ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

দিল্লির আশীর্বাদ দিল্লি মেট্রো, ঢাকা মেট্রো কবে

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৪
দিল্লির আশীর্বাদ দিল্লি মেট্রো, ঢাকা মেট্রো কবে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দিল্লি থেকে: দিল্লিকে বদলে দিয়েছে মেট্রো রেল, একথা দিল্লিবাসীর। এক সময়ে ট্রাফিক জ্যামে নাকাল নগরী এখন অনেক বেশি স্বস্তিতে।

আর তাতে খুশি সবাই।

কুতুব মিনার থেকে রাজিব চক পর্যন্ত নিয়মিত যাত্রী দোকান কর্মচারী বীরেন্দর সিং কিংবা কলেজছাত্রী মাধবী রয় তো খুশি হবেনই, কারণ তারা এর সুবিধাভোগী। তাদের সঙ্গে অটোওয়ালা ভগবান দাশও খুশি। তার কথা- যাক না প্যাসেঞ্জার মেট্রো রেলে, রাস্তার যানজট কমেছে সেটা অনেক বড় কথা।

দিল্লিতে মেট্রোরেল ছিলো না। তবে দেখতে দেখতে এর উদ্বোধনের পর এক যুগ পার হয়ে গেছে। দিনটিকে স্মরণে রেখেছেন অনেক যাত্রী। ২০০২ সালের ২৪ ডিসেম্বর সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন।

সাহদরা থেকে টিস হাজারি মাঝে ছয়টি স্টেশন। এই ছিলো প্রথম ধাপের মেট্রো স্টেশন। প্রথম দিনেই যাত্রী ওঠে দশ লাখ। সেই শুরু। এরপর দিনে দিনে আরও বেশি মানুষকে যাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছে দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন। এখন প্রতি দিন ৩০ লাখ মানুষ এই ট্রেনে চড়ে তাদের গন্তব্যে যাওয়া আসা করছে। বলা হয়, এখন আর দিল্লির মানুষ মেট্রো রেলকে বাদ দিয়ে তাদের জীবন কল্পনাই করতে পারে না।

দিল্লি মেট্রোর সৃষ্টি একটি নতুন যুগের সূচনা, এর ফলে বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত এই নগরীতে যান চলাচল পদ্ধতিতে বিপ্লব ঘটে গেছে, এমনটাই বলছে ডিএমআরসি।

তাদের মতে, দিল্লি মেট্রো এখন অন্যান্য সংস্থা বা বিভাগের কাছে কেস স্টাডি হিসাবে দেখা দিয়েছে।

১৮৬৩ সালে মাত্র ৬ কিলোমিটার পাতাল রেল লাইন দিয়ে লন্ডনে মেট্রো রেলের যাত্রা শুরু হয়। এরপর যুক্তরাজ্য, যুক্তরাজ্য সেই দেড়শ’ বছর আগেই এই রেল ব্যবস্থা দিয়ে তাদের ট্রাফিক ব্যবস্থায় বিপ্লব এনেছে। এরপর ধীরে ধীরে বিশ্বের ১২০টি নগরীতে চালু হয়েছে এই মেট্রো রেল। দিল্লি তারই একটি।

দিল্লি মেট্রো রেল অন্য অনেক দেশের চেয়ে আধুনিক ও গোছানো। যাত্রী সেবায় এই রেল অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে, এ দাবি করলেন অভিজ্ঞ কয়েকজন। এই রেল এখন দিল্লির আশীর্বাদ, বললেন তারা।

তাদের বক্তব্যের প্রমাণ মেলে মেট্রোরেল মিউজিয়ামে গিয়ে। রেল রুটের প্যালেট চকে নামলেই সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠলেই এই রেল জাদুঘর।

সেখানে তুলে ধরা হয়ে এই রেললাইন তৈরির যাবতীয় তথ্য ও ইতিহাস। রেল লাইনের মডেল, কোন পদ্ধতিতে মাটির নিচে সুরঙ্গ পথ কেটে এটি বানানো হয়েছে, কোন মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে, কোন ধরনের ইস্পাতে তৈরি হয়েছে রেলের ট্র্যাক এসব কিছুই রাখা আছে এই মিউজিয়ামে।

ভিডিওটি দেখতে নিচে ক্লিক করুন:


ডিএমআরসি’র ঘোষণা, যাত্রীর জন্য আরামদায়ক, নিরাপদ ও নির্ভরতার যাত্রা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

