কলকাতা: কোন ফুলে মুকুল রায়? তৃণমূলের জোড়াফুলে নাকি বিজেপির পদ্মফুলে? এ প্রশ্নেই সোমবার (১৭ এপ্রিল) রাত থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতির উত্তাল। তৃণমূল থেকে বিজেপি এবং বিজেপি থেকে ফের তৃণমূলে ফেরা।
একসময় বাবা মুকুলের সঙ্গে বিজেপিতে গেলেও ছেলে শুভ্রাংশু রায় এখন তৃণমূলে রয়েছেন। তার দাবি, বাবাকে বিজেপির লোকেরা অপহরণ করে দিল্লি নিয়ে গেছে।
কিন্তু, দিল্লি বিমানবন্দরে নেমেই কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি স্বেচ্ছায় দিল্লি গিয়েছেন। কেউ তাকে জোর করেননি।
প্রসঙ্গত, মুকুল তৃণমূলে ফিরলেও বিজেপির টিকিটেই বর্তমান বিধায়ক ওই অঞ্চলের। মুকুল জানান, দিল্লিতে একাধিক রাজনৈতিক কাজ নিয়েই গিয়েছেন তিনি। কথা বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গেও। পাশাপাশি মুকুলের দাবি, তিনি কখনওই তৃণমূলে ছিলেন না। বিজেপির হয়েই কাজ করতে চান। তার কথায়, আমি বিজেপির বিধায়ক। তৃণমূলে কোনওদিন ছিলাম না। তৃণমূলে থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কাজ করাও যায় না। আমি বিজেপির হয়েই আরও বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে চাই। সেই কথাই নাড্ডাজি, শাহজিকে জানিয়েছি।
এদিকে তৃণমূলের কাছে বিপাকে পড়েছেন ছেলে শুভ্রাংশু রায়। তিনি দুদিন ধরে দাবি করে আসছেন, বাবার সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করতে পারেননি। অপরদিকে দেখা যাচ্ছে, বাবা দিল্লি থেকে টিভি চ্যানেলে জানাচ্ছেন, তার সঙ্গে ছেলের আগেই কথা হয়েছিল। কোন দলের হয়ে রাজনীতি করবেন, সেটা এখনও ঠিক করেননি। তবে পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ছেলের যে বিজেপি করা উচিত। সেই পরামর্শও টিভি মারফত দিয়েছেন মুকুল রায়।
সাবেক বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় দাবি করেছিলেন, বাবা দিল্লি পৌঁছনোর পর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এমনকি, বাবা অপহরণ হয়েছে বলে পুলিশে ডায়েরিও করেন শুভ্রাংশু। তিনি বলেন, আমি বলতে পারি না বাবা উন্মাদ। কিন্তু, তার মানসিক পরিস্থিতি ঠিক নেই। পারকিনসন্স, ডিমেনশিয়া রয়েছে। এই অবস্থায় আমাকে না জানিয়ে দুই সঙ্গীকে নিয়ে দিল্লি গিয়েছেন বাবা। অসুস্থ মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বদনাম করার জন্য রাজনীতি করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীও ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন।
মুকুল আবার চ্যানেলে জানিয়েছেন, পরিবারকে না জানিয়েই কখনও কখনও বেরিয়ে আসতে হয়। বাড়ি থেকে বেরোলেই কেউ যদি নিখোঁজের ডায়েরি করে দেয়, তা হলে কী করা যাবে? ছেলের সঙ্গে তো সোমবার সন্ধ্যাতেই ফোনে কথা হয়েছে। এখন যা পরিস্থিতি, নিজের জন্য, পরিবারের জন্য শুভ্রাংশুরও বিজেপি করা উচিত। যা শুনে শুভ্রাংশু বলেছেন, আমার তো প্রশ্ন বাবার মানসিক সুস্থতা নিয়েই।
তবে এই নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহে বিড়ম্বনায় পড়েছে তৃণমূল ও বিজেপি, দু’দলই। রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, অভিষেককে নিয়ে অনেকদিন ধরেই অনেক কিছু চলছে। উনি (মুকুল) তো কিছু বলেননি। এখন তার ছেলে অভিষেকের নাম করছেন। একটা জগাখিচুড়ি পরিস্থিতি। কিন্তু তাতে অভিষেকের নাম টেনে আনার কোনও যুক্তি নেই। তার কটাক্ষ, মুকুলবাবু তিনদিন বিজেপিতে থাকেন। তিনদিন তৃণমূলে। রোববার বাসায় বসে চা খান।
অন্যদিকে, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, উনি তো বিধায়ক। গত ৬ মাস ওনার (মুকুল) কোনও খবর পেয়েছেন? উনি লস্ট কেস। ওকে নিয়ে মাথা ঘামানোর কারও সময় নেই।
তবে যে যাই বলুক-না কেনো। মুকুল যে তৃণমূল দলের অন্য এক সম্পদ তা সবাই জানেন। তৃলমূলের জন্মলগ্ন থেকে মমতার সঙ্গে ছিলেন তিনি। অর্থাৎ তৃণমূলের অন্দরমহলের সব খবর তার নখদর্পনে। কোন নেতানেত্রী রাজনৈতিকভাবে কতটা স্বচ্ছ বা কারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে তা প্রায় সবই তার জানা। যে কারণে বিজেপি ছেড়ে মুকুল তৃণমূলে আসতেই দলের সর্বভারতীয় স্তরে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যদিও তৃণমুল এখন সর্বভারতীয় দল নয়। সেই স্বীকৃতি বাতিল করে দিয়েছে কমিশন। এখন আঞ্চলিক দল। তবে পশ্চিমবঙ্গের নিরিখে যথেষ্ট শক্তিশালী তৃনমূল। ফলে ২০২৪ সালের ভারতে লোকসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে আর কি কি নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে এখন সেটাই দেখার।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, ১৯ এপিল, ২০২৩
ভিএস/এসএ