ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মোদীর জন্য ১০ বছর!

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৪
মোদীর জন্য ১০ বছর! নরেন্দ্র মোদি

ভারত থেকে ফিরে: আওয়াজটা প্রথম শোনা যায় দিল্লিতে। মোদির জন্য দশ সাল বরাদ্দ! এক দোকানিকে উদ্দেশ্য করে ক্রেতা বলছিলেন, দশ সাল থাকতে হবে মোদিকে।

তা হলেই যেসব কাজে হাত দিয়েছেন তা সফল করা সম্ভব হবে। ক্রেতার সঙ্গে একমত দোকানিও।

দিল্লির একটি হোটেলের লবিতে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। নরেন্দ্র মোদি কেমন করছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। কেউ কেউ সোজা-সাপ্টা জবাব দিলেন, ভালোই করছেন, তবে কারও বক্তব্য- এখনই এ ব্যাপারে মত দেওয়ার সময় হয়নি, মাত্রই তো বসলেন ক্ষমতায় দেখা যাক কতটা কি করতে পারেন।

দিল্লি থেকে আহমেদাবাদের পথে বার্থে বিভিন্ন স্টেশনে ওঠানামা করে যাত্রী পাল্টায় জনা দশেক। তাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো মোদিকে থাকতেই হবে দশ বছর। টানা দুই দফা ক্ষমতায় থেকে সৎসাহসের সঙ্গে দেশ পরিচালনা করে যেতে পারলে মোদিই হতে পারবেন দেশের সফলতম প্রধানমন্ত্রী।

গুজরাটের অন্যতম সেরা নগর এই আহমেদাবাদ। এই গুজরাটেই তিন দফা মুখ্যমন্ত্রী থেকে এবার গোটা ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই মোদীর প্রতি গুজরাটবাসীর ভালবাসা যেমন, প্রত্যাশাও ঠিক তেমনই। গান্ধীনগরের মতো গোছানো নগরী বানানোর পেছনে মোদীর কৃতিত্বের কথা স্বীকার করে নেন অনেকেই। আহমেদাবাদে মুসলিম জনগোষ্ঠীর বাস বেশি। তারাও মোদির ব্যাপারে এক কথায় রাজি, থাকতে পারেন দশ বছর। মোদীর দৃঢ়তায়ই তাদের সবরমতি নদী দুষণমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে, সেকথা মানছেন সবাই।  

আহমেদাবাদ হয়ে মুম্বাইয়ের পথে, সেখানেও মোদিভক্তদের দেখা মেলে। আর মহারাষ্ট্রের এই রাজধানী থেকে কলকাতা পর্যন্ত পুরো পথেই একই কথা বার বার কানে আসে। আলাপচারিতায়ও উঠে আসে মোদির জন্য দশ সালের বরাদ্দকে তারা ভালোভাবেই নিচ্ছেন।

তবে ছত্তিশগড়ের প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পরিচয়ের যাত্রীটি সুনির্দিষ্ট করলেন, যাই হোক না কেনো, ভারতবাসী কাজ বুঝে ভোট দেবে। পাঁচ বছর পরে কি হবে তা এখনই তিনি বলতে নারাজ। তবে এটা বোঝেন মোদী সরকার কাজ ভালো করছে।

বিশেষ করে গত ১৫ আগষ্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ সবার মন কেড়েছে। কথায় কথায় সে ভাষণের প্রসঙ্গ উঠছে। ট্রেনের বগিতে, বার্থে, চাখানায়, হোটেলের আড্ডায় সবখানেই সেই ভাষণের প্রশংসা।

মোদীর ভাষণ দেশবাসীর কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও মনে করেন অনেকে। এই বক্তব্যে প্রায় সকলেই একমত- যখন মোদী দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করুন, আমি ১৩ ঘণ্টা করবো। আর আপনারা যদি ১৪ ঘণ্টা করে করেন আমি ১৫ ঘণ্টা করবো। কারণ আমি আপনাদের প্রধানমন্ত্রী নই প্রধান সেবক।

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে কথার কথা নয়, তার প্রাণের কথা বলেই মনে করেন ভারতবাসী যা তাদের বক্তব্যেই উঠে এসে।

এরই মধ্যে সরকারের ১০০দিন পার করেছে মোদী সরকার। যা নিয়ে টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন একটি রিপোর্টও দিয়েছে। এতে স্পষ্টই বলা হয়েছে কোটি কোটি ভারতবাসীর খাদ্য নিরাপত্তার পথে মোদী সরকার এরই মধ্যে ‍তারা সফলতার পথ দেখাচ্ছে। কিন্তু সরকারের ব্যবসা-বান্ধব নীতি দেশটির পরিবেশ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ইতিবাচক নাও হতে পারে সে আশঙ্কা দেখিয়েছেন সাধারণ মানুষই।

