮তম বার্ষিক সম্মেলন।
এক বছরব্যাপী এই সম্মেলনে এই প্রথম পৌরোহিত্য করছে ভারত। এবারের সম্মেলনের মূল বিষয় ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ভারতের সনাতন ভাবনা তুলে ধরাই লক্ষ্য। তবে গোটা বিশ্বের আর্থিক ও পরিবেশগত উন্নয়নের লক্ষ্য কী কী করা যায়, সেটাই সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়।
রাজ্যের একাধিক ভালো দিকের কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। কোনো কোনো দিক থেকে বাংলা এগিয়ে তার খতিয়ান তুলে ধরেন সম্মেলনে।
করোনা পরিস্থিতে পশ্চিমবঙ্গের জিডিপির হার বৃদ্ধি, রাজস্ব বাড়ানোর বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনাকালের দু’বছরে সব দেশ খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। আমাদের রাজ্যও তার থেকে ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আমাদের রাজ্যের জিডিপি বেড়েছে ৪ গুণ। এই সময়ে আমরা ১ দশমিক ২২ কোটি চাকরির ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি বাংলার বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প কীভবে মানুষের কাজে লাগছে, তাদের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে সে কথাও তুলে ধরেন।
এছাড়া মমতার সরকারের জনপ্রিয় প্রকল্প কন্যাশ্রী (নারী স্বনির্ভর) ও দুয়ারে সরকার প্রকল্প (সরকারি কাজ স্থানীয়দের মহল্লায়) বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিকস্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে কন্যাশ্রী প্রকল্প এবং দুয়ারে সরকার উদ্যোগও জাতীয়স্তরে সমাদৃত ও সদ্য ভারত সরকারের পুরস্কার জিতেছে। এই দুই প্রকল্পর উদ্যোগ রাজ্য সরকারের।
মমতা আরও বলেন, আমাদের সরকার রেশনের মধ্য দিয়ে রাজ্যের সব মানুষকে বিনামূল্যে চাল এবং খাবার দেয়। রাজ্যের নারী শিক্ষার অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণে এডুকেশনাল স্কলারশিপ চালু হয়েছে। নারীদের এই স্কিমের জন্য আমরা আন্তর্জাতিক সম্মানও পেয়েছি।
রাজ্যবাসীর সুবিধায় শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্যসহ নানা ক্ষেত্রে তার সরকার পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর বলেও জানান মমতা।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্পের সুবিধার কথা বলেন তিনি।
মমতা বলেন, গত নভেম্বরে আমাদের রাজ্যে আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে ৭৬টি দেশে অংশ নিয়েছিল। আবার রাজ্য সরকার পরিচালিত ‘বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলন’ এ ৪৬টি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল। বিশদে না হলেও এই বিষয়গুলি আপনাদের জানাতে চাই।
এরপরই মমতা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, সাধারণ মানুষের উন্নয়ন ছাড়া দেশ বা পৃথিবীর উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই সবাইকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। বৃহৎ গণতন্ত্রে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা একটা রাজনৈতিক দল দ্বারা পরিচালিত সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারও ভিন্ন রাজনৈতিক দল পরিচালিত। কিন্তু সকলের লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষের উন্নয়ন। বামপন্থিরা ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর তাদের জমানা শেষ হয়েছে। তারপর আমরা ক্ষমতায় এসেছি। এই নিয়ে তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসেছি। তারপর থেকেই কাজ করে চলেছি আমরা। কারণ, ক্ষমতায় এসে দেখেছিলাম অর্থনীতি থেকে শুরু করে সবেতেই অস্থিরতা।
উন্নয়নমূলক কাজ পুরোপুরি আটকে রয়েছে। কিন্তু আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি তারপর থেকে আমরা কাজ করে এগিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২২
ভিএস/এএটি