এক যুগ পার করলেও দিল্লি মেট্রো অবশ্য তার আধুনিকতম রুপ পায় ২০১২ সালে। সেবার কমনওয়েলথ গেমস হোস্ট করে দিল্লি। আর সে গেমসকে সামনে রেখেই মেট্রো রেল পূর্ণাঙ্গ রূপ নেয়। তবে এই সেবা তার সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা পেয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের কারণে। এতটুকু ছাড় দেওয়া হয় না এ ক্ষেত্রে। ডিএমআরসি বলছে, তাদের এই ব্যবস্থাপনার মূল মন্ত্রই তিনটি, সময়ানুবর্তিতা, একাগ্রতা ও পেশাদারিত্ব। এই তিনটি বিষয় নিশ্চিত করেই এগিয়ে যাচ্ছে দিল্লি মেট্রো।

আর সৌন্দর্য ও সেবা অটুট রাখতে সাতটি ‘না’ নিশ্চিত করছে ডিএমআরসি। এগুলো হচ্ছে- রেল স্টেশনের মধ্যে কোনো খাবার বা পানীয় ঢুকবে না, কোনো ময়লা ফেলা যাবে না, ধূমপান নয়, থুথু ফেলা যাবে না, দাহ্য পদার্থ ভেতরে ঢুকবে না, বড় লাগেজ নিয়ে ট্রেনে ওঠা যাবে না। কোনোটি ভঙ্গ করলেই জরিমানা। থুথু ফেললে ২০০ রুপি জরিমানা গুণতে হচ্ছে যাত্রীদের।

এভাবেই ভালো থাকছে দিল্লি মেট্রো রেল। যুক্তরাষ্ট্র, ‍যুক্তরাজ্যের মতো দিল্লি মেট্রোও হয়তো একসময় শত শত বছরের ইতিহাস গড়বে। কারণ এক মহান উদ্দেশ্যেই এই মেট্রো রেল প্রকল্প গৃহীত, তা হচ্ছে মানবসেবা।

মেট্রো রেল জাদুঘরে ঢুকলে প্রথমেই দেখা যাবে সেই মহান উদ্দেশ্য নিয়ে পতঞ্জলীর বিখ্যাত বাণী লেখা রয়েছে: ‘যখন তুমি কোনো মহান উদ্দেশ্যে অনুপ্রাণিত হও, হাতে নাও কোনো অনন্য সাধারণ কাজ, তখন তোমার চিন্তাশক্তি সকল বাঁধ ভেঙ্গে এগিয়ে যায়, মন সকল সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে উঠে আসে, সবদিকেই তুমি সতর্কভাবে এগিয়ে যেতে থাকো, আর তাতেই তুমি নিজেকে একটি নতুন বিস্ময়কর বিশ্বে খুঁজে পাও। যেখানে ঘুমিয়ে থাকা সকল শক্তি ও মেধা জেগে ওঠে, আর তুমি তোমার চেষ্টার এমন রূপ দিতে পারো যা তুমি স্বপ্নেও ভাবো নি। ’

দিল্লি মেট্রো দেখে ভাবি, বাংলাদেশও তো পারে এমন একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে। যা হবে দিল্লির মতোই ঢাকার আশীর্বাদ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৪

** আহমেদাবাদের কাপড় জগতে নয়া মনীষা রাণী!
** মোদীর গুজরাট উন্নয়নের আইকন ‘গিফটসিটি’
** চকচকে পরিপাটি ‘গান্ধীনগর’
** আহমেদাবাদ থেকে বাংলাদেশ যাচ্ছে ব্লাড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
** ঘুরে আসি আজমীর
** দিল্লি প্রেসক্লাবে সাবসিডি নেই!
** দিল্লির রাতে সস্তা দোকানিরা...

** মাকরানার হোয়াইট মার্বেলেই অনিন্দ্য তাজমহল

** অ্যারাভেলি পর্বতে ঘেরা ভ্রাতৃত্ব
** ৩৬ ঘণ্টার বিচিত্র রূপ!

** ইন্টারনেটে বাংলাদেশ এগিয়ে

** সেই তো আমরাই!
** লাইফলাইন অব ইন্ডিয়া
** দিল্লি কত দূর?
** ভারতীয় ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশের মর্যাদা
** গ্রীনলাইনে ভুগতে ভুগতে কলকাতা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।