সরকারের শাসন ব্যবস্থা, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে নানান জিজ্ঞাসার মধ্য দিয়ে সরকারের জনপ্রিয়তা ও দক্ষতা যাচাই করা হয়। আর তাতেই মত আসে, খাদ্য নিরাপত্তায় আশান্বিত হওয়ার মতো কত দিকই রয়েছে।

এরই মধ্যে নারীর অধিকার রক্ষায় মোদী সরকারের পদক্ষেপগুলো প্রশংসিত হচ্ছে। বিশেষ করে ১৫ আগস্ট ভাষণে নরেন্দ্র মোদী নারীর মর্যাদা রক্ষায় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে যে নির্দেশনামূলক বক্তব্য তুলে ধরেন তার কথা উচ্চারিত হয়। বিশেষ করে ধর্ষণের শিকার নারীদের জন্য সারা দেশে ৬৬০টি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার স্থাপনের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন তারা।

৮৫ কোটি ভারতবাসীকে খাবারে ভর্তুকি দিতে মোদী সরকারের উদ্যোগ খাদ্য নিরাপত্তায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। আর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ৫০টি প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণের উদ্যোগ ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দৃঢ় করবে সে কথা শোনা গেলো ছত্তিশগড়ের সেই গ্রামীণ স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মুখে।

মোদীর অন্যতম ‍গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে বিনা খরচে ও পূঁজিতে ব্যাংক হিসাব খোলার বিষয়টিও উঠে আসে অনেকের বক্তব্যে। তারা বলেন, এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। যা ভারতবাসীকে সঞ্চয়ী হতে সাহায্য করবে। পরে জানা যায়, প্রথম দিনেই দেড় কোটি ভারতবাসী তাদের প্রথম ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি খোলে।

এসব উদ্যোগ চালিয়ে নিয়ে যেতে এবং এর থেকে সুফল নিশ্চিত করতেই কেউ কেউ মত দেন মোদীকে থাকতে হবে অত্যন্ত ১০ বছর। এ প্রসঙ্গে গুজরাটের উদাহরণও টানেন অনেকেই। এই রাজ্যকে উন্নত করতে বিশেষ করে গান্ধীনগরের মতো নগর তৈরি করতে মোদী সক্ষম হয়েছেন কারণ এখানে তিনি তিন দফায় টানা ১৫ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি করেন মুম্বাই থেকে কলকাতার পথে বিলাসপুরের যাত্রী হয়ে ওঠা তরুণ ব্যবসায়ীটি। তিনি বলেন, সুযোগ পেয়েছেন বলেই ভালো কাজ করতে পেরেছেন সেটা যেমন সত্য তেমনি ভালো কাজ করেছেন বলেই তিন দফায় মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন সেটাও সত্য।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবারও নির্বাচিত হতে হলে যেসব ভালো ভালো কাজের উদ্যোগ নরেন্দ্র মোদী নিয়েছেন সেগুলো সুসম্পন্ন করতে হবে। আর যেসব ভালো ভালো কথা তিনি বলছেন সেগুলোও কাজে পরিণত করতে হবে, বলেন এই তরুণ।

বাংলাদেশ সময় ০৬৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৪

** মাথার ওপর রবীন্দ্রনাথ!
** পরিবর্তনের নতুন যুগে মুম্বাই
** মোদী ভক্ত তারুণ্য   
** ১১ রাজ্যে আলো দেয় গুজরাট
** গুজরাটে গ্রামে গ্রামে উন্নয়ন, ইন্টারনেট
** বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যবন্ধনে এবি ব্যাংকের মুম্বাই শাখা
** সবরমতির তীরে প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত
** নর্মদার পানিতে স্বচ্ছ সবরমতি, মেঘনার পানিতে বুড়িগঙ্গা কবে?
** মোদীর হাতে ‘সবরমতি’র নতুন প্রাণ
** মোদীর গুজরাট উন্নয়নের আইকন ‘গিফটসিটি’
** চকচকে পরিপাটি ‘গান্ধীনগর’
** আহমেদাবাদ থেকে বাংলাদেশ যাচ্ছে ব্লাড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
** ঘুরে আসি আজমীর
** দিল্লি প্রেসক্লাবে সাবসিডি নেই!
** দিল্লির রাতে সস্তা দোকানিরা...

** মাকরানার হোয়াইট মার্বেলেই অনিন্দ্য তাজমহল

** দিল্লির আশীর্বাদ দিল্লি মেট্রো,ঢাকা মেট্রো কবে

** অ্যারাভেলি পর্বতে ঘেরা ভ্রাতৃত্ব

** ৩৬ ঘণ্টার বিচিত্র রূপ!

** ইন্টারনেটে বাংলাদেশ এগিয়ে

** সেই তো আমরাই!
** লাইফলাইন অব ইন্ডিয়া
** দিল্লি কত দূর?
** ভারতীয় ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশের মর্যাদা
** গ্রীনলাইনে ভুগতে ভুগতে কলকাতা
** দিল্লি নয়, মোদী আছেন গুজরাটেই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।