আহমেদাবাদ(গুজরাট), ভারত থেকে: সবরমতি নদীর তীরেই গুজরাটের সবচেয়ে বড় শহর আহমেদাবাদ। মূলত এই নদী শহরটিকে দু’ভাগে ভাগ করেছে।
এসবই ছিল কয়েক বছর আগের ঘটনা। এখন এর সবই অতীত। নদী তীরের দু’পাশ সরেজমিনে ঘুরে অতীতের এই বর্ণনার সঙ্গে বর্তমানের কোনো মিলই দেখা গেলো না। নদীর দু’পাশে সবরমতি রিভারফ্রন্ট পার্ক করা হয়েছে। এই পার্কের ভেতরে সারি সারি ফুল ও ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। লাইটিং করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের হাঁটার জন্য করা হয়েছে সুন্দর রাস্তা। কিছুদূর পরপর তৈরি করা হয়েছে বসার স্থান।
![Sabarmati_1 Sabarmati_1](files/August_2014/August_26/Sabarmati_1_666332969.jpg)
বিকেল গড়াতেই এখানে শতশত মানুষ ঘুরতে আসছে। শহরের যান্ত্রিকতা ছেড়ে স্বস্তির নি:শ্বাস নিতে এই পার্কের কোনো বিকল্প নেই। কেউ পায়ে কেডস পরে, কেউবা সপরিবারে গাড়িতে করে আসছেন। তরুণ-তরুণীরাও আসছেন দল বেঁধে। পার্কের পাশ দিয়েই সুন্দর রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এই রাস্তা ধরে রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা।
নদীর পানি এখন স্বচ্ছ। এর দু’পাশের ১০ কিলোমিটার কংক্রিট দিয়ে বাঁধাই করে দেওয়া হয়েছে। সবরমতির ওপর এখন তিনটি সেতু রয়েছে। যা শহরের দু’অংশের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করেছে। নদীর দু’পাশের হাঁটার পথ দিয়ে পথচারীরা নেহরু সেতু থেকে গান্ধী সেতু পর্যন্ত যেতে পারেন। ইচ্ছে করলে বাঁধাই করা কংক্রিটের সিঁড়ি বেয়ে যে কেউ বোটিং করতে পারেন। বিকেল হলে অসংখ্য মানুষ এখানে বোটিং করেন। ২০১২ সালের ১৫ আগস্ট নদীর উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
![Sabarmati_2 Sabarmati_2](files/August_2014/August_26/Sabarmati_2_300147668.jpg)
তবে নদীটিকে এভাবে সুন্দর করে সাজানোর কাজটি সহজ ছিল না বলেই জানালেন আহমেদাবাদের বাসিন্দা সজ্জন কুমার।
তিনি বলেন, এজন্য গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। ৫ লাখ বস্তিবাসীকে পুনর্বাসন করতে হয়েছে। মাদকসেবীদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হয়েছে। এখানে প্রায় ২৫ হাজার ধোপা কাপড় পরিষ্কার করতো। তাদেরকেও পুনর্বাসন করতে হয়েছে। প্রত্যেককে দিতে হয়েছে ক্ষতিপূরণ।
![Sabarmati_4 Sabarmati_4](files/August_2014/August_26/Sabarmati_4_111638363.jpg)
নদী তীরে বেড়াতে আসা মুকেশ ব্যানার্জি বললেন, ৪০০ একর বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার করতে হয়েছে। এজন্য মামলার মুখেও পড়তে হয়েছে মোদী সরকারকে। ৩৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ ও গড়ে ১২৫৩ ফুট প্রস্থের দূষিত নদীটিকে বর্তমান রুপে ফিরিয়ে আনতে সরকার সবরমতি রিভারফ্রন্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড গঠন করে। এই সংস্থাটিকে নদী সংস্কারের সব দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালে প্রথম এই নদীটিকে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিকূলতা ঠেলে তৎকালীন রাজ্য সরকারের সেই উদ্যোগ সফল হয়নি। এরপর ২০০১ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদী সংস্কারের কাজ হাতে নেন এবং সফল হন।
![Sabarmati_3 Sabarmati_3](files/August_2014/August_26/Sabarmati_3_483921252.jpg)
সংস্কারের কাজটি এখনো চলছে। নদী তীরের ২০ কিলোমিটার এলাকাকে কংক্রিটে বাঁধাই করা হবে। নির্মাণ করা হবে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, গলফ কোর্স, ওয়াটার স্পোর্টস পার্ক। সম্পূর্ণ কাজ শেষে এখান থেকে যে আয় হবে তা দিয়েই বছর বছর এর রক্ষণাবেক্ষণ কাজের ব্যয় মেটানো হবে।
সবরমতিকে দেখে ঢাকার বুড়িগঙ্গার কথা খুব মনে হচ্ছিল। দূষিত সবরমতি যদি নতুন রূপ নিতে পারে, তবে কেন দূষিত বুড়িগঙ্গার পাশে ঢাকার নতুন চেহারা হবে না? অবশ্যই হবে। তবে এজন্য চাই পরিকল্পিত উদ্যোগ।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৪
** মোদীর গুজরাট উন্নয়নের আইকন ‘গিফটসিটি’
** চকচকে পরিপাটি ‘গান্ধীনগর’
** আহমেদাবাদ থেকে বাংলাদেশ যাচ্ছে ব্লাড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
** ঘুরে আসি আজমীর
** দিল্লি প্রেসক্লাবে সাবসিডি নেই!
** দিল্লির রাতে সস্তা দোকানিরা...
** মাকরানার হোয়াইট মার্বেলেই অনিন্দ্য তাজমহল
** দিল্লির আশীর্বাদ দিল্লি মেট্রো,ঢাকা মেট্রো কবে
** অ্যারাভেলি পর্বতে ঘেরা ভ্রাতৃত্ব
** ৩৬ ঘণ্টার বিচিত্র রূপ!
** ইন্টারনেটে বাংলাদেশ এগিয়ে
** সেই তো আমরাই!
** লাইফলাইন অব ইন্ডিয়া
** দিল্লি কত দূর?
** ভারতীয় ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশের মর্যাদা
** গ্রীনলাইনে ভুগতে ভুগতে কলকাতা